ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘রোহিঙ্গাদের কুতুপালংয়ে রাখা হবে’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৫ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রোহিঙ্গাদের কুতুপালংয়ে রাখা হবে’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : সম্প্রতি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাকে একসঙ্গে কক্সাবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রানমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

তিনি বলেন, ‘২৫ আগস্ট থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখের অধিক। এসব রোহিঙ্গাদের সবাইকে একসঙ্গে কুতুপালং এলাকায় ক্যাম্পগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, খাদ্য সরবরাহ, স্যানিটেশন, রেজিস্ট্রেশন ও চিকিৎসা দেওয়াসহ সব কাজ যাতে একত্রে সুচারুভাবে করা যায় সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

ত্রানমন্ত্রী বলেন, ‘কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসবাসের জন্য ৩ হাজার একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই জায়গায় করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে যে সব ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা থাকছেন ক্রমান্বয়ে তা গুটিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পের বাইরে পাহাড়ি এলাকায় ও অন্যান্য স্থানে যে সব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর বান্দরবানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেরও ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে।’

মায়া বলেন, ‘কুতুপালং এলাকায় ২০টি ব্লকে ভাগ করে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য ক্যাম্প করা হয়েছে। প্রত্যেক ব্লকের জন্য একটি প্রশাসনিক ও পরিসেবা ইউনিট এবং একটি গোডাউন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে সব ধরনের সেবা দেওয়া সহজ হবে। পরবর্তী সময়ে ব্লকগুলো ক্যাম্পে রূপান্তর করা হবে। ব্লকের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একজন করে কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসব ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া দেওয়া হবে। কুতুপালং এলাকায় ক্যাম্পগুলোর জন্য নতুন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট স্থাপন করা হবে। ক্যাম্পগুলোর ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন এবং পর্যাপ্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে।’

রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য মোট এক লাখ ৫০ হাজার অস্থায়ী শেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘এসব শেড দেশি বিদেশি এনজিওদের সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘চার লাখ ২০ হাজার লোক হিসাব করে প্রথমে ৮৪ হাজার শেড নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৭৫ হাজারেরও বেশি শেড নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ১৪টি গুদাম নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ৫টি গুদাম নির্মিত হয়েছে। বাকি ৯টির নির্মাণ কাজ এ সপ্তাহে শেষ হবে। এর বাইরে কুতুপালং ২০টি ব্লকে ২০টি গোডাউন নির্মাণ করা হবে।’

রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্টিক নিবন্ধন প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকের রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সার্বিক সহযোগিতায় নিবন্ধনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।’

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও দাবি করেন ত্রানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৪ ও ১৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে দুই দফা সমন্বয় সভা হয়েছে। সেখান থেকে সব মন্ত্রণালয়কে ২২টি নির্দেশনা পাঠানো হয়। তার আলোকেই মন্ত্রণালয়গুলো দিনরাত কাজ করে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসছে।’

মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানের মুখে রোহিঙ্গারা বাস্তু ভিটা, কেউ কেউ স্বজন হারিয়ে জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি হিসাব মতে এ পর্যন্ত ৫ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৭/নঈমুদ্দীন/আসাদ/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়