ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইটি বাজেট ভাবনা

গাজী আলিম আল রাজী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইটি বাজেট ভাবনা

গাজী আলিম আল রাজী :  ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে ধারণা পাওয়া গেছে, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের এই আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। বাজেট বেড়ে যাওয়া মানে রাজস্ব আহরণের হার বা ক্ষেত্র বেড়ে যাওয়া। উন্নয়নে বড় বাজেটের বিকল্প নেই। তাই আমাদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো। রাজস্ব আহরণ করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে সুরক্ষিত রেখেই।

প্রাক বাজেট আলোচনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাতের ধারণা দিয়েছেন অনেকেই। সেই গুরুত্বপূর্ণ খাতের মধ্যে আইটি খাতের স্থান হয়নি এখনও। বর্তমান সরকারের ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ এর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আমরা। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বিগত বাজেটে গুরুত্ব দিয়েছিল সরকার। খাতটির জন্য বরাদ্দ থেকেই তা প্রমাণ হয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানামুখী সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির জন্য বাড়ি বা অফিস স্পেস ভাড়ার ওপর প্রদেয় ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেটে আইসিটি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আশার বাণী শোনা গেলেও তা সরকারি প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং সেই প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখলেই সেই বরাদ্দ থেকে প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন দৃষ্টিগোচর হতে পারত।

ভোক্তা পর্যায়ে ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রত্যাহার না করা, সেলফোন আমদানিতে ১৫ শতাংশ আমদানি-শুল্ক আরোপ,  এই খাতে পণ্যগুলোর সুষম শ্রেণিবিন্যাস না করে বাজেটে আইসিটি পণ্যের ওপর উচ্চহারে আমদানি-শুল্ক ও ভ্যাট বজায় রয়েছে।

আসলে বাজেটে আইসিটি খাতকে পূর্ণ অবয়বে আনতে না পারলে তা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতি রাখতে ব্যর্থ হবে। তাই আইসিটি খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য বাস্তবভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ এবং তা সময়মতো বাস্তবায়ন করা উচিত। শুধু সফটওয়্যার বা আইটিইএস-কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের একমাত্র উন্নয়ন খাত হিসেবে গণ্য করলে তা এই খাতের সক্ষমতাকে খাটো করে দেখা হবে। এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত শ্রেণি বৈষম্যের শিকার হবে। এই ডিজিটাল বৈষম্য বিশ্ববাজারের সাথে প্রতিযোগিতায় তাল মেলানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

আইসিটি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। বেসিস নেতাদের দাবি অনুযায়ী আইটি খাতে ৪০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা রাখতে হবে। চিংড়ি বা কাঁকড়া রফতানিতে যদি নগদ প্রণোদনা থাকতে পারে তবে ৫ বিলিয়ন ডলার সফটওয়্যার রফতানি বাজারে নগদ প্রণোদনা কেন নয়? লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফটওয়্যার ও আইটি সেবা খাতের কোম্পানিগুলোকে রফতানিতে উৎসাহিত করা ও এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রফতানিতে নগদ অর্থ প্রণোদনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ভ্যাট আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে সব পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ভ্যাট মওকুফ দরকার। সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে এনটিটিএনের পক্ষ থেকে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য করতে হবে।

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল টেলিযোগাযোগ বাজারগুলোর একটি হওয়ার পরও শিল্পবান্ধব কর-নীতির অভাবে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া পৃথিবীতে সবচেয়ে কম দামে মোবাইল টেলিযোগাযোগের সুযোগ দানকারী এ খাতটির ওপর উচ্চহারে করারোপ অগ্রগতিকে ব্যাহত করবে। মোবাইল ফোন অপারেটরেরা তাদের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের ৫৫ টাকাই সরকারকে দেয়। মোবাইল অপারেটরগুলোর ওপর উচ্চহারে চাপিয়ে দেয়া করের কারণে গ্রাহকসেবা ও তৃণমূল পর্যায়ের গ্রাহকদের ওপর এর প্রভা্ব পড়ছে। লোকসানে আছে অধিকাংশ মোবাইল অপারেটর, একীভূত হয়েছে এয়ারটেল ও রবি। আর সিটিসেল তো একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। আসছে ফোর-জি অপারেশন। লোকসানে থাকা, মুখ থুবড়ে পড়া কোম্পানিগুলো যেন ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে সে লক্ষ্যে টেলিকম খাতে আরও একটু সহনশীল হতে হবে রাজস্ব আদায়ে। আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট এবং স্থানীয় হ্যান্ডসেটের ওপর কর কমিয়ে দেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনাময় শিল্প হতে পারে হার্ডওয়্যার শিল্প। কেননা, যে কোনো হার্ডওয়্যার শিল্পে অনেক জনবল প্রয়োজন হয়। তাই হার্ডওয়্যার উৎপাদন শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে দেশেই মোবাইল আইওটি ডিভাইস ও ল্যাপটপ উৎপাদন করা জরুরি।

এসব উপকরণ স্বল্প দামে দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে মোবাইল ফোন, আইওটি ডিভাইস ও দেশীয় ল্যাপটপ উৎপাদনে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। প্রযুক্তিনির্ভর দেশীয় শিল্পের বিকাশে রপ্তানির পাশাপাশি দেশীয় মার্কেটে পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে হাইটেক পার্কের সুবিধা বহাল রাখতে হবে। একই সঙ্গে ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং বা অনলাইনে কেনাকাটার ওপর থেকে ভ্যাটমুক্তসহ ই-ডেলিভারির আমদানি শুল্ক পরিশোধের প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে।

বাজেটে সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা চাহিদা পূরণ হয় না, নানা কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। তার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে তা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে।

প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নের মধ্যে ফাঁরাক ঘুচিয়ে লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যেতে হবে, মনে রাখতে হবে ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ নাকের ডগায় কড়া নাড়ছে। তাই সঠিক আইটি বাজেট প্রণয়য়ের মাধ্যমে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। আর মোস্তফা জব্বার স্যারদের ‘১ টাকায় ১ জিবি ইন্টারনেট’ এর মতো আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তবেই ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন হবে এবং আমরা হব মধ্যম আয়ের দেশের বাসিন্দা।

লেখক : আইটি কর্মী।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৭/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়