ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যার বিচার চাই

সঞ্জয় সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২২, ২৯ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যার বিচার চাই

সুবর্ণা নদী হত্যার বিচার দাবিতে সাংবাদিকদের মানব বন্ধন

সঞ্জয় সরকার : সাংবাদিকতা চরম ঝঁকিপূর্ণ পেশা। বিশেষ করে মফস্বল সাংবাদিকতার ঝুঁকি আরও বেশি। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে মফস্বল সাংবাদিকদের প্রায়শ নানা রকম ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবুও তারা নিতান্ত শখে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বা একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার মতো চরম ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নেন। বিনিময়ে তারা যা পান- তা তাদের পরিশ্রম বা ত্যাগের তুলনায় একেবারেই নগন্য। প্রাপ্তির চেয়ে বঞ্চনাই বেশি জোটে তাদের ভাগ্যললাটে।

খুব দূর অতীতের দিকে তাকাতে হবে না, কিছুদিন আগেও মফস্বল সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ তেমন একটা ছিল না। পুরুষ শাসিত পরিবার ও সমাজের নানা বাধা, শৃঙ্খল-অর্গল ভেঙে ইদানিং গুটিকয়েক নারী মফস্বলের নানা প্রান্ত থেকে সাংবাদিকতার মতো চরম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় দায়িত্ব পালন করছেন। লক্ষ্য করি, আমরা যারা পুরুষ সংবাদকর্মী, তাদের চেয়ে এই নারী সংবাদকর্মীদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা আমাদের চেয়েও এগিয়ে। ঘটনা-দুর্ঘটনা, মারামারি-হানাহানি, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ- সব কিছুতে তারা আমাদের পাশে থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে তাদের এই এগিয়ে চলার গতি দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই আনন্দিত হই। আত্মবিশ্বাসে আমার বুকটা ভরে ওঠে। তখন মনে করি, আগামী দিনে এমন একটি বাংলাদেশই তো চাই আমরা। যেখানে নারী-পুরুষের কোনো বৈষম্য থাকবে না।  সব পেশায় সমান ভাবে অবদান রাখবে নারী। নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই ঘুরবে প্রাণপ্রিয় দেশটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাকা। নারী আর ‘নারী’ শব্দের গণ্ডিতে আটকে থাকবে না। সমাজের দশজনের কাছে তারাও ‘মানুষ’ হিসেবে মর্যাদা পাবে। গড়ে ওঠবে একটি মানবাধিকারভিত্তিক সমাজ।

খুবই দুঃখ লাগল যখন পাবনার নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীকে হত্যার খবরটি পেলাম। দুর্বৃত্তরা অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমাদের এই সহকর্মী বোনটিকে। সুবর্ণা নদী সাহসী সাংবাদিক। ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে পরিচয় না থাকলেও তিনি যে সাহসী ছিলেন- তা বুঝতে বাকি নেই আমার। কারণ, তিনি পাবনার মতো মফস্বল শহরে থেকে একটি অনলাইন দৈনিক সম্পাদনা করতেন। একটি দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করা নিঃসন্দেহে সাহসিকতাপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। পত্রিকার সব দায়-দায়িত্ব নির্ভর করে সম্পাদকের ওপর। এসব মাথায় নিয়েই সম্পাদনায় নিয়োজিত হয়েছিলেন তিনি। তার অনলাইন পোর্টালটিও আমার কাছে বেশ পরিচ্ছন্ন বলেই মনে হয়েছে। আনন্দ টিভি নামে একটি বেসরকারি টেলিভিশনেও কাজ করতেন তিনি।

আশা করি সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ দ্রুত সুবর্ণা নদী হত্যার রহস্য উদঘাটন করবে। হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তবে যখন সাগর-রুনি হত্যা মামলার কথা মনে পড়ে, তখন কিছুটা আশাহত হতে হয় আমাদের। এত আলোচিত একটি ঘটনার বিচার আজো পাইনি আমরা। বিশ্বাস করতে চাই, সুবর্ণা নদী হত্যার ক্ষেত্রে এমন ঘটবে না। আমরা দ্রুতই জানতে চাই, কারা তার হত্যাকারী। কেন হত্যা করা হলো এই সাহসী নারী সাংবাদিককে।

লেখাটা লিখতে গিয়ে আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়লো। কিছুদিন আগে ঢাকার রাজপথে হেলমেটধারী দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহত করলো বেশ ক’জন দায়িত্বরত সাংবাদিককে। এক মন্ত্রী আরেক মন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য। কিন্তু আইনের জাল ক’জনকে আটকাতে পারলো?

আসলে সবকিছুর জন্য সদিচ্ছাটা জরুরি। ইচ্ছা ছিল বলেই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছে। জঙ্গীবাদ নির্মূলে সফল হয়েছে। বিশেষ অভিযান চালিয়ে বড় বড় মাদক কারবারীদের আইনের আওতায় আনতে পেরেছে। সাংবাদিক নিগ্রহ, নির্যাতন বা হত্যার মতো ঘটনায়ও আমরা সরকারকে এমন জোরালো ভূমিকায় দেখতে চাই। মনে রাখতে হবে, সংবাদপত্র হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এ স্তম্ভটি শক্তিশালী হলে রাষ্ট্রযন্ত্রই উপকৃত হবে সবচেয়ে বেশি। যারা সাংবাদিক নেতা তাদেরও এ ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুথবদ্ধ হতে হবে। দাবি আদায়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। যুথবদ্ধ হওয়া মানে লোক দেখানো দু-একটা মিছিল-সমাবেশ নয়। ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকতে হবে সকলকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ আগস্ট ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়