ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পুরাণে নয়, বাস্তবেও ‘রাম সেতু’ আছে!

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরাণে নয়, বাস্তবেও ‘রাম সেতু’ আছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অবিশ্বাস্য মনে হলেও ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংযোগকারী রাম সেতুর অস্তিত্ব শুধু পৌরাণিক গল্পেই নয়, বাস্তবেও থাকতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সায়েন্স চ্যানেলের এক অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়েছে।

পৌরাণিক গল্পে রাম সেতুকে ‘আদম সেতু’-ও বলা হয়। ওই চ্যানেলের অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়েছে, ‘সেতুটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়নি, মানুষই হয়তো এটি তৈরি করেছিল।’

‘ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সংযোগকারী স্থলসেতু নিয়ে সনাতন পুরাকাহিনি কি সত্যি?’ সায়েন্স চ্যানেলের অনুষ্ঠানে জুড়ে দেওয়া বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের নথিপত্র সেই সত্যতার দিকে ইঙ্গিত করছে।

অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) কিছু স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পাথরের কাঠামো পেয়েছেন। চিত্রে বালুতটের ওপর পাথরগুলো দেখা যাচ্ছে। অগভীর পানিতে এমন বালুতট তৈরি হয়। মাটির সঙ্গে মিশে স্তূপাকৃতি ধারণ করতে পারে বালি। তিনি আরো বলেছেন, বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ওই পাথরগুলো বালির চেয়ে বেশি পুরোনো।

নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, পাথরগুলো প্রায় ৭ হাজার বছরের পুরোনো এবং বালুতটের বয়স প্রায় ৪ হাজার বছর।

কিন্তু ভূতাত্ত্বিক ড. অ্যালান লেস্টার মনে করেন, পাথরগুলো দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে আনা হয়েছিল এবং ডুবন্ত দ্বীপের মতো বালির স্তূপের ওপর দিয়ে বসানো হয়েছিল।

ভিডিও দেখে নিলে এ বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে

রাম সেতু নিয়ে পৌরাণিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস
ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাঝে সমুদ্রের ওপর তৈরী পথের নকশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলে আসছে। সেখানে সেতুর মতো অংশটিকে 'রাম সেতু' বলে সম্বোধন করা হয়। ভারতের তামিলনাড়ুর পাম্বান দ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের মাঝে এর অবস্থান। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এটি চুনাপাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে এটি গড়ে উঠেনি, এটি মানুষের তৈরী।

কিন্তু হিন্দু পুরাণে এর অন্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রামায়ণে বলা হয়েছে, ভগবান শ্রীরামচন্দ্র রাবণ রাজার হাত থেকে সীতা মাতাকে লঙ্কা থেকে ছাড়িয়ে আনতে এই সেতু তৈরি করেছিলেন। রাম সেতু নিয়ে আরো যেসব গল্প প্রচলিত রয়েছে, তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক-

পৌরাণিক মহাকাব্য রামায়ণে যা উল্লেখ আছে
হাজার হাজার বছর আগের কথা (ত্রেতা যুগ)। রাক্ষসরাজ রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যান এবং নিজ রাজ্য লক্ষায় বন্দি করে রাখেন। অতঃপর সীতাপতি ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা আক্রমণের উদ্দেশ্যে ভ্রাতা লক্ষণ, ভক্ত হনুমান এবং এক বিশাল বানর বাহিনী নিয়ে সমুদ্রতীরে এসে উপস্থিত হন। কীভাবে তিনি সাগর পাড়ি দিয়ে লঙ্কায় যাবেন? তখন ১ কোটি বানরসেনা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীরামের পবিত্র নাম পাথরে লিখে সমুদ্র পথে একটি পাথরের সেতু তৈরি করেছিলেন। শ্রী রাম নাম খচিত সেই পাথরগুলো অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে জলে নিক্ষেপের পর নিমজ্জিত না হয়ে ভেসে উঠেছিল।

ভারতের দক্ষিণ উপকূলকে লঙ্কার (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) সঙ্গে যুক্ত করা হয় এই সেতুর মাধ্যমে। এই সেতু দিয়ে শ্রীরাম তার বানর বাহিনী নিয়ে লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধার করেন।

বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, বাস্তবে এই সেতু ছিল এবং এখনো আছে। কিন্তু এটি কি নিছক ধর্মবিশ্বাস নাকি এর কনো বাস্তবিক ভিত্তি আছে? ২০১২ সালে নাসা তাদের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের ছবির সাহায্যে রামায়ণে উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট সেই স্থানেই রাম সেতু চিহ্নিত করেছে বলে জানায়। তারা আরো জানায়, সেতুর দৈর্ঘ ৩০ কিলোমিটার, যা বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরম দ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কার তালাই মানার পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই সেতুতে হাঁটা যেত!
দাবি করা হয়, ১৪৭০ সাল পর্যন্ত রাম সেতুতে চলাচল করা যেত। তখনো এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপরে ছিল। কিন্তু ওই বছর শক্তিশালী সাইক্লোনের তাণ্ডবে ধ্বংস হয়ে যায় সেটি। তবে এর সত্যাসত্য নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্কের কোনো সুরাহা হয়নি।

একাধিক নাম
রাম সেতুর একাধিক নাম রয়েছে। যেমন আদম ব্রিজ, নালা সেতু, সেতুবন্ধ ইত্যাদি।

পক প্রণালির রিফ
কোরাল রিফ জমাট বেঁধে প্রাকৃতিক উপায়ে এই ব্রিজ তৈরি হয়েছে বলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন। ভারতের পাম্বান দ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপ পর্যন্ত এই কোরাল রিফ বিস্তৃত।

জাহাজ চলাচল
রাম সেতু এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে গেলেও এর ওপর দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে পারে না। সরাসরি না গিয়ে ঘুরে অন্য পথে ভারতীয় জাহাজগুলো শ্রীলঙ্কায় যায়।

বিজ্ঞান ও রহস্য
মহাসাগর গবেষণা বা ওশিয়ানোগ্রাফি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রামসেতু ৭ হাজার বছরের পুরনো। অদ্ভুতভাবে সেই সময়ই রামায়ণে বর্ণিত ঘটনাগুলো ঘটেছে।

ভাসমান পাথর
রাম সেতু তৈরি হয়েছিল ভাসমান পাথর দিয়ে। রামায়ণে তেমনই বর্ণনা পাওয়া যায়। আশ্চর্য হলেও এখনো এমন পাথর তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন ও ওয়ান ইন্ডিয়া বেঙ্গলি অনলাইন

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়