ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সরকারের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১৬ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান : গত ৩০ জুন ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট পাশ হয়েছিল। সেখানে ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআর বিশেষ আদেশও জারি করেছে। অথচ ভ্যাট কমানোর কোনো প্রভাবই পড়েনি মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে। গ্রাহকরাও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি ঘোষণা দেয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো, কিন্তু এখনো গ্রাহকদের কাছ থেকে আগের মতই ভ্যাট কাটা হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ করলেও এখনও গ্রাহকরা ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছেন। অতিরিক্ত ভ্যাটের কোনো অর্থই স্বাভাবিকভাবে সরকার পাবে না। দৈনিক ইত্তেফাকের ১১ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করে দিনে অতিরিক্ত ২ কোটি টাকা নিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। অর্থাৎ বাজেট ঘোষণার পর গত ১১ দিনে ২২ কোটি টাকা নিয়েছে তারা। বাড়তি আদায় করা প্রতিদিনের ২ কোটি টাকা সাধারণ মানুষেরই রক্তে-ঘামে-শ্রমে অর্জিত টাকা। অথচ এ অর্থ এখন যাচ্ছে মোবাইল অপারেটরদের পকেটে।

এখনো ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় হচ্ছে-এর মধ্য দিয়ে আমরা তিনটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি। প্রথমত, সরকারের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ভ্যাটের নাম করে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা নেয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, সরকার এখনো আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এ তিনটি বিষয়ই দুঃখজনক। যে দেশে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান কারাভোগ করছে, সেদেশে প্রতিদিন ২ কোটি টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না-এটি বিস্ময়কর ও হতাশার বিষয়। অবশ্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট কাটার বিষয়ে মোবাইল অপারেটররা নানারকম যুক্তি দেখাচ্ছে। তারা বলছে, রেয়াত সুবিধা না থাকায় ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব না। অন্যদিকে প্রজ্ঞাপনে ‘ইন্টারনেট সংস্থার’ ক্ষেত্রে ভ্যাট কমানোর কথা বলা হয়েছে। যেহেতু মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ইন্টারনেট সংস্থা নয়, সেজন্যে তারা এখনো ভ্যাট কমাচ্ছে না বলে জানিয়েছে অপারেটরদের সংগঠন এমটব। এ বিষয়ে তারা এনবিআরএর সুস্পষ্ট নির্দেশনাও চেয়েছে। যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা বলেছেন, মোবাইল অপারেটররা ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কারণে তারাও ইন্টারনেট সংস্থার আওতাভূক্ত। তারপরও নানা ফাঁক-ফোকর দেখিয়ে এখনো আগের মতোই ভ্যাট কেটে নিচ্ছে তারা। এখন যদি এনবিআর দ্রুত বিষয়টি স্পষ্ট করে তবে ফাঁক-ফোকরগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর যত দ্রুত ভ্যাট কমানোর বিষয়টির সুরাহা হবে, ততই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবেন গ্রাহক।

মোবাইল অপারেটরদের সরকারি নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি নতুন নয়। অনেকবারই পত্রপত্রিকায় আমরা তাদের সরকারি নির্দেশ উপেক্ষার সংবাদ পড়েছি। কলড্রপের বিষয়ে তারা দীর্ঘদিন সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পরিবর্তন ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কলড্রপে গ্রাহকদের বার্ষিক ক্ষতি হয় ৫শ কোটি টাকা। বাংলাদেশ মোবাইল গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ১৫ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে প্রতিদিন কলড্রপ হয় প্রায় ২ কোটি মিনিট। সর্বনিন্ম কলরেটের মূল্য ৬০ পয়সা ধরলে বছরে দাঁড়ায় প্রায় ৫শ কোটি টাকা। এ বিপুল সংখ্যক অর্থ মোবাইল অপারেটরদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও তারা দিচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকরা। সরকারের সাম্প্রতিক ভ্যাট কমানোর নির্দেশনা উপেক্ষা করা, অপারেটরদের আইন অমান্যের ধারাবাহিকতা মাত্র। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ। আজ ভ্যাট কমানো হয়েছে বলে নির্দেশ বাস্তবায়ন তারা গড়িমসি করছে, যদি ভ্যাট বাড়ানো হতো? তাহলে নির্দ্বিধায় সরকারি সিদ্ধান্তের দিনগুলো থেকেই বাড়তি ভ্যাট আদায় করতে তারা তৎপর হতো। এমন অভিজ্ঞতা বিগত দিনে গ্রাহকদের হয়েছে। অথচ ভ্যাট ৫ শতাংশ করায় সরকারি সিদ্ধান্তকে এখন দিনের পর দিন উপেক্ষা করা হচ্ছে!

সাধারণ গ্রাহকরা অবশ্যই সরকারি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চায়। ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হলে নিঃসন্দেহে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। আমরা চাই সরকারি এই আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।

লেখক: গল্পকার ও প্রাবন্ধিক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুলাই ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়