ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

ছয় বছরে রাইজিংবিডি কতটা সফল?

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছয় বছরে রাইজিংবিডি কতটা সফল?

হাসান মাহামুদ : ২০০৪/০৫ সালের পর গণমাধ্যম কর্পোরেট মালিকানা বিষয়টি স্পষ্টতর হওয়ার পর প্রধানত দুটো বিষয় খুব উচ্চারিত হতো। গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ আর কতদূর? গণমাধ্যমের চরিত্র আর কতদিন? ‌কিন্তু পেশাদারিত্বের মনোভাবে এই দুটো প্রসঙ্গেরই অবদমন হয়েছে অনেকটাই।

এরপর গত কয়েক বছর ধরে বলাবলি হচ্ছে, গণমাধ্যম কার হাত ধরে এগিয়ে যাবে? প্রিন্ট, টেলিভিশন নাকি অনলাইন? এই আলোচনায় প্রথমদিকে ধোপেই টিকেনি অনলাইনের নাম। গণমাধ্যম বলতেই প্রিন্ট মাধ্যম, এরপর মানুষের আগ্রহের স্থানটি ছিল টেলিভিশন বা স্যাটেলাইট নিয়ে। ক্রমেই আস্থা এবং পছন্দের স্থানটি দখল নিয়েছে অনলাইন গণমাধ্যম।

এখন বলা হয়- সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ অনলাইনে।  গণমাধ্যমের ‘মাধ্যম’ নিয়ে ভাবা-যুক্তি-তর্কের পরিবর্তে এখন ফোকাসটা বেশি থাকে- কোন অনলাইন মাধ্যমটি নিজের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে, কোন মাধ্যম কতটা দ্রুত সংবাদটি দিচ্ছে, এসব নিয়ে।  কথা হয়, নিউজগেদারিং টুল, সোল অব নিউজগেদারিং এসব নিয়ে। আর এসব অনলাইন গণমাধ্যমেই একেকটি উপকরণ।

বিশ্বে ইন্টারনেটভিত্তিক গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট যত সহজলভ্য হচ্ছে ততই বাড়ছে অনলাইনের দাপট। বিশেষ করে মোবাইলফোন ইন্টারনেটের কারণে এর পরিধি ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে। অনলাইন সাংবাদিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাৎক্ষণিকতা। যেকোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই রেডিও-টিভির মতো এতে প্রকাশ করা যায়। আজ সকালে ঘটে যাওয়া খবরটি কাগজের পত্রিকার পাঠকেরা পাবেন পরদিন সকালে। আর অনলাইনের পাঠকেরা ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা পাবেন।

অনলাইনে অভ্যস্থ পাঠকরা কাগজের পত্রিকার খবরে আকর্ষণ বোধ করেন না। তা ছাড়া, অনলাইন সংবাদপত্রে স্থান সংকুলানের কোনো সমস্যা নেই। ফলে একজন অনলাইন সাংবাদিক তার স্টোরিকে বিভিন্ন তথ্যে সমৃদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারেন।  অনলাইন সাংবাদিকতায় সবচেয়ে যারা সবার আগে সব খবর দিতে পারে তাদের সাইটেই ভিজিটর বেশি হয়। পাঠক ধরে রাখার জন্য অনলাইনে অনেক কৌশল করতে হয়। তবে তাৎক্ষণিকতার সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্যতা জরুরি। অনলাইন সংবাদপত্র একবার বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে সহজে তা ফেরাতে পারে না।

রাইজিংবিডি সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকতার পরিবর্তে বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর জোর দেয়। ফলে আমরা হয়তো কিছুক্ষেত্রে ‘তাৎক্ষণিক’ নই, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে আমরা আপোষ করি না।

রাইজিং‌বিডির একজন কর্মী হিসেবে আমি বলতে পারি, রাইজিংবিডি কখনো গসিপ নিউজ ছাপায় না।  গত তিন বছর অনলাইন পোর্টালটির প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্বে থেকে বলতে পারি, এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে পাঠক মনে করেন, রাইজিংবিডিতে নিউজ প্রকাশ হওয়া মানে ঘটনাটি সত্য। কারণ আমরা অন্তত ৯০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কখনোই নিউজ ছাপি না।  আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- রাইজিংবিডির মানবিচারে যতটা বস্তুনিষ্ট, এর মালিকপক্ষও ততটাই পেশাদার।

আমরা জানি, বিশ্ব এখন ইন্টারনেটময়। মানুষকে খুব দ্রুত আকৃষ্ট করার এক অদ্ভূত শক্তি রয়েছে এই ইন্টারনেট ব্যবস্থার। মানুষ এখন আপ-টু-ডেট থাকার জন্য সকালের পত্রিকার অপেক্ষায় আর থাকেন না, যখন কোনো খবর ঘটে, তখনই তা পাওয়ার জন্য ইন্টারনেটের সহায়তা নিচ্ছেন।

ইন্টারনেটের বদৌলতে কোনো ঘটনা চলমান অবস্থায়ও এ সম্বন্ধে সর্বশেষ তথ্য জেনে যাচ্ছে মানুষ। এর জন্য টেলিভিশনের পর্দার সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। মুহূর্তের মধ্যেই সেই খবর বা তথ্য ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। বলা যায়- পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন আর রেডিও’র পাঠক-দর্শক-শ্রোতা এখন দিনদিন অনলাইনমাধ্যমের ভোক্তায় পরিণত হচ্ছে। জন্ম হয়েছে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টারের। অর্থাৎ একইসাথে একজন রিপোর্টার এখন ছবি তুলছেন, ভিডিও শ্যুট করছেন, স্মার্টফোন বা ট্যাব বা ল্যাপটপ থেকে অনলাইনের জন্য নিউজ লিখছেন (কখনো বা আপলোডও করছেন), আবার বিট থেকে ফিরে অফিসে এসে তা অনলাইনের জন্যও প্রস্তুত করছেন। মিডিয়ায় এ ধরনের রিপোর্টারের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। আমরা সৌভাগ্যবান যে, রাইজিংবিডিতে কর্মরত আছেন একঝাঁক প্রতিভাবান সংবাদকর্মী।

অনলাইন গণমাধ্যমের পরিবারে যে কয়টি গণমাধ্যম বাংলাদেশে পাঠকদের কাছে শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছে তার মধ্যে রাইজিংবিডি ডটকম অন্যতম। বিষয়টি আরো সংক্ষেপ এবং পয়েন্ট-আউট করলে বলতে গেলে- ইতিবাচক সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনে এরই মধ্যে স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম।  রাইজিংবিডি বর্তমানে অগ্রসর পাঠকের পোর্টাল।

আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে বাংলাদেশে অনলাইন মিডিয়ার যাত্রা। এত বছরে আমাদের এই মিডিয়াটি একটি কাঠামোয় আসা উচিত ছিল।  যেমন নামকরণ নিয়েই এখনো আমাদের মধ্যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব, আমরা যাকে আদর করে বলি ‘ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড’, আর সব কিছুর মতো তারা তথ্যপ্রযুক্তিতেও বিপ্লব ঘটিয়েছে। সে বিপ্লবের ছায়া পড়েছে গণমাধ্যমে। পরিসংখ্যান বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ এখন অনলাইন সংবাদে নির্ভরশীল। এই অনলাইন মিডিয়া একেক দেশে একেক নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একে ডাকা হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে। ইংল্যান্ডে এর নাম অনলাইন নিউজ পেপার। বাংলাদেশে দুইটাই। আমার মতে, অনলাইন সংবাদের নামকরণ ‘ওয়েব পোর্টাল’ হিসেবেই হলে সবচাইতে ভালো হয়।

এরপর প্রয়োজন অনলাইন মিডিয়ার নীতিমালা, বেতন কাঠামো, বিজ্ঞাপন তালিকা, সর্বোপরি নিবন্ধন- এই বিষয়গুলোর সমাধান।  এসব বিষয় সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকারের উদ্যোগে বিষয়গুলোর কাজ যেহেতু চলছে, আমরা আশা করতে পারি এসবের সমাধান হবে।  তার আগে প্রয়োজন কিছু অনলাইনের চরিত্র ঠিক করা, কিছু মিডিয়ার চরিত্র নির্ণয় করা, প্রকৃতি নির্ণয় করা।  আমরা এসব বিষয়ের আশু সমাধান চাই। কারণ রাইজিংবিডি এসব বিষয়ে সবসময়ই আপোষহীন।

আমাদের মূল্যায়ন পাঠকের হাতে। আমরা এতটুকু বলতে পারি, রাইজিংবিডিতে আমরা তৃপ্ত। আমরা গর্ববোধ করি সম্ভাবনাময় এই ওয়েব পোর্টালের অংশীদার হতে পেরে।

রাইজিংবিডি সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করেছে আজ। পজিটিভ নিউজের স্লোগান নিয়ে এই অনলাইন নিউজ পোর্টালটির যাত্রা শুরু ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল। যাত্রা শুরুর দিন থেকেই সকল শ্রেণির মানুষের স্বপ্ন, সম্ভাবনার মুখপাত্র এটি। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। বিষয়টিকে ধারণ করে  রাইজিংবিডি সবসময়ই ইতিবাচক ভূমিকা রেখে আসছে। আমরা আশা করি, আগামীতেও আমাদের পথচলার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৯/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়