ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্বাতন্ত্র্যের স্বার্থে ‌‘মুজিব কোট পরিধান বিধি’ জরুরি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১৪ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাতন্ত্র্যের স্বার্থে ‌‘মুজিব কোট পরিধান বিধি’ জরুরি

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন মুজিব কোট গায়ে

হাসান মাহামুদ : গত কয়েক বছর ধরে সারাবিশ্বেই বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলে ঈদ, পূজা কিংবা জাতীয় উৎসবগুলোতে নতুন নতুন ডিজাইন, ব্র্যান্ড, নতুন ফ্যাশন চালুর একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে বিশেষ উপলক্ষ্যগুলোতে যেসব ডিজাইন আসে তার সিংহভাগই কলকাতা, ভারতের অনুকরণে হয়। অধিকাংশ পোশাকের নাম দেওয়া হচ্ছে স্টার প্লাস ও জি বাংলা চ্যানেলে প্রচারিত সিরিয়ালের নায়িকাদের নামে, কিছু ভারত, তামিল সিনেমার নামে। কিন্তু ২০১৫ সালে কলকাতায় পূজা উপলক্ষ্যে যে পোশাকটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও বিক্রিত ছিল, সেটি ছিল বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক পোশাকের আদলে নির্মিত। ‘মুজিব কোট’।

সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক যে ডিজাইনে মুজিব কোট পড়তেন, সব অক্ষত রেখেই শারদ উৎসবে পোশাকটি তৈরি করেছিল কলকাতার ফ্যাশন হাউজগুলো। সাথে ভারতের জওহরলাল নেহরু ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কোটও ছিল। আমরা হয়তো অনেকেই জানি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ফ্যাশন এখন দেশটির আমজনতার ফ্যাশন হয়ে উঠছে। মোদীর সেই কোটও কিন্তু মুজিব কোটের আদলে তৈরি করা। হয়তো তাই, ২০১৫ সালে কলকাতার শারদ ফ্যাশনে সবচেয়ে নজরকাড়া ও কাটতিতে ছিল আমাদের জাতির গর্ব বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিব কোট’।

আরো একটি ক্ষেত্রে মুজিব কোট বিশ্বে অনন্য এবং অন্যতম একটি মর্যাদায় আসীন। তা হলো- প্রথমদিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাকে যারা ভালোবাসতেন তারাই এই ‘মুজিব কোট’ ব্যবহার করতেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করেছেন এবং এখনো করছেন তারা এই কোট ব্যবহার করছেন। সবকিছু ছাপিয়ে মুজিব কোট এখন ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রতীক’। এমনকি বিষয়টি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অত্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত। যেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ এই রাজনৈতিক দলটির অলিখিত ‘পার্টি ড্রেস’ বা ‘দলীয় পোশাক’ এটি। এই ধরনের ‘অলিখিত দলীয় পোশাক’ বিশ্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরল।

আমরা এমনও দেখেছি, আওয়ামী লীগের অনুসারী, রাজনীতিক অনেকেই আছেন, যারা কখনোই মুজিব কোট ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এমনকি বঙ্গবন্ধুর আমলে সবচেয়ে কম বয়সী যিনি সংসদ সদস্য ছিলেন, টাঙ্গাইলের সেই রাজনীতিক মৃত্যু পর্যন্ত মুজিব কোট পড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলটির উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাকেই মুজিব কোট বিকৃত করে পরিধান করতে দেখা যায়। এটি হয়তো অজ্ঞতা কিংবা ইচ্ছাকৃত। সে যাই হোক, এটা মুজিব কোটের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের সামিল।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এখন লাল, নীল, হ্লুদ, সোনালি ইত্যদি রঙের এবং বিদেশী দামী কাপড় দিয়ে তৈরি মুজিব কোট পরিধান করে সভা মঞ্চে ভাষণ দেন। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সভা-সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি থেকে দুটো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এক, হয়তো তারা মুজিব কোটের মহাত্ব সম্পর্কে বা বঙ্গবন্ধু কেন এই বিশেষ কোট পরতেন তা জানেন না। কিংবা দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণ করতে গিয়ে শিকড়কে ভুলে গেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে এই বিশেষ কোট পরা শুরু করেছিলেন এবং সারা জীবনে অসংখ্য কোট পড়েছেন। কিন্তু সবক’টি কোটের তৈরির বৈশিষ্ট্য ঠিক একই ছিল।

মুজিব কোট শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পছন্দের পোষাক ছিল না, এর নির্মাণ শৈলিতে প্রতিফলিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চেতনা ও আদর্শ। মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি আন্দোলন ও বিদেশি পণ্য বর্জন থেকে যেমন দেশি সুতায় বোনা মোটা কাপড় খাদির আবির্ভাব ঘটেছিল। তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশি চেতনা, দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা। মোট কথা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ মুজিব কোটে প্রতিফলিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু এই বিশেষ কোট কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে পরতেন না। প্রথম দিকে সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা পরতেন। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই মুজিব কোট পরতেন। সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মুজিব কোট ছিল বঙ্গবন্ধুর ড্রেস কোড। পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মুজিব কোট ছাড়াও মোটা ফ্রেমের চশমা, চুরুটের পাইপও বঙ্গবন্ধুর আইকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী আওয়ামী নেতারা বঙ্গবন্ধু আদর্শের প্রতি গভীর অনুগত্যের প্রকাশ হিসবে ব্যাপকভাবে মুজিব কোট পরিধান করতে শুরু করেন। কালক্রমে এই কোট মুজিব কোট নামে খ্যাতি লাভ করে।

হাতাবিহীন, হাইনেক, নিচে দুটি পকেট, কালো রঙের কোট– সংক্ষপে এটাই মুজিব কোট। এই কোট পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সাক্ষাত করেছেন, সর্বোপরি নিজেকে বাঙালির ফ্যাশন আইকন হিসেবে বিশ্বের দরবারে হাজির করেছেন।

মুজিব কোট কি এবং কেন বঙ্গবন্ধু এটা পরিধান করতেন? এই প্রশ্নের উত্তর মুজিব কোট পরিধানকারী অনেকেই সঠিকভাবে হয়তো জানেন না। যদি সত্যিকার অর্থেই জানতেন তা’হলে মুজিব কোটের মূল বৈশিষ্ট্যকে বিকৃত করে অমর্যাদা করতেন না।

যেহেতু এই কোট বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতীক ছিল তাই এটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। প্রথমত, এর রং ছিল কালো। বঙ্গবন্ধু কালো ব্যতীত অন্য রঙের মুজিব কোট পড়েননি। আপামর জনসাধারনের সুখ-দু:খের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভুতি ও একাত্মতা প্রকাশ করতেই তিনি কালো রঙের কোট পরতেন।

দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর কোট বানানো হতো সম্পূর্ণ দেশে তৈরি কাপড়ে। বিশেষ করে তাতে বোনা মোটা সুতার কাপড় দিয়ে। এর মাধ্যমে দেশীয় শিল্প ও পণ্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করতেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশি আন্দোলন ও বিদেশি পণ্য বর্জন থেকে যেমন দেশি সুতায় বোনা (চরকায় কাটা সুতা দিয়ে তৈরি) মোটা কাপড় খাদির আবির্ভাব ঘটল। তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশি চেতনা, দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা থেকে পড়তেন সেই পোশাক। সোজা কথায় দেশপ্রেম মোড়ানো মুজিব কোটের আবির্ভাব ঘটে বাংলাদেশে।

তৃতীয়ত, প্রতিটি কোটের বোতাম ছিল ৬টি। যা ছিল ৬ দফা আন্দোলনের প্রতিকি প্রকাশ। কোটের প্রতিটি বোতাম মানে বঙ্গবন্ধুর একেকটি দফা।

বিশ্ব বরেণ্য নেতাদের অনুসারীরা অনুগত্যের প্রতীক হিসেবে নেতার পরিধেয় ডিজাইনের পোশাক পরেন- এ সংস্কৃতি প্রত্যেক দেশেই কম বেশী প্রচলিত আছে। জওহরলাল নেহরুর ক্যাপ, লম্বা কোট ও বুক পকেটে গোলাপফুল, মহাত্মা গান্ধীর খাদি কাপড়ের ধূতি ও চাদর, চে গুয়েভারার মিলিটারি কোট ও ক্যাপের স্টাইল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাদৃত। যদিও পোশাক পরিধানই আনুগত্য প্রকাশের একমাত্র প্রকাশক, নির্ণায়ক কিংবা নিশ্চায়ক নয়। প্রকৃত আনুগত্য আসে মন থেকেই। কিন্তু প্রশ্নের উদয় হয়, যখন তা একটি দেশের ইতিহাসকে বহন করে, একটি দেশের স্থপতিকে প্রকাশ করে, তখন।

যুগে যুগে অনুকরণের সংস্কৃতি আমরা দেখে এসেছি। ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফরোয়ার্ড রোলান্ডো যখন বিশ্বকাপে অর্ধেক মাথা ন্যাড়া করে খেলতে নেমেছিল, তখন পৃথিবী জুড়ে তার ভক্তরা অর্ধেক মাথা ন্যাড়া করেই তাকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু ফ্যাশন আইকন রবিনহুডকে যারা অনুকরণ করেন, তারা একই স্টাইলে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি রেখেছেন। চে গুয়েভারার ক্যাপ এখনো একই নির্মাণ শৈলীতে পড়ছেন দেশে দেশে সমর্থকরা। তেমনি বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শের জনক, স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালির জাতির পিতা। তার অনুসরণে মুজিব কোট পড়তে গেলেও তার নির্মাণ বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখা উচিত। কারণ, এর সঙ্গে শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় পোশাকের অনুসঙ্গ জড়িত নয়, এর সঙ্গে জড়িত বঙ্গবন্ধুর আদর্শও।

প্রকৃত মুজিব কোটের নির্মাণ বৈশিষ্ট্য বদলে তৈরি কোট পড়া হবে লোক দেখানো, হুজুগে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আঘাত করা, মুজিব কোটকে বিকৃত করা। মুজিব কোটের মতো দেখতে কোট সর্বস্তরের জনগণ পড়তে পারে সাধারণ পোশাকের মতো, এটি অবশ্যই যোক্তিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা কর্মী যদি মুজিব কোটের আদলে নির্মিত অন্য রঙের, ভিন্ন ডিজাইনের হাতাকাটা কোট পড়েন, তা অবশ্যই দৃষ্টিকটু এবং বিকৃতিকরণ হবে।

কেউ যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে মুজিব কোট পরেন, তাহলে মুজিব কোটের বৈশিষ্ট্য বাজায় রেখেই পরতে হবে – কালো রং, ৬ বোতাম, দেশীয় সুতা বা কাপড় দ্বারা তৈরী।

আমাদের দেশে অনলাইন ব্যবহার বিধিমালা হচ্ছে, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা’ হয়েছে, ফরমালিন (আমদানি, উৎপাদন, পরিবহণ, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার) নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা হয়েছে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকাও রয়েছে। তাহলে মুজিব কোটের বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে এর জন্য ‘পরিধান বিধি’ প্রণয়ন কেন করা যাবে না?

দেশে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকাল বাড়ছে, রাজনীতির আওতা বাড়ছে, সাথে পাল্লা দিয়ে দিনে দিনে মুজিব কোটের আদলে নানা রঙের কোট পরিধানকারী নেতাকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। এই বিকৃতি এখনই বন্ধ করতে হবে। এজন্য আইন বা বিধি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী।

তা না হলে এই বাহারী রঙের প্রভাবে একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মোড়ানো কালো রঙের মুজিব কোট। প্রচলিত হয়ে যেতে পারে ‘বৈশিষ্ট্য বিকৃত মুজিব কোট’।

১৫ আগস্ট সারাদেশে জাতীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলটির সব অঙ্গ সংগঠন দিবসটি পালন করবে। অন্তত, এই শোক দিবসে মুজিব কোটের বিকৃতি যেন চোখে না পড়ে।

একমাত্র আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাই পারেন মুজিব কোটকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে। এ জন্য দলীয়ভাবে নির্দেশিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে। পাশাপাশি স্থায়ী সমস্যার সমাধান হিসেবে দলের গঠনতন্ত্রে ‘মুজিব কোট’-এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে এবং ব্যবহার করার জন্য নেতৃত্বের স্তর নির্ধারণ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধি নিষেধ সংযুক্ত করা যেতে পারে। সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধুর পোশাকের অক্ষুন্নতা রক্ষার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। প্রণীত হতে পারে ‘মুজিব কোট পরিধান বিধি’।

কেননা, এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় আবেগ জড়িত, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ জড়িত, স্বাতন্ত্র রক্ষার স্বার্থ জড়িত।

লেখক: সাংবাদিক।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ আগস্ট ২০১৭/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ