ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিএনপির পাল্টা শোডাউন জাপার

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিএনপির পাল্টা শোডাউন জাপার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদেক : নির্বাচনের আগে যৌথসভার নামে ঢাকায় শোডাউন করেছে জাতীয় পার্টি।

শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের চত্বরে দলের যৌথসভার নামে এ শোডাউন করা হয়।

জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, কিছুদিন আগে বিএনপি কর্মসূচির নামে রাজধানীতে শোডাউন করে। বিরোধী দল হয়ে কিছুই করবে না জাপা, তা তো হতে পারে না। তাই বিএনপির পাল্টা শোডাউন করতেই এই যৌথসভার আয়োজন করা হয়েছে। শোডাউনের মাধ্যমে শুধু বিএনপিকে নয়, ক্ষমতাসীন দলকেও নিজের শক্তি প্রদর্শন করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, এমনটাই মনে করেন তার দলের নেতারা।

যৌথসভায় শোডাউন করতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী নিয়ে আসা হয়েছে। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে যৌথসভা পরিণত হয় বড় সমাবেশে। জনসভার মতোই নেতাকর্মীরা ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে মিছিল নিয়ে বাদ্য-বাজনা সহকারে যৌথসভায় যোগ দেন। সকাল ৮টার মধ্যে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের চত্বর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে জায়গা না পেয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, মৎস্যভবন পর্যন্ত রাস্তায়। এ সময় তাদের সরিয়ে যানচলাচলের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। দুপুরে রাস্তায় মিছিল সরাতে পুলিশকে লাটিচার্জ করতে হয়েছে।

যৌথসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন ‍মুহম্মদ এরশাদ যেমন শোডাউন করেছেন, ঠিক তেমনই নির্বাচনী মনোনয়ন পেতে তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নেতারাও শোডাউন করেছেন। বাদ্য-বাজনা নিয়ে নেতাকর্মীর মিছিল সহকারে যোগ দিয়েছেন বর্তমান এমপি ও দলের মনোয়নপ্রত্যাশীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। তবে অনেক নেতা মিছিল নিয়ে আসতে না পারলেও যৌথসভার আশপাশে বড় বড় পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে দলীয় চেয়ারম্যানের নজরে আসার চেষ্টা করেছেন।
 


মূলত রাজধানীর উত্তর -দক্ষিণ ও ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে যৌথসভা রূপ নেয় জনসমাবেশে।

বর্তমান সংসদ সদস্যেদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিল নিয়ে যৌথসভায় এসেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। বেলা ১১টার দিকে তার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর-কদমতলি থেকে জাপা নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, কাওসার আহমেদ ও ইব্রাহীম মোল্লার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইস্টিটিটিউটের সামনে আসলে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এই সময় সড়কে যানচলাচল কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

পটুয়াখালীর দুমকি ও বাকেরগঞ্জ থেকে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও  তার স্ত্রী নাসরিন হাওলাদার রত্না এমপির অনুগত নেতাকর্মীরা বড় মিছিল নিয়ে সকালেই যৌথসভায় যোগ দেন। দুপুরের দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে সংগঠনের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী ও সেক্রেটারি শকিফুল ইসলাম সেস্টুর নেতৃত্বে বড় মিছিল নিয়ে যৌথসভায় যোগদান দেন নেতাকর্মীরা।

জাপার প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভিন ওসমানের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মিছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে আলাদা মিছিল নিয়ে আসনে সেলিম ওসমান এমপি ও লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি। ঢাকা-৫ আসন থেকে মিছিল নিয়ে আসেন ‍উক্ত আসনে জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মানিকগঞ্জ থেকে জহিরুল আলম রুবেল, দোহার থেকে সালমা ইসলাম, সিলেট থেকে এহয়্যা চৌধুরী এমপি, বাড্ডা এলাকা থেকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে নেতাকর্মীর মিছিল নিয়ে সাবেক মেয়র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, আলাদা মিছিল নিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ ও ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আলম মাস্টার, ময়মনসিংহ থেকে ফখরুল ইমাম এমপি, ফেনী থেকে মিছিল নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার ও নাজমা আখতার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মিছিল নিয়ে জিয়াউল হক মৃধা ও রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও আসন থেকে মহিলা পার্টির সেক্রেটারি অনন্যা হোসেন মৌসুমী, চাঁদপুর থেকে মিছিল নিয়ে এমরান মিয়া, রংপুর থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, গাইবান্ধা থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, টাঙ্গাইল থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ সিদ্দিকী, মহিলা পার্টির মনোয়ারা তাহের মানু ও মিনি খানের আলাদা মিছিল এবং পিরোজপুর থেকে সেকান্দার আলী মুকুলের মিছিল যৌথসভায় নজর কাড়ে।

মিছিল নিয়ে আসেন জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ মো. সিরাজুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সহিদুর রহমান টেপার নেতৃত্বে জাতীয় কৃষক পার্টি, দলের যুগ্ম মহাসচিব আলমগীর সিকদার লোটনের নেতৃত্বে যুবসংহতি, বেলাল হোসেন, মাহবুবুর রহমান কামাল, নুরুল হুদা সুমনের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, আশরাফুজ্জামান ও শান্তর নেতৃত্বে শ্রমিক পার্টি, মোড়ল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজসহ দলের অঙ্গ সংগঠনগুলো।

এছাড়া, যৌথসভায় দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, এম এম মান্নান, গোলাম কিবরিয়া টিপু, জাপার কেন্দ্রীয় নেত্রী আসমা আশরাফ, মহিলা পার্টির তালুকদার রুজি সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট শাহিদা পারভিন, আবুল হোসেন মিয়া, উপদেষ্টা কাজী মামুন, মোস্তফা আল মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জের জয়নাল আবেদিন, নোয়াখালীর বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠুর বড় বড় পোস্টার ও ব্যানার চোখে পড়ে।

নেতাকর্মী নিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গীত :
প্রতিবারের মতো এবারও যৌথসভায় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় সঙ্গীত গেয়ে শোনান বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। এ সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে ঠোঁট মেলান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রওশন এরশাদ বলেন, তোমরা আমার সঙ্গে বলো, নতুন বাংলাদেশ গড়ব মোরা, নতুন করে আজ শপথ নিলাম।

যৌথসভার একেবারে শেষ পর্যায়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্যের আগে তিনি আবারও মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের রণসঙ্গীত ‘চল চল চল’ গাওয়া শুরু করেন। তারপর এই সঙ্গীতের মর্মার্থ ব্যাখ্যা করেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়