ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খালেদার জামিন বাতিল হবে কি না, সিদ্ধান্ত ৭ আগস্ট

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৩ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালেদার জামিন বাতিল হবে কি না, সিদ্ধান্ত ৭ আগস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির জামিন বাতিল হবে কি না, সে সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ৭ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান এ তারিখ ধার্য করেন।

বৃহস্পতিবার মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ শুনানি এবং অপর দুই আসামি প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য ছিল।

সকাল ১১টা ১০ মিনিটে মামলার কার্যক্রমের শুরুতে খালেদা জিয়ার পক্ষে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। তারা বলেন, মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে পুনরায় ১১ সাক্ষীকে জেরা করার আবেদন গত ২৭ জুলাই নামঞ্জুর করা হয়। আমরা ওই নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। কিন্তু সেই নামঞ্জুরের সার্টিফায়েড কপি আমরা পাইনি। এজন্য আমরা উচ্চ আদালতে যেতে পারিনি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আপনি (বিচারক) মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখেন।

এ সময় বিচারক বলেন, আমরা একটু অসুবিধার কারণে কপিটি দিতে পারিনি। এখন আপনারা পেয়ে যাবেন। কিন্তু মামলার কার্যক্রম চলতে থাকুক।

এরপরও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেন।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জামিনের অপব্যবহার করে বিদেশে গেছেন। তিনি আদালতে হাজির হননি।

এজন্য জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মোশাররফ হোসেন কাজল।

খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি এবং অপর দুই আসামির জামিন বাতিল ও তাদের সাফাই সাক্ষ্য শেষ করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করার আবেদনও করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ আবেদন করা হয়।

আসামি সরফুদ্দিন আহমেদের আত্মপক্ষ শুনানির জন্য পুনরায় আবেদন করেন তার আইনজীবী রেজাউল করিম সরকার। একই সঙ্গে তিনি সাফাই সাক্ষ্যের জন্য সময়ের আবেদন করেন। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষেও সময়ের আবেদন করা হয়।

আদালত বেলা ১টার দিকে তাদের উভয়ের আবেদন নামঞ্জুর করে আধা ঘণ্টার মধ্যে সাফাই সাক্ষ্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন।

বেলা দেড়টায় মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। আদালতকে অসহযোগিতা করায় তাদের জামিন কেন বাতিল হবে না, তা জানতে কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে তার আইনজীবী মিজানুর রহমান এবং সরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে রেজাউল করিম সরকারকে আধা ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন কেন বাতিল হবে না, এর কারণ দর্শানোর জন্য তার আইনজীবীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বেলা ২টায় খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন কারণ দর্শান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ৭২ বছরের বয়স্ক মানুষ। তার হাত ও পায়ে ব্যথা। এজন্য চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে গেছেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চলে আসবেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আদালতে হাজির হবেন। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখে খালেদা জিয়ার জামিন অব্যাহত রাখার আবেদন করেন তিনি।

কাজী সালিমুল হকের পক্ষে মিজানুর রহমান বলেন, গত ২৭ জুলাই সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমন জারির কথা বলা হয়েছে। প্রসিকিউশনের কাছে সমনের কাগজ দেওয়া হয়েছে। তারা সেটা জারি করেছে কি না তা জানা নেই। সাক্ষী না আসলে সাফাই সাক্ষী থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন বলে জানান।

সরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে রেজাউল করিম সরকার বলেন, আদালত যে আদেশ দেবেন, আমরা তা পালন করব। একই সঙ্গে কারণ দর্শানো থেকে অব্যাহতি চান তিনি।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, সরফুদ্দিন আহমেদ জামিনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও আদালতকে সহায়তা করছেন না। আর খালেদা জিয়া সেপ্টেম্বরের পরে আসবেন। ততদিন অপেক্ষা করতে হবে। আইনের চোখে সবাই সমান। এভাবে চললে আর আত্মপক্ষ শুনানি শেষ করা যাবে না। এজন্য আদালতে উপস্থিত দুই আসামির জামিন বাতিল করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আত্মপক্ষ শুনানি শেষ করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্যের জন্য বলেন তিনি।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আগামী ৭ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ তিনজনের জামিন বাতিলের আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

গত ২০ জুলাইও খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়।

একই আদালতে বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখও ৭ আগস্ট ধার্য করেছেন আদালত।

এদিন আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আব্দুর রেজ্জাক খান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, হান্নান ভূঁইয়া, হেলাল উদ্দিন, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, নুরুজ্জামান তপন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

এ মামলার আসামি বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।

২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী সরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ আগস্ট ২০১৭/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়