ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তিতে সর জমছে না?

ইমদাদুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তথ্যপ্রযুক্তিতে সর জমছে না?

ইমদাদুল হক: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। চোখে পড়ার মতো কাজও হচ্ছে। তবে দুধ জ্বালাতে জ্বালাতে তাতে যেমন সর জমে, ক্ষীর হয়; তার কিন্তু দেখা মিলছে না দেশের অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য এই খাতটিতে। তাহলে কি ভেজাল হচ্ছে? নাকি অতি জ্বালে উপচে পড়ছে? গলদটা তাহলে কোথায়?

প্রতি বছর তথ্য খাতে বিশেষ অবদান রাখায় উদ্ভাবনী উদ্যোগকে পুরস্কৃত করে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আইটিইউ (ITU)। গত তিন বছর ধরে ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) অ্যাওয়ার্ড নামের এই বৈশ্বিক সম্মান অর্জন করছে বাংলাদেশ। সামনে রয়েছে হ্যাট্রিক চান্স। সেই দৌঁড়ে বরাবরের মতো এবারও ছাড়পত্র পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের পাঁচ প্রকল্প।

প্রকল্পগুলো হলো, বিভিন্ন দপ্তরে কাগজের ব্যবহার ‘কমাতে নথি’ পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশনে এটুআইয়ের সোশ্যাল মিডিয়া, ডিএআইএসওয়াই- ভিজ্যুয়াল ও প্রিন্ট প্রতিবন্ধীদের জন্য হজে পাঠযোগ্য প্রযুক্তি, এটুআইয়ের ’ইমপ্যাথি প্রশিক্ষণ টুলকিট’ স্থানীয়ভাবে বিকশিত পিসি এবং স্মার্টফোনভিত্তিক ডায়গনিস্টিক সরঞ্জাম এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রামীণ বাণিজ্যিক মডেলে টেলিমেডিসিন সেবা।

আশা করা যায়, এ বছরও বিচারকদের পছন্দের পর অনলাইন ভোটের গণ-পছন্দে পুরস্কৃত হতে পারে মনোনীত প্রকল্পগুলোর এক বা একাধিক কোনো উদ্যোগ। তবে এই পুরস্কার ঘরে তুলে তৃপ্ত হবার এখনও তেমন কারণ ঘটেনি। কেননা বর্তমানে দেশের মাত্র ১৮ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যদিও কার্যকরী সংযোগ রয়েছে ৬ কোটি ৭২ লাখ। আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ৫৪ শতাংশ মানুষ।

অর্থাৎ মোট সংযোগের মধ্যে সচল আছে ১৩ কোটি। তারপরও বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ ট্যাক্স এবং ১ শতাংশ সারচার্জ। খরচের ওপর অতিরিক্ত খরচের এই চাপ কোনোভাবেই প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বস্তির নয়। তাহলে কীভাবে এতো বড় একটা জনগোষ্ঠীকে যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবার বাইরে রেখে তুষ্ট হতে পারি আমরা?

মোটেই নয়। ইন্টারনেটকে সবার হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে না পারলে প্রযুক্তির সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত হবো। প্রকট রূপ নেবে ডিজিটাল বৈষম্য। অবশ্য ইন্টারনেট সংযোগ সুলভ করার পাশাপাশি সাইবার আচরণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে কারিগরি সক্ষমতা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। এজন্য অবিলম্বে একটি সাইবার থানা ও বিশেষায়িত পুলিশ বিভাগ গঠন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আবার দেরিতে হলেও হাইটেক পার্ক স্থাপনের পাশাপাশি দেশি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড বাড়াতে হার্ডওয়্যার খাতে প্রণোদনা চালু করছে সরকার। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইস সংযোজনে বিশেষ প্রণোদনা ও শুল্ক রেয়াত এবং সফটওয়্যার পণ্য তথা মেধাভিত্তিক শিল্পের জন্য আলাদা শ্রম আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তৈরি হচ্ছে হাইটেক পার্ক।

সচেতনতা তৈরিতে হর হামেশা প্রদর্শনী, মেলা, সভা, সমাবেশ হচ্ছে। কিন্তু দেশি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটন, সিম্ফনি, রিভ ও উই আলোর মুখ দেখলেও স্বপ্নদেখানো দোয়েল, অ্যাপলম্বটেক, টেকনোনিডস, সিএসএম, ওকাপিয়া, টুইনমস, গ্যাজেট গ্যাং ৭ ইত্যাদি ডজন খানেক ব্র্যান্ড এখনও ধুঁকছে। দেশের গণমাধ্যমগুলো এসব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হলেও শেষতক অনেক উদ্যোগই বুমেরাং হচ্ছে।

এর প্রধান কারণ হিসেবে ব্র্যান্ড আস্থা তৈরির কৌশল যেমনটা মার খাচ্ছে, তেমনি খোদ সরকারি ক্রয় নীতির দুর্বলতাও কম নয়। এরচেয়েও বড় সমস্যা হিসেবে প্রযুক্তি পণ্য তৈরির কাঁচামাল আমদানি শুল্কটাও বড় বাধা। এ কারণে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে এগুলো যেমন দামে মার খাচ্ছে। নীতিগত সুবিধার অভাবে দেশি ব্র্যান্ডের প্রযুক্তি পণ্যগুলো খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানেই ব্যবহৃত হয় না। অন্তত এই বিষয় দুটিতে গুরুত্ব দেয়া না হলে দেশি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা কল্পনার পরীর মতোই ফাঁকি দেবে।

অপরদিকে ফ্রিল্যান্সিং কিংবা ই-কমার্স জোয়ারে পুলকিত হয়ে আমরা যেভাবে উদ্যোক্তা সংস্কৃতিতে অনুকরণ-যাত্রায় পরিণত করছি তা থেকেও বেড়িয়ে আসতে হবে। সমাধানের চেয়ে অভাব খুঁজে বের করার দিকে মনোযোগী হতে হবে। ধারণা চুরি’র শোর তুলে বাতাস গরম করাটা বুদ্ধিমানের হবে না। কেননা উদ্ভাবন ধরে রাখার বিষয় নয়। এটা ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই যেমন-এসএমএস। আর ধারণা চুরি হবেই। এটা নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।

আবার এই যেমন- নিজের ধারণাটি লিখে আপনি নিজের নামেই পোস্ট করতে পারেন। আর এই পোস্টটি না খুলে সংরক্ষণ করুন। পরে কেউ যদি এটা চুরি করে তখন এটি আইনি কাজে লাগবে। এছাড়াও উদ্যোক্ত হতে হলে নিজেকেই গড়ে তুলতে হবে একটি স্ট্রং নেটওয়ার্ক।

ভুলে গেলে চলবে না- নতুনত্ব ও উদ্ভাবনে চিন্তা ও প্রয়োগের অনন্যতাই এখানে মূখ্য। উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে হলে চাপাও থাকতে হবে, খোপাও থাকতে হবে। সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার মতো জনসংযোগ জ্ঞান না থাকলে ভালো উদ্যোগও নিরামিষ মনে হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৭/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়