ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ঘরে মধ্যে শত্রুতা না করলে বাইরের শত্রু সুযোগ পায় না’

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ঘরে মধ্যে শত্রুতা না করলে বাইরের শত্রু সুযোগ পায় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘরের মধ্যে থেকে শত্রুতা না করলে বাইরের শত্রু সুযোগ পায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বুধবার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি একথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় খোন্দকার মোশতাক আহমেদের জড়িত থাকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আরো অনেকে এর মধ্যে জড়িত ছিল, এই ষড়যন্ত্রের সাথে। আসলে ঘরের শত্রু বিভীষণ। ঘরের ভেতর থেকে শত্রুতা না করলে বাইরের শত্রু সুযোগ পায় না। সে সুযোগটা (তারা) করে দিয়েছিল। অনেকেই তাকে সাবধান করেছিলেন; এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বিশ্বাসই করেন নাই। আব্বা বলতেন, ‘ওরা তো আমার ছেলের মতো, আমাকে কে মারবে?’

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ডালিম, ডালিমের শ্বাশুড়ি, ডালিমের বউ, ডালিমের শ্যালিকা ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাসায় পড়ে থাকত। ডালিমের শ্বাশুড়ি তো সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত, ডালিমের বউ তো সারাদিনই আমাদের বাসায়।

খুনি মেজর এ এইচ এম বি নূর চৌধুরীর নিজের ভাই শেখ কামালের সঙ্গে প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি হিসাবে কাজ করেছেন। এরা তো অত্যন্ত চেনা মুখ। খুব দূরের না। এরাই ষড়যন্ত্র করল!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এভাবে বেঈমানী করে, মোনাফেকি করে, তারা কিন্তু এভাবে থাকতে পারে না। মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করে। তাদের মধ্যে অবশ্যই যোগসাজশ ছিল।’

জিয়ার পারিবারিক সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান প্রতি সপ্তাহে একদিন তার স্ত্রীকে (খালেদা জিয়া) নিয়ে ওই ৩২ নম্বরের বাড়িতে যেত। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দুয়ার সবার জন্য অবারিত ছিল, যার সুযোগ ষড়যন্ত্রকারীরা নিয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের যাওয়াটা আন্তরিকতা না। চক্রান্ত করাটাই ছিল তাদের লক্ষ্য; সেটা বোধ হয় আমরা বুঝতে পারি নাই। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়, আব্বা যখন দেখেছেন, তাকে গুলি করছে, তারই দেশের লোক, তার হাতে গড়া সেনাবাহিনীর সদস্য, তার হাতে গড়া মানুষ, জানি না তার মনে কী প্রশ্ন জেগেছিল।’

ভারতে নির্বাসিত জীবনের কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভাবলাম দেশের কাছে যাই। কখনও শুনি, মা বেঁচে আছে। কখনও শুনি, রাসেল বেঁচে আছে। একেক সময় একেক খবর পেতাম। ওই আশা নিয়ে চলে আসলাম। কেউ বেঁচে থাকলে ঠিক পাব। ২৪ অগাস্ট দিল্লী পৌঁছলাম। মিসেস গান্ধী (ইন্দিরা গান্ধী) আমাদের ডাকলেন। ওনার কাছ থেকে শুনলাম, কেউ বেঁচে নেই। হুমায়ুন রশীদ সাহেব আগে বলেছিলেন। কিন্তু, আমি রেহানাকে বলতে পারি নাই। কারণ, ওর মনে একটা আশা ছিল, কেউ না কেউ বেঁচে থাকবে। দিল্লীতে মিসেস গান্ধী থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ওয়াজেদ সাহেবকে (এম ওয়াজেদ মিয়া) এটমিক এনার্জিতে কাজের ব্যবস্থা করে দিলেন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘এটা কী কষ্টের, কত যন্ত্রণার কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। অর্থের কারণে ১৯৭৭ সালে বোন শেখ রেহানার বিয়েতে লন্ডনে যেতে না পারার বেদনা তুলে ধরে তিনি বলেন, দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে যাব, অত টাকা ছিল না। আর, কোথায় থাকব? ওর (শেখ রেহানা) যখন বাচ্চা হবে, আমি মিসেস গান্ধীকে গিয়ে বললাম, আমি যেতে চাই রেহানার কাছে। উনি ব্যবস্থা করে দিলেন। টিকেটের ব্যবস্থা করে দিলেন। থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। ৮০ সালের শেষে দিল্লিতে ফিরে আসি। টাকাও ছিল না। আর, কার কাছে হাত পাতা.. ভালো লাগত না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় সংগঠন করার অভিজ্ঞতাও আমার ছিলে না। আমার চলার পথ অত সহজ ছিল না।’

দল এবং দলের বাইরে নানা প্রতিকূলতার কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিরা বহাল তবিয়তে বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত। স্বাধীনতার বিরোধীরা তখন বহাল তবিয়তে। তারাই ক্ষমতার মালিক। যে পরিবারকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো, সে পরিবারের একজন এসে রাজনীতি করবে। সেটা এত সহজ ছিল না, প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতা ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নতুন নেতৃত্ব খোঁজা দরকার। জীবন-মৃত্যু আমি পরোয়া করি না। মৃত্যু আমি সামনে থেকে দেখেছি। আমি ভয় পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, আমার আব্বা আমাকে ছায়ার মতো দেখে রাখেন। আর, উপরে আল্লাহর ছায়া আমি পাই। মেয়ের হাত ধরে দুটো স্যুটকেস নিয়ে চলে আসি। আমি মনে করেছি, আমাকে যেতে হবে, কিছু করতে হবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মে ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়