ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

একটি বাড়ি এবং জাতির পুনরুত্থানের ইতিহাস

জব্বার আল নাঈম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একটি বাড়ি এবং জাতির পুনরুত্থানের ইতিহাস

(গ্রন্থমেলা থেকে কেনা বইয়ের পাঠ-অনুভূতি)

জব্বার আল নাঈম: বাঙালির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এখনও কোথাও রচিত বা লিখিত হয়নি, হয়ে ওঠেনি। এই না-হওয়ার কারণ ব্যক্তি জীবনের অস্থিরতা, সামাজিক-মানসিক চাপ সহ্য করার অক্ষমতা কিংবা শাষকের রক্তচক্ষুর ভয়, পক্ষ-বিপক্ষের মন্তব্য। আমরা এখনও কঠিন ও বৈপরীত্যকে সহজভাবে নিতে শিখিনি। এই না-নেয়াটার কারণও অর্থনৈতিক দৈন্য, হীনমন্যতা, শিক্ষাগত অযোগ্যতা। প্রত্যেক জাতির সামনে প্রত্যেক সেক্টরে একজন আইডল থাকে। তাদের অতিক্রম করার অনুপ্রেরণা নিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম সামনের দিকে চোখ রাখে।

থাকে জাতীয় নেতা। যাঁরা জাতির ক্রান্তিকালে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান সকল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। অভয়ের বাণী শোনান। আমরা যাঁর হাত ধরে পেয়েছি স্বাধীনতা, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি সাতান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ভূ-খণ্ডে, পেয়েছি ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন দেশ, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কালের এই মহানায়কের রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। এই বাড়িতে বসে পরিকল্পনা হয়েছে দেশ রক্ষার। মানুষ রক্ষার।

এই সময়ের কথাসাহিত্যিক শামস সাইদ। দীর্ঘ পরিসরের ব্যাটসম্যান। যে কোনো ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তিনি রাখেন। হাফ সেঞ্চুরি থেকে সেঞ্চুরি, তারপর সেটি এক সময় রূপ নেয় ডবল সেঞ্চুরিতে। তারপরও শামস সাইদ থেমে যান না। তারই প্রমাণ তিনি দিলেন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি নিয়ে মহাকাব্যিক এক উপন্যাস লিখে। এই ঐতিহাসিক আখ্যান পাঠে বোঝা যায় বাংলাদেশের গোরাপত্তনের আসল চিত্র।

কীভাবে ছোট একটি দেশ হামাগুঁড়ি দিয়ে ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সেই হামাগুঁড়ির দিনগুলোতে প্রথম সারিতে ছিলেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ আরো অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যাঁরা বাংলাদেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর সহযোগী ও অনুজ অনেক নেতার জীবন চরিত্র ও রাজনৈতিক ইতিহাস শামস সাইদ তার এই উপন্যাসে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এলেই  শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারিত হবে। এই নামের সঙ্গে আসবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। যেখানে অনেক অজানা অধ্যায় লিপিবদ্ধ আছে। একই শিরোনামে বইটির আরো ৫ খণ্ড ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে। আমি হলফ করে বলতে পারি, পরবর্তী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, পূর্বমুক্তিযুদ্ধ, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা কিংবা কোনো স্ক্রিপ্ট করতে চাইলে এই বইয়ের আশ্রয় নেবে। নিতে বাধ্য হবে।

শামস সাইদ বাঙালি পাঠকদের উপন্যাস পড়াতে বাধ্য করবেন। রুচির পরিবর্তন করবেন। প্রবহমান স্রোতের মতো পাঠকদের স্টলের সামনে লাইনে দাঁড় করাবেন- এমন বিশ্বাস কখনও করি না। শামস সাইদ এমন লেখক যে, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবেন ও দেখাবেন। তিনি সেটা করে দেখাতে পারবেন বলে আমার একান্ত বিশ্বাস। কারণ গত বইমেলায় অভিজিৎ ও দীপন হত্যা নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ক্রশবিদ্ধ কলম’। সেটি প্রকাশ করেছে বেহুলা বাংলা। এ বছর বাবুই থেকে ছোটদের জন্য আসছে তারই আরেকটি বই ‘কানাই দ্য গ্রেট’। এই বইটিও আমার পড়া। শামস সাইদ আগামীদিনগুলোতে কথাসাহিত্য দিয়ে ভালো একটি অবস্থানে যাবেন, এটা ভ্রান্ত ধারণা নয়। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর দিয়েই তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন।

অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এই তরুণ বয়সে ঢাউস আকারের বই লেখা সহজ কথা নয়। সাহিত্যের প্রতি, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর বাড়ি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের প্রতি কতটা নিবেদন থাকলে এমন দুঃসাহসী কাজে হাত দেয়ার সাহস দেখাতে পারেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাহিত্যের প্রসঙ্গ এলে শামস প্রায়ই বলেন, আমি কাজ করেই দেখাব। জবাব দেব না।

শামস সাইদ, আপনি কাজ করলেই জবাব পেয়ে যাই আমরা। পাঠকের উদ্দেশ্যে বলছি, এই বইটিতে উপন্যাস পড়ার আমেজ পাবেন। সঙ্গে জেনে যাবেন একটি বাড়িকে ঘিরে একটি জাতির পুনরুত্থানের ইতিহাস। যা কেবল শামস সাইদের পক্ষেই তুলে ধরা সম্ভব।

বইটি প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়