ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৩ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

সমাজে গণমাধ্যমের ভূমিকা আয়নাস্বরূপ। যে আয়নায় ফুটে ওঠে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক রাষ্ট্রীয় চালচিত্র। সুতরাং এই আয়না যত স্বচ্ছ হবে চিত্র ঠিক ততটাই দৃষ্টিগোচর হবে। সেই আয়না সামনে রেখে পাঠক পাঠ করবেন প্রকৃত দেশচিত্র। আর এখানেই ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় থেকে যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা।

কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে ১৯৯৩ সাল থেকে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ প্রতি বছর ৩ মে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ক্রান্তিকালে সমালোচকের দৃষ্টি: শান্তিপূর্ণ, ন্যায়নিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’

বলা হয়ে থাকে, যে কোনো দেশের উন্নত সড়ক ব্যবস্থার সঙ্গে সেই দেশের অর্থনীতি জড়িত। ঠিক একইভাবে যে কোনো দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও সেই দেশের গণমাধ্যম জড়িত। মোদ্দাকথা গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। গণমাধ্যম যত বেশি শক্তিশালী হবে গণতন্ত্রও সে অনুপাতে শক্তিশালী এবং টেকসই হবে। এখন প্রশ্ন হলো, শক্তিশালী গণমাধ্যমের উপায় কী? এক কথায় এর উত্তর- মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ভিন্নমত সহিষ্ণুতাই গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার, সে কথা ভুলে না গিয়ে ভিন্ন মতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একইসঙ্গে সেই ভিন্নমত কতটা ন্যায়সঙ্গত এবং যুক্তিনিষ্ঠ, ধর্তব্যে নিতে হবে সে কথাটিও। ভিন্ন মত যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষতির কারণ হয় তবে অবশ্যই তা পরিত্যাজ্য। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে। ভিন্নমত যদি আমাদের উন্নতির সেই লক্ষ্য পূরণে উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তাহলে গভীরভাবে ভাবতে হবে বৈকি। এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের আরো সজাগ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

পৃথিবীর সব রাষ্ট্র ও সমাজে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে-  আজকের দিনে সংবাদকর্মী হিসেবে এটুকু প্রত্যাশা করতেই পারি। আরো প্রত্যাশা করি, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা। কেননা ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি অত্যন্ত গৌরবময় এবং পরম আরাধ্য একটি শব্দ। শব্দটির সম্মান আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার মানে একটি গল্পের মাধ্যমে আমরা স্মরণ করতে পারি। গল্পটি নিন্মরূপ:
একদিন এইচ জি ওয়েলস-এর সঙ্গে নোবেলজয়ী আইরিশ লেখক জর্জ বার্নার্ড শ পাশাপাশি হাঁটছিলেন। ওয়েলস হাতের লাঠিটা এমনভাবে ঘোরাচ্ছিলেন যে, শ-এর নাকে লাগার উপক্রম। ওয়েলসকে সতর্ক করে শ বললেন, তোমার লাঠি ঘোরানো বন্ধ করো। যে কোনো সময় আমার নাকে লাগতে পারে।

ওয়েলস বললেন, রাস্তায় লাঠি ঘুরিয়ে হাঁটা আমার নাগরিক অধিকার এবং স্বাধীনতা। তুমি সেই স্বাধীনতা খর্ব করতে পারো না। শ বললেন, জানি। তবে এ কথা জেনে রাখো, আমার নাকের ডগা যেখানে শেষ তোমার নাগরিক অধিকার এবং স্বাধীনতা সেখান থেকেই শুরু।

আমাদের ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির মর্ম উপলব্ধি করতে হবে। অনেক অভিজ্ঞ এবং বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে কাজের সুযোগ আমার হয়েছে। তাদের কাছে শিখেছিও অনেক, এখনও শিখছি। তাদেরই একজন কথাপ্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন, সংবাদ করার আগে সেটি রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী কিনা গভীরভাবে ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয় এমন সংবাদ প্রকাশ করা উচিত না। সবশেষে হাসি মুখে কাঁধে হাত রেখে তিনি বলেছিলেন, ‘শোনো, অসির চেয়ে মসি বড়। অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা সংবাদ লিখে মসির মান নষ্ট করা গুরুতর অপরাধ।’

সাংবাদিকতা সব সময়ই নৈতিক মানদণ্ডের বিচারে বিবেচ্য। এখানে অনৈতিকতার সুযোগ নেই। নীতি মেনে ও পেশার প্রতি সৎ থেকে, দায়িত্ব নিয়ে সত্য উদঘাটনে যারা সাংবাদিকতা করছেন তারা নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের আশঙ্কা থেকে মুক্ত নন। অনেক ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ করতে হচ্ছে। যা কাম্য নয়।

সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অবহিতকরণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। দেশের গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে যতটা স্বাধীনভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারবে রাষ্ট্র এসডিজি অর্জনে তত দ্রুত সফল হবে। এই সহজসত্য রাষ্ট্রকেই সবার আগে উপলব্ধি করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মে ২০১৭/তারা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়