ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মিয়ানমারের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না

জাফর সোহেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ৫ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মিয়ানমারের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না

অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সু চির খেতাব বাতিল করেছে

জাফর সোহেল: রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত বুধবার রাত পর্যন্ত বেশকিছু আপডেট রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং এ নিয়ে দুপক্ষেরই সমান্তরাল ফলপ্রসু আলোচনার ঘোষণা অন্যতম। এ নিয়েই আজকের লেখা। তবে এ ছাড়াও যেসব আপডেট আছে সেগুলো নিয়ে একটু বলে রাখি। কারণ, মূল আলোচনায় এসব ঘটনাপ্রবাহ প্রাসঙ্গিক। 

প্রথম ঘটনা হলো, মঙ্গলবার রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞে মিয়ানমার সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচির ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ তার সম্মানসূচক খেতাব ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ বাতিল করেছে। যদিও এটি বড় কোনো পুরস্কার নয়, তথাপি অন্য আরো যেসব খেতাব ও পুরস্কার অং সান সুচি বগলদাবা করে বসে আছেন এবং সেগুলো বাতিলে পৃথিবীর নানা জায়গায় মানবতাবাদীরা এরই মধ্যে দাবি জানিয়েছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে আমি মনে করি। সুতরাং রোহিঙ্গা সংকটে সুচি কিছুটা বিপাকে পড়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে বসে নেই, অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ তার একটি উদাহরণ।

দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, আমেরিকার নিউইয়র্কে বসবাসকারি এক বাংলাদেশি আইনজীবী রোহিঙ্গাদের ওপর জেনোসাইড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছেন মিয়ানমারের বিপক্ষে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এ মামলা গ্রহণ করেছে। মামলার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, গণহত্যার জন্য সামরিক এবং রাজনৈতিক কর্তাদের বিচারের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং নিরাপদ বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিতের দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ যে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।

আমি জানি না এই মামলায় শেষ পর্যন্ত কী হবে? তবে এই পদক্ষেপ যে নিঃসন্দেহে প্রশংসার এবং সাহসের তা বলতেই হবে। বাংলাদেশের অনেক মানুষের প্রত্যাশা ছিল, স্বয়ং বাংলাদেশ সরকারই এই মামলাটি করবে। যদিও এমন পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ফাটল ধরে, তথাপি বাংলাদেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এমন কোনো ঘটনা যদি ঘটে যে, একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের ফলে অপর রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রটি এর প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে।

তৃতীয় যে বিষয়টি উল্লেখ করার মতো তা হলো, মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার  প্রধান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর একটি উপায়ের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের নিজের স্বার্থেই নাকি এমন কিছু হতে পারে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালির দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। নিকি হ্যালি জোর দিয়ে বলেছিলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে যা ঘটছে তা নিয়ে আলোচনার সময় শেষ। এখন পদক্ষেপ নেয়ার সময়। তিনি তাদের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছিলেন। ইউএনএইচসিআর প্রধানের অনুমান, যুক্তরাষ্ট্র ঠিকই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

সাধারণত মার্কিনিরা যখন এমন কিছু বলে, তা তারা আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবায়নের চিন্তা করে। ট্রাম্প প্রশাসনও মিয়ানমারের বিপক্ষে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। এরই মধ্যে এমন পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছেন সে দেশের ২১ জন সিনেটর। মার্কিনিরা এমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকও। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান সম্প্রতি একটি টকশোতে এ বিষয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। তিনি বলেছেন, মার্কিনিদের এই সংকটে ইনভলবমেন্ট জরুরি এবং তাদের নিজেদের স্বার্থেও যৌক্তিক। হয়তো তারা এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেও। বাংলাদেশের উচিত তাদের স্বাগত জানানো। কারণ, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দিনে দিনে একটা বেপরোয়া ও দুর্বৃত্ত সেনাবাহিনীতে রূপ নিচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এখন এ ধরনের সেনাবাহিনী অ্যালাও করা হয় না। সামরিক বাহিনীর নিজস্ব যে নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলো থাকে সেগুলোর কোনোটিই মিয়ানমার বাহিনীর মধ্যে নেই। তারা ল’ অব ওয়ার মানছে না। এ ধরনের একটি বাহিনী টিকে থাকা মানে সবার জন্য হুমকি। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বেশি হুমকি।

অতীতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী, যুগোশ্লাভিয়ার সার্ব বাহিনী, গেস্টাফো বাহিনীসহ বহু এমন দুর্বৃত্ত সেনাবাহিনীকে দমন করা হয়েছে। তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচার করা হয়েছে। এছাড়া মার্কিনিরা ভালো করেই জানে যে, এ অঞ্চলে আরেক নিউক্লিয়ার পাওয়ার ক্যান্ডিডেট হতে যাচ্ছে মিয়ানমার। সুতরাং এখানে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভাষায়, একটা ‘ডিটারেন্স’ বা নিবারণের পদক্ষেপ দরকার। এই মুহূর্তে তা একমাত্র মার্কিনিরাই করতে পারে। জাতিসংঘ বা এর নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাশ করার দরকার নেই। ‘রোঘ স্টেট’ বা দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের তকমা লাগিয়ে মার্কিনিরা ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো এদেরও শায়েস্তা করতে পারে।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ যখন মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় এবং উষ্ণ পরিবেশে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দের সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- মিয়ানমারের ফাঁদে পা দিচ্ছে না তো বাংলাদেশ? কারণ, মিয়ানমার এখন এটিই চায়। আলোচনা যতো দিন চালানো যায় ততই তাদের জন্য মঙ্গল। এখন তারা পৃথিবীকে বলতে পারবে- আমরা তো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছি, সুতরাং আমাদের সময় দিন। এই সময়ক্ষেপণ তাদের জন্য মহা মূল্যবান।


মঙ্গলবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, মিয়ানমার তার খেলাটা খেলছে সফলভাবেই। বাংলাদেশকে সে তার খেলার একটা অংশ বানিয়েছে। আমার কথা হলো, বাংলাদেশ তো এখানে অপরাধী না, ঘটনার পেছনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে মিয়ানমার বলেছে, ১৯৯২ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী তারা রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে ফেরত নেবে। তারা বলছে, এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে। আসলে কি বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ১৯৯২ এর চুক্তির (আসলে চুক্তি না, সমঝোতা স্মারক) আলোকেই এবারের প্রত্যাবাসন হবে তা বলেনি। বাংলাদেশ তাদের হাতে নতুন একটি চুক্তির খসড়া দিয়েছে। সেখানে নতুন অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার তাদের বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করেনি। বুধবার মধ্য রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

প্রথম  কথা হলো ১৯৯২ এর পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক না। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের রোহিঙ্গা সংকট প্রবল থেকে প্রবলতর। এবার সেখানে পরিষ্কার জেনোসাইড হয়েছে। এবার যদি অতীতের মতো রয়ে-সয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেয়া হয় তা দুই দিক থেকে রীতিমতো বোকামি হবে। এক, এতে মিয়ানমার সেনাবহিনী যে জেনোসাইড চালিয়েছে তা ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ পাবে তারা। নিরাপরাধ রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যার কোনো বিচার হবে না। একটি মানবতাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তা হতে দিতে পারে না। দুই, মিয়ানমার এ ধরনের চুক্তি অতীতে কখনোই ঠিকঠাক মানেনি; তারা বহু শর্ত ভঙ্গ করেছে, সুতরাং তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না। অন্তত দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে। তারা খুবই কেয়ারলেস এবং ডেসপারেট। তারা কেবল সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে চাইছে। আর পরিস্থিতি একবার শান্ত হয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী যে একটা প্রতিবাদী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তাও থেমে যাবে। নতুন কোনো ঘটনা হয়তো রোহিঙ্গা ইস্যুকে একপাশে সরিয়ে দিতে পারে। সুতরাং গতিশীল থাকতেই এ ঘটনার সুরাহার বিষয়ে সক্রিয় থাকতে হবে। মিয়ানমারকে আলোচনার সুযোগ দেয়া তাই বোকামি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জেনে বুঝেই জাতিসংঘে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে বলেছেন, রাখাইনে এথনিক ক্লিনজিং চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। সেখানে নিরাপদ অঞ্চল করতে হবে। সব রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে। এসব প্রস্তাবের মূল যে সুর, তাতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটিয়েছে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাবে সায় দেয়া। কারণ, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এবারের রোহিঙ্গা সংকট কোনোভাবেই দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান সম্ভব নয়। এখানে আন্তর্জাতিক একটা পদক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন। আগেই বলেছি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে দুর্বৃত্তপনা শুরু করেছে, জেনোসাইডের মতো অপরাধ করছে, তা থেকে তাদের নিবৃত্ত করতে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে এখানে বৃহৎ শক্তির ইনভলবমেন্ট দরকার। আমাদের উচিত, মিয়ানমারকে শক্ত ভাষায় বলা যে, তুমি আগে রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ করো; সামরিক অভিযান বন্ধ করো; সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করো; রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পেছনে দায়ী সব ধরনের সামরিক এবং বেসামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করো। তারপর তোমার সঙ্গে আলোচনা হবে।



বর্তমান পরিস্থিতি এমন এবং বিশ্ব জনমত এমন একটা পর্যায়ে গেছে যে, এবারের রোহিঙ্গা নিধন কোনোভাবেই আর মিয়ানমার ধামাচাপা দিতে পারবে না এবং এই অপরাধের বিচারও এড়াতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, ঠান্ডা যুদ্ধের প্রধান প্রতিপক্ষ রাশিয়ার শক্ত বিরোধিতা সত্ত্বেও সার্বদের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী। নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাশেরও দরকার পড়েনি। ঘটনা যখন হয়ে দাঁড়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধ বা জেনোসাইডের মতো বিষয় তখন আর তা দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয় থাকে না। তখন সবকিছুই হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে।

বাংলাদেশ এখানে ভুল করছে বলেই আমার মনে হচ্ছে। বিশেষ করে, যেখানে এখনো রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি ছেড়ে বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়নি, যেখানে এখনো সীমান্তে বার্মিজ সেনারা নিয়মিত টহল দিচ্ছে; স্থলমাইনের মতো নিষিদ্ধ অস্ত্র এখনো সীমান্তে পুঁতে রাখা হচ্ছে- সেখানে বাংলাদেশ কী করে তাদের সঙ্গে ‘অতীত ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব’ স্বীকার করে আলোচনার টেবিলে বসে? আপনি যদি আমার বন্ধুই হবেন তবে সীমান্তে স্থলমাইন কেন? এটা তো আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এখনো সময় আছে। নিজেদের অবস্থান একমুখী রাখতে হবে। আর সেটা হতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ৫ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে। প্রতিবেশী দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা কামনা করা, প্রত্যাশা করা এবং না থাকলে প্রয়োজনে ভূমিকা রাখার অধিকার বাংলাদেশের আছে। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য  প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এটা একটা দুর্যোগের মতো। চাইলেই হাত-পা গুটিয়ে রেখে এখান থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি দিনে দিনে দুর্বৃত্ত হয়ে উঠলে ঝুঁকি কিন্তু বাংলাদেশেরই বেশি। বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী এর আগেও আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। বন্ধুত্বের মুখোশ পরে তারা কিন্তু দুর্বৃত্তপনা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো বিবেচনায় ধরে নিতে হবে, এখনই সময় মিয়ানমারকে তাদের কৃতকর্মের জন্য ধরাশায়ী করা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল প্রতিবেশী হিসেবে নিশ্চিত করা। মিয়ানমারের নিজেদের কৃতকর্মই বাংলাদেশকে একটা সুযোগ দিয়েছে বলে আমি মনে করি। এবারের মতো এমন অপরাধের প্রমাণ অন্যান্যবার পাওয়া যায়নি। প্রযুক্তির কল্যাণে সারা পৃথিবীর মানুষ খুব সহজে তাদের অপকর্ম দেখতে পেরেছে এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। সুতরাং বিশ্ব জনমতকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, একাত্তরে ইয়াহিয়া-ভুট্টো গং আলোচনার কথাই বলেছিল। সব আগ্রাসনকারী, অপরাধী একসুরে কথা বলে। কারণ তারা জানে, তারা কী করেছে। মিয়ানমারও এখন সেই সুর তুলেছে। সুতরাং তাদের ফাঁদে পা দেওয়াটা মোটেই ঠিক হবে না। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের নামে, আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ না করে আমাদের বিশ্ব শক্তিসমূহের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করতে হবে। সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতাও সেই মুখী করতে হবে। এ প্রচেষ্টায় কোনো আঞ্চলিক শক্তি যদি সঙ্গে না থাকে অপরাপর শক্তির দ্বারস্থ হতে হবে। মিয়ানমার যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তা প্রমাণে বিশ্বকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রয়োজনে ইউএনএইচসিআর প্রধান ট্রাম্প প্রশাসনের হস্তক্ষেপের যে সম্ভাবনার কথা বলেছেন তার আশু বাস্তবায়ন দেখতেও একটা বাড়তি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। কে না জানে, পৃথিবীটা ‘শক্তের ভক্ত নরমের যম’।

লেখক: সাংবাদিক




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়