ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সুপার ওভার রোমাঞ্চে চিটাগংয়ের জয়

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১২ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুপার ওভার রোমাঞ্চে চিটাগংয়ের জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক : বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। জয় দিয়ে উপলক্ষটা রাঙিয়ে রাখল চিটাগং ভাইকিংস। সুপার ওভারে খুলনা টাইটান্সকে ১ রানে হারিয়ে জয়ে ফিরল মুশফিকুর রহিমের দল।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৫১ রান করেছিল খুলনা। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করে চিটাগংও। সুপার ওভারে ১২ রানের লক্ষ্যে খুলনা নিতে পারে ১০ রান।

শেষ ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজনে চিটাগংকে সুপার ওভারে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব রবি ফ্রাইলিঙ্কের। সুপার ওভারেও ব্যাটে-বলে দলের জয়ের নায়ক এই দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে তার হাতেই।

তৃতীয় ম্যাচে এটি চিটাগংয়ের দ্বিতীয় জয়। জয়ে শুরুর পর দ্বিতীয় ম্যাচে হেরেছিল তারা। আর খুলনা হারল প্রথম চার ম্যাচেই।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ঝোড়ো সূচনা করেছিল খুলনা। পল স্টার্লিং প্রথম ওভারে পেসার ফ্রাইলিঙ্ককে হাঁকান একটি করে চার ও ছক্কা। পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলামকে স্টার্লিং মারেন একটি চার, জুনায়েদ সিদ্দিক একটি করে চার ও ছক্কা।

 



দুই ওভারেই ৩০ রান তুলে ফেলেছিল খুলনা। এরপরই জোড়া ধাক্কা। ১০ রানের মধ্যে ফেরেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানই। স্টার্লিংকে (১০ বলে ১৮) থামান  অফ স্পিনার নাঈম হাসান। ফ্রাইলিঙ্কের শিকার জুনায়েদ (১৫ বলে ২০)।

৪১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলকে এগিয়ে নিয়েছেন ডেভিড মালান ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু এই দুজন রান তুলেছেন তুলনামূলক ধীরগতিতে। ৭৮ রানের জুটিতে খেলেছেন ৭৪ বল। মালানকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ রাহী। ৪৩ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৪৫ রান করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান।

দুই ম্যাচ পর ফেরা কার্লোস ব্রাফেট খালেদ আহমেদের হাতে জীবন পাওয়ার পর ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি (৫ বলে ১২)। পরপর দুই বলে ব্রাফেট ও মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সানজামুল। মাহমুদউল্লাহ ৩১ বলে ৪ চারে করেন ৩৩ রান।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেনি খুলনা। ১৯তম ওভারে খালেদের শিকার হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত করেন ৬ রান। ফ্রাইলিঙ্কের শেষ ওভার থেকে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (৪*) ও আরিফুল হক (৮*) নিতে পারেন মাত্র ৭ রান। শেষ পাঁচ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে খুলনা তুলতে পারে শুধু ৪০ রান।

চার ওভারে ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন সানজামুল। ফ্রাইলিঙ্ক, জায়েদ, খালেদ ও নাঈমের ঝুলিতে জমা পড়ে একটি করে উইকেট।

 



লক্ষ্য তাড়ায় চিটাগংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা পাকিস্তানি পেসার জুনাইদ খানের বলে কাভারে স্টার্লিংকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ শাহজাদ (১০ বলে ১০)।

১২ রানের উদ্বোধনী জুটির পর দলকে ৫১ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট ও ইয়াসির আলী। ডেলপোর্ট (১৬ বলে ১৭) তাইজুল ইসলামকে রিভার্স সুইপে উড়াতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ব্রাফেটের হাতে ক্যাচ দিলেন ভাঙে ৩৯ রানের এ জুটি।

মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ইয়াসির ভালোই খেলছিলেন। এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। কিন্তু শরিফুল ইসলামের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ব্রাফেটের দারুণ ক্যাচে তিনি ফেরেন ৪১ রানে। ৩৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ইনিংসটি সাজান ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

মোসাদ্দেক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। খুলনা অধিনায়ক মাহমুউল্লাহর কপালে চিন্তার ভাঁজও বাড়ছিল। ১৭তম ওভারে শরিফুলকে মুশফিক ছক্কা হাঁকানোর পর বেশ উত্তেজিতও হতে দেখা যায় মাহমুদউল্লাহকে। তার ক্ষোভটা ছিল বোলারের ওপর।

সেই ওভারের শেষ বলে স্লোয়ারে মোসাদ্দেককে বোল্ড করে ৩২ রানের জুটি ভাঙেন শরিফুল। পরের ওভারে ব্রাফেটকে স্কুপ করতে গিয়ে ফেরেন মুশফিকও। ২৬ বলে এক চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রান করেন চিটাগং অধিনায়ক।

 



৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দুই ওভারে চিটাগংয়ের দরকার ছিল ২৩ রান। ১৯তম ওভারে দারুণ বোলিংয়ে জুনায়েদ দেন মাত্র ৪ রান। আগের ম্যাচে ঝড় তোলার ফ্রাইলিঙ্ক জুনায়েদের তিন বলে রানই নিতে পারেননি।

শেষ ওভারে চিটাগংয়ের দরকার পড়ে ১৯ রান। মাহমুদউল্লাহ বল তুলে দেন আরিফুলের হাতে। এই মিডিয়াম পেসার প্রথম বলে দেননি কোনো রান। পরের বলটা লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান নাঈম। পরের বল আবার উড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। ৩ বলে দরকার ১৩। পরের দুই বলেই ফ্রাইলিঙ্ক হাঁকান দুই ছক্কা, স্কোর লেভেল! অবশ্য টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, পঞ্চম বলটা উচ্চতার নো হতে পারত। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে তাই সন্তুষ্ট হতে পারেননি ফ্রাইলিঙ্ক।

শেষ বলটা আরিফুল দিয়েছিলেন স্লোয়ার। ফ্রাইলিঙ্ক এবার ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি। তিনি বাই রান নেওয়ার জন্যও প্রথমে দৌড় শুরু করেননি। যতক্ষণে দৌড় শুরু করেন, কিপার অঙ্কন বল ধরে পাঠিয়ে দেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহর হাতে। মাহমুদউল্লাহ বল ধরে স্টাম্প ভাঙার সময় ফ্রাইলিঙ্ক অনেকটা দূরেই, ম্যাচ টাই! 

সুপার ওভারে জুনায়েদের প্রথম তিন বলে দুই চারে ৯ রান তুলেছিলেন ডেলপোর্ট ও ফ্রাইলিঙ্ক। চতুর্থ বলে ফ্রাইলিঙ্ক বোল্ড হয়ে যান। শেষ দুই বলে মুশফিক ও ডেলপোর্ট নিতে পারেন মাত্র ২ রান।

১২ রানের লক্ষ্যে ফ্রাইলিঙ্কের প্রথম বলে ব্রাফেট নিতে পারেন এক রান। পরের বলে কাভার শটে চার মারেন মালান। তৃতীয় বলে তিনি নেন ২ রান। পরের বলে রান আউটে কাটা পড়েন ব্রাফেট।

 



২ বলে চাই ৫। পরের বলটা ফ্রাইলিঙ্ক দিয়েছিলেন ফুলটস, তবে স্টার্লিং নিতে পারেন কেবল ২ রান। শেষ বলে দরকার ৩, ফ্রাইলিঙ্কের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি স্টার্লিং। বাই থেকে নিতে পারেন ১ রান। তাতে শেষ হাসি হাসে চিটাগং। 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জানুয়ারি ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়