ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিশুদের শিক্ষার ধারায় ফেরাতে ‘অনুশীলন মজার স্কুল’

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ২ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুদের শিক্ষার ধারায় ফেরাতে ‘অনুশীলন মজার স্কুল’

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: শিক্ষাবঞ্চিত কর্মজীবী শিশু ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে খুলনার রূপসায় চালু হয়েছে ‘অনুশীলন মজার  স্কুল’।

চিত্ত বিনোদনসহ নানা কৌশলে শিশুদের লেখা-পড়ায় আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ব্যক্তি প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এ স্কুলে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে পাঠদান করছেন ১০ জন শিক্ষক।

তিন বছর ধরেই চলছে এই স্কুলটির কার্যক্রম। কিন্তু নিজস্ব জমি ও মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

রূপসা উপজেলার ইলাইপুর গ্রামের বাসিন্দা অলোক দাস ২০১৫ সালে ১৫জন শিক্ষার্থী নিয়ে গড়ে তোলেন এই ‘অনুশীলন মজার স্কুল’। নিজস্ব জায়গা না থাকায় ৫ বছর মেয়াদে জমি লিজ নিয়ে সেখানে ৪টি শ্রেণিকক্ষে শুরু করেন শিক্ষা কার্যক্রম। সরকারি কোন অনুদান বা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান না নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। তার এ কাজে উৎসাহী হয়ে এগিয়ে এসেছে আরো ৯জন শিক্ষিত যুবক। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তারাও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন।

পাঠ্য-পুস্তকসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ এবং বছরে দু’বার নতুন পোষাক প্রদান করা হয় শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়ের এসব ব্যয় বিভিন্ন ব্যক্তিদের স্ব-ইচ্ছায় প্রদানকৃত অর্থে চালানো হয়। চিত্ত বিনোদনসহ নানা কৌশলে এ স্কুলে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় আগ্রহী করে গড়ে তুলে বছরের প্রথম দিকে ভর্তি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

স্বল্প পরিসরে ‘অনুশীলন মজার স্কুল’ এর যাত্রা শুরু হলেও এখন তা আরো বড় আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পূর্ব রূপসায় আরো একটি শাখা চালু হয়েছে। তিন বছরে ৮০ জন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী করা হয়েছে। দু’টি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে ৭০ জন। পর্যবেক্ষণে রয়েছে আরো ২০জন। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়ার পরও অনুশীলন স্কুলের কার্যক্রম থেমে থাকেনা। এ স্কুল থেকে ভর্তি করা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষা উপকরণ এবং ফ্রি-টিউশন দেওয়া হয়। দেওয়া হয় স্বাস্থ্যসেবা। এমনকি যেসব শিশুদের জন্ম নিবন্ধন নেই, তাদের জন্ম নিবন্ধন করানো হয় এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।



বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত কর্মজীবী শিশু মো. শুকুর আলী (৮) জানায়,  সে আগে মায়ের সাথে চিংড়ির মাথা-খোসা ছিলার কাজ করতো, এখন সে স্কুলে যায়। পড়তে তার ভালো লাগে।

মো. আপন শেখ (১১) নামে আরেক শিশু জানায়, সে আগে মাছের আড়তে ঝুড়ি ও পানি টানার কাজ করতো। এখন আর কাজ করেনা। লেখা-পড়া শিখে তারপর কাজ করবে।

মিলন শেখ (১০) নামে আরেক শিশুর ভাষ্য, সে আগে মাছের ঘেরে কাজ করে জীবন চালাতো। অনুশীলন মজার স্কুলে পড়ার পর এখন ইলাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। লেখা-পড়া ছাড়া এখন আর কিছু ভালো লাগেনা তার।

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অলোক দাস বলেন, ‘আমি নিজে একজন কর্মজীবী শিক্ষার্থী ছিলাম। এসএসসি পরীক্ষার সময় কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতাম। এইচএসসি’র সময় কোম্পানিতে গ্রেটারের কাজ করতাম। এভাবে কাজের ভিতর থেকে মাস্টার্স করেছি। তাই কর্মজীবী শিশুদের কষ্টটা আমি বুঝি। একারণে এসব শিশুদের শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘এসব শিশুদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা এবং সেবা-যত্নের মাধ্যমে আমরা বিদ্যালয়মুখী করে তুলি। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা খুবই নিম্ন পেশায় কাজ করতো। কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিও করতো। তাদেরকে সে অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনেছি। ঈদে এসব শিক্ষার্থীদের নতুন পোষাকের পাশাপাশি সেমাই-চিনি এবং কোরবানির ঈদে মাংসও প্রদান করি। এলাকার বেশ কিছু সমাজসেবী আমাকে এসব ব্যাপারে সাপোর্ট দেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব শিক্ষার্থীদের যাতে ভবিষ্যতে কাজের জন্য ভোগান্তির শিকার হতে না হয়, সে জন্য ভবিষ্যতে লার্নিং ও আর্নিং প্রজেক্ট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদ থেকে তিন বান্ডিল টিন এবং দু’দফায় ৫৩ হাজার টাকা পেয়েছি। যা স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জমি ও মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ খুবই দরকার।’



 

রাইজিংবিডি/খুলনা/২ আগস্ট ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়