ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

খুলনার ৬টি আসনের আ.লীগ প্রার্থীদের সম্পদ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনার ৬টি আসনের আ.লীগ প্রার্থীদের সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত ৬ প্রার্থীর ৩ জনই সংসদ সদস্য হিসেবে এই প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

নতুন ৩ প্রার্থীর মধ্যে দু’জন ‘হেভিওয়েট’। ৬টি আসনের সব প্রার্থীই নির্বাচন কমিশনে তাদের হলফনামা দাখিল করেছেন। হেভিওয়েট দু’ জনসহ তিন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক। বাকি তিন প্রার্থী উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

হলফনামার তথ্য মতে, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস। হলফনামায় তিনি দেখিয়েছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। পেশায় কৃষিজীবী। কৃষিকাজ থেকে তার বার্ষিক আয় ৭০ হাজার টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা, বেতন ও সম্মানী থেকে আয় ৬ লাখ ৬০ হাজার ও অন্যান্য উৎস থেকে আয় ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ব্যক্তিগত নগদ অর্থ আছে ৩৩ লাখ টাকা। কয়েকটি যানবাহন যার মূল্য আছে ৫০ লাখ টাকা, স্বর্ণ আছে ৭ লাখ টাকার, আসবাবপত্র আছে ৭ লাখ ও ইলেকট্রনিক্স আছে ৭ লাখ টাকার। খুলনা ও রাজধানীতে দু’টি বাড়ি আছে তার।

সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে গঠিত খুলনা-২ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু’র ভ্রাতুষ্পুত্র ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হেভিওয়েট প্রার্থী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। হলফনামায় তিনি দেখিয়েছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। পেশায় ব্যবসায়ী। মেসার্স আজমীর নেভিগেশন ও মেসার্স ফারদিন ফিস নামে দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তার। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ৯ লাখ ৫ হাজার ৪০৪ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানত থেকে আয় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ব্যাংক মুনাফা থেকে আয় ২৬ লাখ ৭০ হাজার ১ টাকা। বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকান ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মিটিং ফিস থেকে আয় ৬৪ হাজার টাকা। তার মোট বার্ষিক আয় ৩ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৪০৫ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীলদের বাড়ি ভাড়া, ডিভিডেন্ড, ব্যাংক মুনাফা ও অন্যান্য খাতে বার্ষিক আয় ২ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ৯০৯ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নগদ অর্থ আছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর আছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার ১১৩। তার ওপর নির্ভরশীলদের ১ লাখ ৩ হাজার ৬৬৭ টাকা রয়েছে। তার নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪৩ টাকা আর স্ত্রীর নামে ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৫ হাজার ৮১৫ টাকা। তিনটি কোম্পানিতে তার শেয়ার আছে, যার মূল্যমান ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর শেয়ার আছে ২০ কোটি টাকার। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে তার বিনিয়োগ আছে ৪ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৩৮২ টাকা এবং তার স্ত্রীর আছে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৬৮৩ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল ইত্যাদির বিবরণীর মূল্য ১ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র আছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার, স্বর্ণ আছে ৩ লাখ টাকার এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ আছে ৩০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮০ টাকা।

শেখ জুয়েলের স্থাবর সম্পদ আছে ১ কোটি ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৪০০ টাকার মূল্যের অকৃষি জমি। নিজস্ব বাড়ি আছে ১ কোটি ৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যের। তার স্ত্রীর আছে ৩১ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি এবং ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার ৬৩৫ টাকা মূল্যের দালান। বেসিক ব্যাংকে শেখ জুয়েলের দায় আছে ২৯ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬২ টাকা।

খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা নিয়ে গঠিত খুলনা-৩ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। হলফনামায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (সম্মান)। বার্ষিক বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১ লাখ, মাছ চাষ করে তার আয় ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ২৪ হাজার টাকা, বেতন থেকে আয় ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও অন্যান্য ভাতা থেকে আয় ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নগদ অর্থ আছে ৫১ লাখ টাকা, বিভিন্ন যানবাহনের আছে যার মূল্যমান ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। স্বর্ণ আছে ৪০ তোলা। দৌলতপুরে ৩ কাঠা জমি, রাজউকে ৫ কাঠা, রেলগেটে ৮ শতক ও বিল ডাকাতিয়ায় ৪৯ শতক জমির আছে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার। তবে মহেশ্বরপাশায় সাড়ে ১১ শতক জমির ওপর ১টি তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি দেখালেও তার মূল্য হলফনামায় দেওয়া হয়নি। ফ্রিজ, টিভি, খাটসহ আসবাবপত্র উপহার পেয়েছেন বলে হলফনামায় দেখানো হয়েছে। মন্নুজান সুফিয়ানের ঋণ আছে ৭ লাখ টাকা। তিনি গত দুই সংসদ নির্বাচনে টানা এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ফুটবলার ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী। হলফনামায় তিনি দেখিয়েছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। মুর্শেদীর বার্ষিক আয় ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন থেকে আয় ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক থেকে আয় ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি আছে, ৮৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। নগদ অর্থ আছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ৪৫ লাখ টাকা, বন্ড-সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার আছে ৭১ কোটি টাকার, স্বর্ণ আছে সাড়ে ৪ লাখ টাকার, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে সাড়ে ৭ লাখ টাকার, আসবাবপত্র আছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার। অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি আছে ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদ আছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। গুলশানে ১৫ কাঠা জমি, খিলগাঁওয়ে একটি ৯০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশানে ২টি ফ্ল্যাটসহ দালানকোঠা। মুর্শেদীর দায় আছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। তিনি প্রাইভেট/পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বস্ত্রশিল্প, ব্যাংক ও হাসপাতালের সাথে যুক্ত আছেন।

ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। হলফনামায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ। পেশায় তিনি কৃষিকাজ, ইটভাটা ব্যবসা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিত্ব দেখিয়েছেন। তার বার্ষিক আয় ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যার ভেতরে কৃষিকাজ থেকে আয়  ৮০ হাজার ৫০০ টাকা, ইটভাটা থেকে আয় ৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, মন্ত্রীর বেতন ও অন্যান্য ভাতা থেকে আয় ১১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তার ব্যাংক ঋণ রয়েছে এক কোটি ৩৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি আছে, নগদ অর্থ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ৬০ হাজার টাকার, ২টি পুরনো জিপ গাড়ি ও ১টি মোটরবাইক আছে। তার স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ উপহার হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্থাবর সম্পদ আছে, দুইটি জমি। যার মূল্য ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তার ১টি বিল্ডিং ও ১টি টিনশেড সেমিপাকা বাড়ি আছে। তার ব্যাংক ঋণ ৮৩ লাখ ও ব্যক্তিগত ঋণ ৩৫ লাখ টাকা।

কয়রা-পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মো: আক্তারুজ্জামান। হলফনামায় তিনি দেখিয়েছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। পেশায় তিনি ঠিকাদার ও কৃষিকাজে যুক্ত। তার বার্ষিক আয় ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যার ভেতওে কৃষিকাজ থেকে আয় ৩২ হাজার টাকা ও ঠিকাদারী ব্যবসা থেকে আয় ৬৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি নগদ অর্থ আছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স  সামগ্রী আছে ১ লাখ টাকার, আসবাবপত্র ১ লাখ টাকার ও ৩০ তোলা স্বর্ণ উপহার পাওয়া। স্থাবর সম্পদ কৃষিজমির পরিমাণে আর্থিক মূল্য ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা । তার ব্যাংক ঋণ ১ কোটি টাকা।




রাইজিংবিডি/ খুলনা/৬ ডিসেম্বর ২০১৮/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়