ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে ষড়যন্ত্র করছে সরকার’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২১ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে ষড়যন্ত্র করছে সরকার’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার লোকজন দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনপ্রিয়তার গোপন জরিপ করেছে। সেখানে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে আওয়ামী লীগ ৪০টি আসনও পাবে না বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

‘সেই থেকে সরকার ভীত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যাতে এদেরকে বাদ নিয়ে একটি পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে পারে। কিন্তু এদেশের মানুষ কোনোদিনই দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের মতো পাতানো নাটক মেনে নেবে না।’

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে বলেও এ সময় সরকারকে সতর্ক করেন তিনি।

‘এয়ারপোর্ট, চট্টগ্রাম সফর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় মানুষের স্রোত নেমেছে। খালেদা জিয়ার জন্য মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে। মানুষের যে স্রোত শুরু হয়েছে, শত বাধা দিয়েও তা দাবিয়ে রাখা যাবে না। এই স্রোতেই বিএনপিকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে। সুতরাং নিরপেক্ষ নির্বাচন না হয়ে ’১৪ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন হলে মানুষ কোনোদিনই মানবে না। তারা রাস্তায় নেমে আসবে’, বলেন খন্দকার মোশাররফ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ৫৩তম জন্মদিন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সমানভাবে সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে-দাবি করে মোশাররফ হোসেন বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সংবিধানের নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে তারা (আওয়ামী লীগ) দেশের জনগণ ও বিদেশিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘উপযুক্ত সময়ে’ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রুপরেখা দেবেন বলে জানান দলটির এই নীতি নির্ধারক। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি আর বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

সরকার ক্ষমতায় থাকতে স্বৈরাচারী  অবস্থান নিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির প্রবীণ এই নেতা বলেন, দেশের মানুষ এখন খারাপ সময়ের সন্ধিক্ষণে। মানুষ এখন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কারণ খুন-গুম-রাহাজানি, দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

সরকার জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করতে দলটির নেতা-কর্মীদের ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করছে বলেও এ সময় অভিযোগ করেন তিনি।

তারেক রহমান দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এক-এগারোতে তারেক রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত এখনো চলছে। সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একর পর এক মামলা আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েই যাচ্ছে। তারেক যাতে দেশে ফিরে আসতে না পারে সেজন্য এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

এ সময় দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এক-এগারোতে একইভাবে দুর্নীতির  মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা ছিল। তারা (আওয়ামী লীগ) সেগুলো তুলে নিয়েছে। আর খালেদা জিয়াকে প্রতি সপ্তাহেই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি ৫০টির বেশি আসন পায় তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের আগে অবশ্যই নির্বাহী ক্ষমতা ছাড়তে হবে দাবি জানান তিনি।

নতুন ‘সম্প্রচার আইন-২০১৭’ এর সমালোচনা করে সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই আইন মুক্ত সমালোচনাকে টেনে নিয়ে কারাগারে ফেলবে। বিএনপির বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হবে। এটি চূড়ান্ত বাকশালের বহিঃপ্রকাশ।

নতুন এই আইনে মিথ্যা, অসত্য ও অশ্লীল বক্তব্যের জন্য পাঁচ কোটি টাকা ও তিন বছরের জেলের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি তাই হয় তাহলে আগে তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাজা হতে হবে। কারণ তারা অব্যাহতভাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য রেখে যাচ্ছে।’

যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের সভাপতিত্বে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিব বাদরু প্রমুখ।     



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ নভেম্বর ২০১৭/রেজা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়