ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এতদিন জাতি কেঁদেছে, এবার আপনাদের কাঁদতে হবে

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১২, ২২ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এতদিন জাতি কেঁদেছে, এবার আপনাদের কাঁদতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আপনার দলের শীর্ষ নেতারা জড়িত। কান্নাকাটির কী দেখেছেন? কান্নাকাটি এতদিন জাতি করেছে, এবার আপনাদের কাঁদতে হবে, অপেক্ষা করুন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গণি রোডের বিদ্যুৎ ভবনের মুক্তি হলে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ (সিবিএ) আলোচনা সভায় আয়োজন করে।

মাহবুব উল আলম হানিফ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু মূল চক্রান্তকারী হিসেবে জিয়াউর রহমানকে বিচারের আওতায় আনতে পারিনি। আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তিদের বিচার হয় না। তাই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

তাই পুনরায় তদন্ত কমিশন গঠন করে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত ছিল, তা জাতির সামনে উন্মোচন করার পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন তিনি।

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামালার নৃশংসতা তুলে ধরে ঘটনায় জড়িত এবং চক্রান্তকারীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন দণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন।

‘১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট’ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, গতকাল তিনি বললেন, ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট’ এরকম ঘটনা হতে পারে। এটা নিয়ে তো এতদিন কান্নাকাটির কী আছে? অবাক হয়ে যাই, এরা রাজনীতি, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলে কী করে।

হানিফ আরো বলেন, ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই এরা বারবার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাও বিএনপি-জামায়াত সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল। নিজেদের অপরাধকে ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য এখন বলছেন, কান্নাকাটির কিছু নাই। আপনারা কান্নাকাটির কী দেখেছেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত হয়েছে, এখন বিচার চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আপনার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জড়িত। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মুফতি হান্নান সাক্ষ্য দিয়েছেন। আপনাদের নেতা তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে, একাধিকবার হত্যাকারীদের নিয়ে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল।

‘এখন ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বলছেন, এটাকে নিয়ে এত কান্নাকাটির করার কী আছে?’ উল্লেখ করে হানিফ মোশাররফের উদ্দেশে বলেন, কান্নাকাটি এতদিন জাতি করেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্য কেঁদেছে। এরপরে আপনাদের কাঁদতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরে। আপনি কান্নাকাটির কী দেখেছেন? সামনে কান্নাকাটির জন্য অপেক্ষা করুন!

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিচার বিভাগ, সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে চলমান বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলে বিচারপতির উদ্দেশে হানিফ বলেন, ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। এখন আদালতের মাধ্যমে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সরকারকে আপনি হুমকি দিচ্ছেন। এটা স্বাধীন বাংলাদেশ, পাকিস্তান নয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি। বাঙালি বীরের জাতি আমাদের হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। দেশের জনগণ যদি একবার জেগে যায়, তাহলে অনেকে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।

তিনি আরো বলেন, যদি বিচারকের চেয়ারে বসে বারবার দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটেন, শপথ ভঙ্গ করেন, তাহলে আপনার আর ওই চেয়ারে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। জনগণও আর ওই চেয়ারে বেশিদিন আপনাকে দেখতে চায় না। সাংবিধানিক পদের শপথ ভঙ্গ করে বারবার রাজনীতির বিরুদ্ধে একের পর এক কথা বলবেন, এটা বাংলাদেশের জনগণ বারবার বরদাশত করবে না।

বিএনপি অবৈধ হলে আওয়ামী লীগও দল হিসেবে অবৈধ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, আমি তাকে অজ্ঞ বলব, না কী বলব, এটা ভাষায় আসছে না। মির্জা ফখরুল সাহেব, আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৭৯ সালে নয়, আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আওয়ামী লীগ ওই সময় নবায়ন করেছিল, নির্বাচন কমিশনের কাছে নবায়ন হলো রুটিন ওয়ার্ক। এটা ধরে যদি আপনি বলেন, তাহলে এটা আপনার অজ্ঞতা ও মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

আয়োজক সংগঠনে সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চোধুরী নওফেল, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৭/নৃপেন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়