ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

৪টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা দলীয়: এইচ টি ইমাম

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা দলীয়: এইচ টি ইমাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, দেশীয় যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে এর মধ্যে চারটি সংস্থা একেবারেই দলীয়। এরা যদি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকে, এদের যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তবে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে দেশি ও বিদেশিরা কাজ করেন। দেশীয় যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে এদের মধ্যে চারটি দলীয় সংস্থা হলো-ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইটহাউস ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ।

এর মধ্যে ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রধান হচ্ছেন তালেয়া রেহমান। যিনি বিএনপির বড় নেতা ও সাংবাদিক লেখক শফিক রেহমানের স্ত্রী। খান ফাউন্ডেশন চালান বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের স্ত্রী। লাইটহাউসের পেছনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন তারেক রহমান। আর বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্বনয় পরিষদে নেপথ্যে এখন রয়েছে আদিলুর রহমান খান। যার প্রতিষ্ঠান অধিকার কয়েকদিন আগেই ইসি নিবন্ধন বাতিল করেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সাথে এক বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা সহিংসতার যে খবর পাচ্ছি যে হামলাগুলো হচ্ছে সেগুলো আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি। আপনারা নিশ্চয় জানেন যে, ইতিমধ্যে আমাদের দুইজন সদস্য এরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তৃণমূলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাজেই বেছে বেছে তাদের ওপরই এই আক্রমণ, এই বিষয়টা আমরা নির্বাচন কমিশনকে অভিহিত করেছি।

তিনি বলেন, ইসির কাছে তো অন্যরা অন্যভাবে বিষয়গুলো বলেছে যেমন ধরেন বিএনপির মহাসচিবের গাড়ি বহরে হামলা। আমরা যে তথ্য পেয়েছি তারা তো পুলিশকে খবর দিয়ে যায়নি। পুলিশেরও জানা ছিল না।

তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, গুলশান অফিসে নির্বাচন নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তোলপাড় হয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মির্জা ফখরুল ইসলামের ওখানেও। ওখানে তাদের দলের লোকেরাই নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। অথচ বিশেষ একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। ভুল স্বীকার করেছেন। এরকম ভুল হওয়া উচিত না। এরকম খবর যাচাই-বাছাই করে নিলেই হয়। এখন তো খোঁজখবর নেওয়া সহজ। কোনো একটিতে এরকম ঘটলে অন্যরা প্ররোচিত হন। উৎসাহিত হন। কিন্তু নির্বাচনের আগে এই সময়ে নানা রকম সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য মিডিয়ার কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে এ ধরনের বিষয় যাতে যাচাই-বাছাই করে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। এমনভাবে পরিবেশন করে যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ এক কর্মীকে হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের সাধারণ সম্পাদক যে বর্ণনা করলেন যুবলীগ নেতা যাকে হত্যা করেছে প্রথমে তার চোখে মরিচের গুড়া দেওয়া হয়েছে। পরে তার মাথায় ইট দিয়ে থেতলে থেতলে মারা হয়েছে। তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে পরিশেষে তাকে গুলিও করা হয়েছে। এগুলো কোন ধরনের কাজ! এগুলোতে আমরা ২০১৩-১৪ যেরকম দেখেছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর লোকদের দেখেছিলাম আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম আমরা বরদাস্ত করতে পারি না। ফরিদপুরে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া মাহি বি চৌধুরীর গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদেরকে আমরা অনুরোধ করেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ইসির কর্তৃতাধীন। আপনারা তাদেরকে ব্যবহার করুন যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যত সহিংতা হচ্ছে সেগুলো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর বেশি হচ্ছে। আমাদের দুইজন কর্মী নিহত হয়েছে। মাহী বি চৌধুরী গাড়ির বহরের ওপর গাড়ি হামলা-এটিই তার প্রমাণ। মহাজোটের অন্যান্য সহযোগিদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের মুল বক্তব্য হচ্ছে মিথ্যা ও গুজব তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট না করেন। এছাড়া পটুয়াখালী, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জের সিংরা, গাংনী, মেহেরপুরের শাহাজাদপুর ও নরসিংদী জেলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে।

এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়দায়িত্ব বা ব্যর্থাতা দেখছেন কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা ব্যর্থতা বলব না। তাদেরই আমরা সতর্ক করলাম। তাদেরকে আমরা বলেছি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এখন তো চিহ্নিত করা সহজ। এখন তো এসব ঘটনার ছবি পাওয়া যায়। তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন।

নির্বাচন কমিশন থেকে আপনাদের কিধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তাদেরকে আমরা যখন জানালাম। এর ঘটনা তারা জানতেও না। আমরা জানানোর পর তারা বলেছেন তারা ব্যবস্থা নিবেন। এখন আমরা দেখি তারা কি ব্যবস্থা।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছেন-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বলব নির্বাচন কমিশন এখনও যথেষ্ট নিরপেক্ষ, নির্মোহ এবং তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারা আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন-আমরা বৃহত্তর দল যাতে তাদের সহযোগিতা করি।

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করছি। কিন্তু আমরাই যদি আক্রান্ত হই তাহলে আমাদেরকে রক্ষাতো আপনারই (ইসি) করবেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব আপনারা পালন করুন। কমিশন বলেছে এ বিষয়গুলো তারা দেখছেন। এখন থেকে সবাইকে নির্দেশ দিবেন আরো সতর্ক হওয়ার জন্য।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসিবুল/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়