ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধিতে হতাশ বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধিতে হতাশ বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের পর হতাশ হয়েছে বিএনপি।

বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ‘আবারো প্রশাসনের হাতে গেলো’ মন্তব্য করে বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটস প্রতিনিধি নির্বাচন-২০১৭ উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠা‌নে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আঠারো বছর মাসদার হোসেন মামলার পর বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ হয়েছিল। বিচার বিভাগ নিয়ে আমরা বহু কথা বলেছি। এমনকি সংসদে আইন পাস হয়েছে। কিন্তু সেই বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ আবারো প্রশাসনের হাতে নিয়ে গেলো এবং কোনোভাবেই তা আটকানো গেল না।’

‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাকে মুক্ত করতে গিয়েই প্রধান বিচারপতি (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) তার পদ হারালেন ও দেশ ত্যাগ করলেন। আর যখনই আমরা কোনো কথা বলতে যাই এবং প্রতিবাদ করি তখন আমাদের ওপর মামলা দেওয়া হয়।’

রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটস প্রতিনিধি নির্বাচনের জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই ধরনের নির্বাচনে বিএনপি আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবেই অংশ নেয়। কারণ গণতন্ত্রের মধ্যেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এই গণতন্ত্রের আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বেরিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তচিন্তা ও অধিকার রক্ষার আন্দোলন বের করতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, যতক্ষণ না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো আন্দোলন শুরু হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই আন্দোলন লক্ষ্যে পৌঁছায় না। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট নির্বাচনকে শুধু সিনেট নির্বাচন হিসেবে না নিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকে মুক্ত চিন্তার অধিকারকে মুক্ত করার নির্বাচন হিসেবে নিন।’

অত্যন্ত কঠিন সময়ে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন হতে যাচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সময়টা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচাইতে কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়। আজকে গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে।

গণতন্ত্রের নামে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে আমাদের শিক্ষক সমাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ছাত্রসমাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অথবা তাদেরকে একঘরে করে রাখা হচ্ছে। তাদের কোনো রকম কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি বিশেষ দলের প্রাধান্য বিস্তার করছে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই চেতনাগুলো আজকে ধ্বংস হতে চলেছে। যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা মুক্তচিন্তার পাঠপিঠ বলে মনে করি, এই দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার বলে মনে করি; সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন পুরোপুরিভাবে একটি একদলীয় চিন্তাভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের যে, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পরে আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। এ ধরনের কলঙ্কময় একটি পরিবেশের মধ্যে আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে নির্বাচন করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না নির্বাচনের ফল কী হবে? তবে এটুকু জানি যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বাংলাদেশের মুক্তিকামী ও গণতন্ত্র চিন্তার মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এখানে জয়পরাজয় প্রধান লক্ষ্য হবে না। লক্ষ্য হবে আমাদের লড়াই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

দেশের চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন দেখি দেশের স্বার্থ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয় কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ আসে না, তখন খুবই দুঃখ হয়, কষ্ট লাগে। যখন দেখি ছাত্র-ছাত্রীরা নির্মমভাবে নিহত হয়, অন্যায়ের কাছে পরাজিত হয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ আসে না। অধিকার আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সোচ্চার কণ্ঠ ভেসে আসে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ভূমিকা সেটা ফিরে চাই। বিশেষ করে গণআন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে নেতৃত্ব দিয়েছিল সেটা ফিরে চাই। আমরা ফিরে চাই আবারো বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে দাঁড়াবে এবং পথিকৃৎ হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’

এর আগে সিনেট নির্বাচনের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল নোমানের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন খান। লিখিত বক্তব্যে আক্তার হোসেন প্যানেলের পক্ষে সাতটি এজেন্ডা তুলে ধরেন।

এগুলো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও মান মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা, একাডেমিক কার্যক্রমের দৃশ্যমান উন্নয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সিনেটকে সম্পৃক্ত, কেবল বাজেট অনুমোদন ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করার মধ্যেই সিনেটকে সীমাবদ্ধ না করা, শিক্ষক নিয়োগ মেধার মূল্যায়নকেই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানজট সমস্যার সমাধান করা ও নিরাপত্তা জোরদার, দলমত নির্বিশেষে সব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।

আক্তার হোসেন ব‌লেন, ‘আগামী ৬ ও ১৩ জানুয়া‌রি ২০১৮ ঢাকার বাইরের কেন্দ্র এবং ২০ জানুয়া‌রি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‌কেন্দ্রগুলোতে দে‌শের দ্বিতীয় পার্লা‌মেন্ট হি‌সে‌বে প‌রি‌চিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল‌য় সি‌নে‌টের ২৫ জন রে‌জিস্টার্ড গ্র্যাজু‌য়েটস প্রতি‌নি‌ধি নির্বাচন করবে। এ নির্বাচ‌নে মু‌ক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্ব‌ভৌমত্ব, ধর্মীয় মূ‌ল্যে‌বোধ ও সাম্প্রদা‌য়িক সম্প্রী‌তি এবং উদার‌নৈ‌তিক গণতা‌ন্ত্রিক চেতনার প্রতীক জাতীয়তাবাদী প‌রিষদ ম‌নোনীত প্রার্থীগণ অংশগ্রহণ কর‌ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৫ জন রে‌জিস্টার্ড গ্র্যাজু‌য়েটস প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী পরিষদের প্রার্থীরা হলেন- ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. উম্মে কুলসুম রওজাতুল রোম্মান, এ কে এম ফজলুল হক মিলন, এ টি এম আবদুল বারী ড্যানী, এ বি এম ফজলুর করিম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কে এম আমিরুজ্জামান শিমুল, ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ড. জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, ডা. প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, ডা. মোহাম্মদ রফিকুল কবির লাবু, মো. আশরাফুল হক, অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ড. মো. শরীফুল ইসলাম দুলু, মো. সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, মো. সেলিমুজ্জামান মোল্যা সেলিম, শওকত মাহমুদ, ড. সদরুল আমিন।

প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, সিনেট নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, ওবায়দুল ইসলাম, ড. মামুন আহমেদ, ড. মোর্শেদ হোসেন, ড্যাবের সভাপতি এম এ আজিজ, ছাত্রদল নেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/রেজা/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়