ইমন কথা দিয়েছিল শাবনূরের সঙ্গে সিনেমা করবে না
১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ধূমকেতুর মতো সালমান শাহ’র আবির্ভাব। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেই সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। যে রহস্যের জট আজো খোলেনি। সালমান শাহ’র পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্দেহের আঙুল ওঠে স্ত্রী সামিরার দিকে। ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সালমান শাহ’র সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন সামিরা। প্রেমের বিয়ে পায় সফল পরিণতি। কিন্তু খুব দ্রুতই পরিণয় রূপ নেয় গভীর শোকে। এতগুলো বছর পর এই প্রথম সামিরা বলেছেন সালমান শাহ’র সঙ্গে তার প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্যজীবন এবং স্বামীর মৃত্যুপরবর্তী দুঃসহ সেইসব দিনগুলোর কথা। রাহাত সাইফুলের অনুলিখনে সামিরার বয়ানে পড়ুন এই ধারাবাহিকের তৃতীয় কিস্তি।
শাবনূরের সঙ্গে ইমন (সালমান শাহ) অনেকগুলো সিনেমায় কাজ করেছে। তখন শাবনূরকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়গুলো আমি মেনে নিতে পারিনি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে আমি রাগ করে চট্টগ্রাম বাবার বাসায় চলে যাই। সেখাতে আড়াই মাস থাকার পর ইমন আমাকে আনতে যায়। তখন ইমনকে আমি বলেছিলাম, শাবনূরের সঙ্গে সিনেমা করলে আমি তোমার সঙ্গে যাব না। তোমার সঙ্গে থাকব না। হয় তুমি আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দাও, না হলে আমি তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে দেই।
তখন ইমন আমাকে বলেছিল, না, আমি তোমাকে ছাড়া থাকব না। তুমি আমার সঙ্গে চলো। আমি শাবনূরের সঙ্গে আর কোনো সিনেমা করব না। যেসব সিনেমার টাকা নিয়েছি সেগুলোর কাজ শেষ করে আর নতুন কোনো সিনেমায় শাবনূরকে নিয়ে কাজ করব না। এ সিনেমাগুলোর শুটিংয়ের সময় তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।
ইমন যখনে এভাবে বলল তখন আর আমি রাগ করে থাকতে পারিনি। আমি ইমনের সঙ্গে ঢাকা চলে আসি।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার দুদিন পরে ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে ইমনের সঙ্গে এফডিসিতে ডাবিং দেখতে যাই। ইমন তখন রেজা হাসমতের ‘প্রেম পিয়াসী’ সিনেমার ডাবিং করছিল। এই সিনেমায় ইমনের বিপরীতে ছিল শাবনূর। ডাবিংয়ের মধ্যেই শাবনূর বার বার ইমনের সঙ্গে কানে কানে কথা বলার চেষ্টা করছিল। সে ইমনকে চুমু খাচ্ছিল, জড়িয়ে ধরছিল। এগুলো দেখে আমার ভালো লাগেনি। বিষয়টি আমি আব্বাকে (সালমান শাহর বাবা) প্রথমে জানাই। আব্বার সঙ্গে আমি খুব ফ্রি ছিলাম। আমি তাকে বললাম, আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকব না।
ইমন যখন দেখল আমি আর আব্বা উঠে গেলাম, তখন সে বুঝতে পেরেছিল আমি রাগ করেছি। সে আমাদের পেছন পেছন আসছিল আর বলছিল, কী হয়েছে? কী হয়েছে? আমি অন্য কিছু না বলে ‘বাসায় যাব’ বলে গাড়িতে উঠে বসলাম। ইমন তখন রেজা ভাইকে বলল, আমার শরীর খারাপ লাগছে। ডাবিং প্যাকআপ করেন। তখন ডাবিং প্যাকআপ হয়ে গেল। ইমন শাবনূরের কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই আমাদের সঙ্গে দ্রুত গাড়িতে উঠল। আমি কোনো কারণে ভীষণ রেগে গিয়েছি বুঝতে পেরে ইমন পরিচালক বাদল ভাইকেও সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠল। গাড়িতে আমি বাঁ দিকে বসে জালানা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। ইমন বার বার বলছিল, বাদল ভাই আমার বউটা রাগ করে ফেলল! বাদল ভাই সান্ত্বনা দিচ্ছিল, আরে না ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্মী ভাবী।’
ইমন আমাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল। বাসায় এসে ইমন বলল, খাবার দাও। আমি দিলাম। কিন্তু আমি খাচ্ছিলাম না। ইমন রাতে আমার হাতে খেত। সে খুব আহ্লাদি ছিল। বাদল ভাই তখন বলল, আমি কি একা খাব? তোমরা কেউ খাচ্ছ না! ইমন বলল, আমার বউ তো আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে না। আমি কীভাবে খাব? বাদল ভাই তাকে আবার সান্ত্বনা দিয়ে বলল, আজ ভাবীর মনটা ভালো নেই, তাই হয়ত খাইয়ে দিচ্ছে না। ইমন বলল, না, আমি আর তাহলে খাবোই না। যেহেতু খাবে না তাই বাধ্য হয়ে আমি প্লেটটা হাতে তুলে নিলাম। তারপর একবার ওকে খাওয়াতে লাগলাম আর নিজেও খেতে শুরু করলাম। এভাবেই সেদিন আমরা রাতের খাবার শেষ করি।
প্রথমে আমরা বেড রুমে বসেছিলাম। ইমনের ঘারে ব্যথা ছিল তাই শুয়ে শুয়ে কথা বলছিল। আর বাদল ভাই চেয়ারে বসে ছিলেন। সে সময় পপির সঙ্গে যে কাজটা হবে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। বাদল ভাই যাওয়ার সময় একটা কথা আমাকে বলে গিয়েছিল- ভাবী, এ নিয়ে আর কিছু বলবেন না। ইমন শাবনূরের সঙ্গে আর ছবিই করবে না।
এরপর আমরা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। এর মধ্যে ইমনের মোবাইল ফোন বেজে উঠল। ফোনটা কেটে দিল ইমন। আবার সেকেন্ড টাইম ফোন এলো। তখন লাফ দিয়ে উঠে সে ফোন নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আমি তখন ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনেছিলাম। মেয়েটা বলছিল- এভাবে কেন আমাকে না বলে চলে গেলে? ইমন বিষয়টি নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছিল। আমি রুমে বসেও তখন শুনতে পাচ্ছিলাম।
বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছিল। দুদিন হলো বাবার বাসা থেকে এসেছি। এর মধ্যেই আবার এভাবে ফোন! ডাবিংয়ে গেলাম সেখানেও নিজের চোখে দেখলাম, শাবনূর এক ফোটাও চেঞ্জ হয়নি। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আমি একদম এগারো তলা থেকে সোজা নিচে চলে এলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, আর না। বনানী ফুফুর বাসায় চলে যাব। দারোয়ানকে বললাম, ট্যাক্সি ডেকে দিতে। এর মধ্যে ইমন বাথরুম থেকে বের হয়ে রুমে আমায় না দেখে নিচে চলে এসেছে। সে তখন চিৎকার করে বলতে থাকে- তোমরা যদি তোমার ভাবীকে ট্যাক্সি ডেকে দাও তাহলে গুলি করে উড়িয়ে দেব। ফলে ওরা ট্যাক্সি ডেকে দিলো না। আমিও আর পা বাড়ালাম না। আমি উপরে উঠে এলাম। ইমন রাতেই মোবাইলটা ভেঙে ফেলল।
পড়ুন প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি:
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রাহাত/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন