ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘ম্যাসেজ দিলাম, নৌকা চলবে’

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ম্যাসেজ দিলাম, নৌকা চলবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেমিফাইনাল এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে ফাইনাল খেলা হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের উদ্যোগে দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালক বক্তা হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করার সময় মঞ্চের সামনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা মহানগর দক্ষিণের নেতাদের নাম ধরে স্লোগান দিতে শুরু করেন। ওবায়দুল কাদেরও পাল্টা স্লোগান দেন। তিনি একাধারে ‘নৌকা নৌকা নৌকা, শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা’ বলে স্লোগান দেন। এরপর স্লোগান থামিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ম্যাসেজ দিয়ে দিলাম, চলবে। নৌকা চলবে। সামনে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেমিফাইনাল। তারপর ২০১৮ সালে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা হবে।

দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে হবে। বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপি এখনো একটা এলোমেলো পার্টি। এখনো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। বিএনপি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য নির্বাচনী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অনেক পেছনে।

নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ছাড়া বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শতকরা ৯৫টি নির্বাচনে বিজয় লাভ করেছে, এ দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের এই বিজয় প্রমাণ করে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে গ্রামের মানুষ এখন খুশি। গ্রামের মানুষ আরেকবার শেখ হাসিনার সরকার চায়। এটা সারা বাংলার সবার মুখে মুখে।

পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান, ছয় মাসের মধ্যে মেট্রোরেলও দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা উন্নয়ন দেখাব। বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই দেখানোর নেই। তাদের কোনো উন্নয়ন নেই। জনগণের ভোট তারা কীভাবে ক্যাচ করবে?

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি, বিএনপির চেয়ে বেটার আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা প্রমাণ করেছি, খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা অনেক উন্নয়ন এনেছেন বাংলাদেশের জন্য। খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা সৎ এবং সাহসী নেত্রী। তিনি দেশকে কিছু দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার চেয়ে শেখ হাসিনা জনগণের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। এটা আমাদের অ্যাসেট। ইটস অ্যা বিগ অ্যাসেট ফর আস।

তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব পৃথিবীতে কালেভদ্রে আসে। আজকে বাংলাদেশ সৌভাগ্যবান।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এত ষড়যন্ত্র, এত সংকট- পরপর তিন বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। তারপরও আমাদের নেত্রী সীমান্ত বন্ধ করে দেননি। মানবিক কারণে সারা দুনিয়ায় তিনি আজকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, বাংলাদেশের একটি দল ছাড়া। কারণ, তারা প্রশংসা করতে জানে না।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের কাছে আর কিছু চাই না। ঐক্য চাই। সবাই হাত তুলুন। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। কারো সাথে কোনো গ্যাপ থাকলে আমি সিটির নেতাদের বলব, অবিলম্বে মীমাংসা করে ফেলুন। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকতে পারবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে আগামী নির্বাচনে আমাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমরা পরিষ্কার বিজয়ের লক্ষ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছি দুর্বার গতিতে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের হবে। আমরা বিজয়ী হবো।

বুধবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামীকাল নির্বাচন কমিশনের সাথে আমাদের সংলাপ। নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ করার আগেই সংলাপের বিষয়বস্তু বা প্রস্তাব জানিয়ে দিলাম, তাহলে তো আমি দায়িত্বশীল নেতা নই, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন জেনারেল সেক্রেটারি। এটা আমি বলতে পারি না। সংলাপ হবে। সংলাপের পর প্রেস ব্রিফিং হবে। যার যা জানার আছে, জানতে পারবেন। লিখিতটাও পাবেন। অলিখিত কিছু জানতে চাইলেও সেখানে জবাব দেব।

বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির তো এখন খুশি খুশি ভাব। এই খুশি যে কয়দিন থাকে। সীমান্তে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা স্রোত, বিএনপিও এখন খুশির স্রোতে। এই খুশির স্রোত বার বার আসে, বারে বারে ভাটা পড়ে যায়। অচিরেই ভাটা পড়ে যাবে। যা দপ করে জ্বলে খপ করে নিভে যায়। বিএনপি এ পর্যন্ত সব ইস্যুতেই দেখলাম, দপ করে জ্বলছে খপ করে নিভে যাচ্ছে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগে জোয়ার এসেছে, জনতার জোয়ার। এই জনতার জোয়ারের সামনে কোনো ষড়যন্ত্র টিকবে না। ইনশাআল্লাহ, সব ষড়যন্ত্রকে পায়ে দলে আমরা এগিয়ে যাব। আগামী নির্বাচন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিজয় মাসে। ইনলাআশ্লাহ, আরেকটি বিজয় আমরা ছিনিয়ে আনব।

অনুষ্ঠান মঞ্চে শৃঙ্খলা আনতে মহানগর কমিটির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এতো বলি তারপরও আপনাদের মধ্যে শৃঙ্খলা আসে না। দলটায় কবে শৃঙ্খলা আসবে। এই যে এতগুলো নেতা, কার কী পরিচয়, কিন্তু সব এসে স্টেজে। চেহারা দেখাচ্ছে।

এ সময় মঞ্চের সামনে উপবিষ্ট নেতা-কর্মীদের দেখিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এদের চেহারা দেখিয়ে লাভ কী? সামনে যারা আছে, তারা আমাদের কর্মী। দলটাকে শৃঙ্খলায় আনেন, শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে হবে। ফ্রি স্টাইল চলবে না। মনে যেন থাকে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।

যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকতার হোসেন এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মামনুর রশীদ শুভ্র।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৭/নৃপেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়