ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সফল হতে চান কামাল

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সফল হতে চান কামাল

ছবি : শাহীন ভূইয়া

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : জনগণের ঐক্যের ওপর নির্ভর করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব ধরনের রাজনৈতিক দাবি  ‍পূরণ করেছিলেন, সেই বিষয়টিকে পাথেয় হিসেবে নিয়ে আন্দোলনে সফল হতে চান ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’র নেতা ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেছেন, জনগণের ঐক্য গড়ে উঠলে কোনো স্বৈরাচার টিকতে পারে না। অতীতে প্রমাণ হয়েছে- বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, কীভাবে ভয়কে জয় করে জনগণের ঐক্যের ওপর ভরসা করতে হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এখন থেকে ‘গণতন্ত্র ফেরাতে’ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুদর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও পেশাজীবীকে এ জোটে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলো এই নতুন জোটের বাইরে থাকছে। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা বিকল্পধারার সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে এই জোটের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। আয়োজকরা বলেছেন, অসুস্থ থাকার কারণে তিনি এই অনুষ্ঠানের যোগ দিতে পারেননি।

শনিবার সন্ধ্যায় ৬টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি এবং ১১ লক্ষ্যের কথা জানিয়ে জোটের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

ড. কামাল হোসেন তার বক্তব্যের শুরুতে একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে সাহসের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন তা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাকে কিছু না দিলেও একটি জিনিস দিয়েছেন, শিখিয়েছেন; সেটি হচ্ছে, কীভাবে জনগণের ওপর নির্ভর করে দাবি আদায় করতে হয়। তার শক্তি ছিল জনগণের শক্তি। বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এটা অতীতে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কেউ যদি বলে আপনাকে গুলি করব, করুক। আমি ভয় পাই না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, একজন মুসলমান হিসেবে যখন মৃত্যু আসবে তখনই মৃত্যু হবে। এর আগেও না, পরেও না।  

সরকারের উদ্দেশে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে, এই দেশের মালিক জনগণ। গণতন্ত্র তাদের অধিকার। সুতরাং বৈধভাবে একটি সরকার গঠন করতে হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একজন ক্ষুদ্র আইনজীবী হিসেবে আমি সেটি বুঝি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত দলিলে বলা আছে, তিনি কোন বাংলাদেশ চেয়েছেন। সেই বাংলাদেশ গড়তে কোনো ধরনের আপোশ করা হবে না।

ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের ঐক্য হলে দুর্নীতিবাজরা পালিয়ে যাবে। তারা পালিয়ে যাক। আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের যেন বাধা দেওয়া না হয়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে নতুন স্বপ্নের সূচনা হলো, দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর মাধ্যমে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সূচনা হলো। আমরা মুক্ত দেশ, মুক্ত মত প্রকাশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। নতুন আঙ্গিকে এই লড়াই শুরু হলো। অনেকে এই ফ্রন্টের বাইরে রয়েছেন, তাদের কাছে আহ্বান, আসুন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের বাংলাদেশ গঠনের সম্পৃক্ত হই।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চক্রান্তে মোকাবিলা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই দেশে কোনো দলীয় শাসন আর কায়েম হবে না। সরকার বলছে, ড. কামাল নাকি ষড়যন্ত্র করছে। কামালরা ষড়যন্ত্র করেন না। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন হলে তাতে আমরা অংশগ্রহণ করব। 

এ সময় খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আজ পঙ্গু হতে চলেছেন। জনগণ চায় তার মুক্তি।

দেশ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে, উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের এই সংকটকালে এই জোট আশার আলো হিসেবে কাজ করবে। যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হয় তাহলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে ৭ দফা দাবি দিয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। এছাড়া, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

নতুন এই জোট গঠনের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে এই জোট টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে থাকবে। স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে একমাত্র অস্ত্র এই জাতীয় ঐক্য।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব মোস্তফা আমিন, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির নেতা আবদুল মালেক রতন, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ অক্টোবর ২০১৮/রেজা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়