ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জীবন দিয়ে হলেও আস্থার প্রতিদান দেব : শেখ হাসিনা

29,36 || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবন দিয়ে হলেও আস্থার প্রতিদান দেব : শেখ হাসিনা

এসকে রেজা পারভেজ ও আবু বকর ইয়ামিন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে : নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জনগণ যে বিশাল সমর্থন দিয়েছে তার মার্যাদা রাখতে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক বিজয় উৎসবে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু জীবন দিয়েছেন। জীবন দিয়েছেন আমার মা, ভাই, স্বজনরা। বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা রক্ষা করা এবং তাদের জীবন মান উন্নত করার জন্য প্রয়োজনে আমিও আমার বুকের রক্ত দিতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছে। দেশের মানুষ যে বিশ্বাস রেখেছে তার মর্যাদা আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করে যাবো। আওয়ামী লীগ যে অঙ্গীকার করেছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের একটি অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই ভাষণে তিনি বলেছিলেন কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। আমি এখন বলছি, বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, ভবিষ্যতেও কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না; এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।

কারো কাছে মাথা নত নয়, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে বাঙালি চলবে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ তার মর্যাদা ধরে রাখবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল বিজয় পাওয়ায় এই উৎসবের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি সমাবেশটিকে রূপ দিয়েছে জনসমু্দ্রে। নেতাকর্মী‌দের অবস্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছা‌পি‌য়ে রাস্তা ও আশপাশ এলাকায় বিস্তৃত হ‌য়। প্রেসক্লাব থে‌কে‌দো‌য়েল চত্বর, টিএস‌সি, চারুকলা, নীলক্ষেত পর্যন্ত এলাকা ঢাক‌ঢোল, ঘোড়া, হাতি নি‌য়ে আসা নেতাকর্মী‌দের পদচারনায় মুখ‌র হ‌য়ে ওঠে। ঢাকা ও ঢাকার আশপা‌শের জেলাগু‌লো থে‌কে নানা ঢং‌য়ে নানা সা‌জে সমা‌বেশস্থ‌লে এ‌সেছেন তারা। প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নি‌য়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যা‌নে প্র‌বে‌শে নি‌ষেধাজ্ঞা থাকায় রাস্তায় এগু‌লো নি‌য়ে উৎসব কর‌ছেন নেতাকর্মীরা।

 



যারা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিশাল জয় উপহার দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর পাশপাশি নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে তাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সবসময় বিজয় অর্জন করে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় একটা স্বাভাবিক বিষয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় পেয়েছে সত্য কিন্তু যখন দায়িত্ব পেয়েছি জনগণের সেবা করার, মানুষের জন্য কাজ করার তখন দল-মত-নির্বিশেষে সকলের জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে। প্রতিটি মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করবে। দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সেবা করার দায়িত্ব জনগণ আমাদের দিয়েছে।’

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রায় হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায়, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ও মাদকের বিরুদ্ধে রায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়; এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। নির্বাচনে যারা প্রতিনিধি হয়েছেন দেশের মানুষের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা তাদের কর্তব্য।’

বিশাল জয় পাওয়ার পর দায়িত্ব সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজয় পাওয়া কঠিন, বিজয় রক্ষা করা আরো কঠিন কাজ। সেই কঠিন দায়িত্ব আমরা পেয়েছি। সর্বশক্তি দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণ শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারা শান্তি চায়, তারা উন্নয়ন চায়। তারা চায় অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন সমাজ গড়ে তুলতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। আরো আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এই রায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি রায়। বাংলার মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর কোনো স্থান হবে না, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তের কোনো স্থান হবে না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে তোলার জন্য মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দিয়েছে।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে শোকাহত ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতেই বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের অন্য সদস্য ও স্বজনদের হত্যা করেছে।’

 



বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ, সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে যেমন দুর্নীতি দূর করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা। কি পেলাম না পেলাম সেটা বড় কথা না। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর সমাজ পায়। বাংলাদেশ এখন যেমন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেভাবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে পারি। এজন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করবো।

প্রতিটি গ্রাম পাবে শহরের মত সকল নাগরিক সুবিধা। সেভাবে আমরা তৃণমূলে মানুষের জীবন উন্নত করব। শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হবে, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে, একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থাণ সৃষ্টি হবে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশ।’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করেছি, দেশে দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন হবে সম্পূর্ন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেশে। ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে বাংলাদেশ। তরুণ প্রজন্ম ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শত বার্ষিকী উদযাপন করবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। ২১০০ সালের মধ্যে ডেল্টা প্ল্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

এর আগে সমাবেশে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে তাকে উদ্দেশ্য করে অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জানুয়ারি ২০১৮/রেজা/ইয়ামিন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়