ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জাপার সভায় বিশৃঙ্খলা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২৪ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাপার সভায় বিশৃঙ্খলা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, হাতাহাতি, ভাঙচুর, দলীয় নেতৃত্বের কড়া সমালোচনার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় পার্টির ঢাকা ও ময়মসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা।

মহাজোট সরকারের এক সময়ের প্রতিমন্ত্রী জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সরকার বিরোধী বক্তব্যে সভায় কানাঘুষা চলে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাপার আসন কমে যাওয়ার জন্য নেতাকর্মীরা জাপার বর্তমান নেতৃত্বকে দায়ী করলেও রাঙ্গা দায়ী করছেন আওয়ামী লীগকে। এজন্য আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে সমুচিত জবাব দেওয়ার হুসিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

সোমবার রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনী কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের এই সাংগঠনিক সভা। জাতীয় পার্টিকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা নেতাদের নিয়ে চার দিনের বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা ডাকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি।

সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় বৈঠক। বৈঠক চলে বিকাল পর্যন্ত। দুপুরে নেতাকর্মীদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়।

বৈঠকের একপর্যায়ে দুপুর বেলা জাতীয় পার্টির এই সভায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সভায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হলে দলের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বাদানুবাদ ও হাতাহাতিতে জড়ান দূর দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা। এ সময় স্থানীয় বেশ কিছু যুবক হলে প্রবেশ করতে চাইলে হলে দায়িত্বরত দলের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রবেশে বাধা দেয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবকরা হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হয়। বিক্ষুব্ধ হয়ে তারা হলের বাইরে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর চালায়। প্রায় দশ মিনিট ধরে চলে এই বিশৃঙ্খল অবস্থা। পরে পুলিশ ও দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এসময় হলের ভেতরে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

সভায় জেলা ও ‍উপজেলা নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকায় যান না, কর্মী সমর্থকদের কোন খোজ খবর নেন না। বিপদে আপদেও তাদের পাওয়া যায় না। ঢাকায় বসে বসে কোন্দল করেন। এলাকায় কোন ভিত্তি নেই, কিন্তু তাদের অনেকেই আজ দলের বড় বড় নেতা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ণ ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সরকার সমর্থক বলে পরিচিত জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা তৃণমূলের এই সভায় আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনায় মেতে উঠেন। এ সময় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে কানাঘুষা করতে দেখা গেছে।

মসিউর রহমান বলেন, ২১ বছর পর এরশাদের সমর্থনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ আমাদের মূল্যায়নের পরিবর্তে অপমান করছে। ভবিষ্যতে জাপার ওপরে আঘাত করার চেষ্টা করলে আমরাও বসে থাকব না প্রতিউত্তর দেব।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘একাদশ নির্বাচনে ৪২ থেকে আমরা কেনো ২২টি আসন পেলাম? অ্যালায়েন্স করার পরও কেন আমাদের অধিকাংশ আসনে নির্বাচন করতে হলো। আগামীতে আর কারো সঙ্গে জোট নয়। এককভাবেই জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে। সভায় যারা আসেননি এবং দলে যারা নিস্ক্রিয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

সরকারবিরাধী বক্তব্যে রাঙ্গার সমালোচনা করে সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক তৃণমূলের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর মসিউর রহমান রাঙ্গার কারণে আমাদের আসন ৪২ থেকে ২২টিতে এসে ঠেকেছে। জাপা নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ থেকে ত্যাগি নেতাদের জন্য আসন আদায় করতে পারেননি, কিন্তু তারা নিজেরা নিজেদের আসন ঠিকই ভাগিয়ে নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে জাপা প্রার্থীরা মার খেয়ে কেন্দ্রে যেতে না পারলেও মহাসচিব কোন খবর নেননি, বরং বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদও জানাননি। তার নেতৃত্বে নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এলাকার ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী করা হয়েছে। যার জন্য বর্তমান মহাসচিব কম দায়ী নন। আজকে তার মুখে স্ব-বিরোধী কথাবার্তা মানায় না।

ঢাকা বিভাগের প্রত্যেক জেলা থেকে তৃণমূলের নেতারা সভায় যোগ দিলেও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ বিভাগের কোন নেতাই আসেননি। ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি রওশন এরশাদ নিজেই উপস্থিত ছিলেন না, সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইমাম এমপিও যোগ দেননি সভায়। তবে বিরোধী উপনেতার বাজেট বক্তব্য থাকায় তারা নাকি যোগ দিতে পারেননি, এমন কথাই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।

জেলা ও উপজেলা নেতাদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এসময় তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে তৃণমূলকে মূল্যায়ন করে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। দলে ত্যাগ ও অবদান বিবেচনা করেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। উড়ে এসে কাউকে দলীয় পদে জুড়ে বসার সুযোগ দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। ভাড়া করা লোক দিয়ে সংগঠন চলবে না।সংগঠনে কোন্দল সৃষ্টিকারীকে জাপায় রাখা হবে না।

নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী দিনে জাতীয় পার্টি চলবে। আর এ জন্যই জাতীয় পার্টি আটটি বিভাগের নেতা-কর্মীদের মতামত ও পরামর্শ শুনতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সভার আয়োজন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা যেন মনে করে জাতীয় পার্টিতে তাদের মালিকানা আছে। শুধু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেই হবে না।

বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিভাগ থেকে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জহিরুল আলম রুবেল, জেলা নেতা ইলিয়াস উদ্দিন, মাহবুব আলম বাচ্চু, আফতাব হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, সৈয়দ আবদুল মান্নান, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, ব্যরিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পীরজাদা শফিউল্লা আল মুনির, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, আবদুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, ইমরান হোসেন মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ড. নুরুল আজহার শামীম, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির, দেওয়ান আলীম, নুরুল ইসলাম নুরু, সরদার শাহজাহান, আমানত হোসেন আমানত, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জহিরুল আলম রুবেল, নিগার সুলতানা রানী, যুগ্মমহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শেখ আলমগীর হোসেন, নোমান মিয়া, দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক খোরশেদ আলম খুশু প্রমুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৯/নঈমুদ্দীন/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়