ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাঁশের খাঁচায় অভাব ঘুচিয়েছেন হবিগঞ্জের রাবেয়া

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৪ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাঁশের খাঁচায় অভাব ঘুচিয়েছেন হবিগঞ্জের রাবেয়া

বাঁশের খাঁচা তৈরিতে ব্যস্ত রাবেয়া খাতুন

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : বাঁশের খাঁচা তৈরি করে অভাবকে জয় করেছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের কাইতপাড়া গ্রামের রাবেয়া খাতুন (৩৫)।

স্বামী মো. শামছুল হক দিনমজুর। তাদের ফসলী জমিজমা তেমন একটা নেই। ৫ শতক জমির ভিটেবাড়ি। ছোটঘরে বসবাস। অভাব যেন তার নিত্যসঙ্গী। অভাব থেকে মুক্তি পেতেই রাবেয়ার অদম্য চেষ্টা।  প্রথমে ক্রয় করেন গভীর বাচ্চা। এক থেকে হয় তিন। দুর্ভাগ্য হঠাৎ রোগে আক্রান্ত হয়ে গরুগুলো মারা যায়। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েন স্বামী-স্ত্রী।

এদিকে তিন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে। ৬ জনের সংসারে অভাব যেন আরও ঘিরে ধরে। একদিকে নিত্য খাবার। অন্যদিকে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো। নেই টাকা। তারা অভাবের তাড়নায় দিশেহারা হয়ে পড়েন।

অবশেষে রাবেয়া খাতুন সন্ধান পান ‘আরডিআরএস বাংলাদেশ’ শায়েস্তাগঞ্জ শাখার ক্ষুদ্র ঋণের। তারা অতি সহজে এ সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ পান। এ টাকা দিয়ে আবারও গরু কিনেন। গরুপালনের পাশাপাশি রাবেয়া সিদ্ধান্ত নেন বাঁশ কিনে খাঁচা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করবেন।

শুরু করেন খাঁচা তৈরি। আর রাবেয়ার স্বামী শামছুল হক এসব তৈরি খাঁচা প্রতিদিন বাজারে নিয়ে বিক্রি শুরু করেন। আসতে শুরু করে সফলতা। এতে চলে নিত্য হাটবাজারের খরচ। চলে সন্তানদের লেখাপড়াও। তার সাথে নিয়মিত ঋণের টাকা পরিশোধ করেন রাবেয়া। এরইমধ্যে এভাবে এ সংস্থা থেকে একাধিকবার ঋণ নিয়েছেন তারা।

এরমধ্যেই ভাড়ায় চালিত একটি টমটম গাড়ী কিনেছেন। এখন ভালই চলছে রাবেয়ার সংসার। তাদের এ সাফল্য দেখে নিকটবর্তী অভাবগ্রস্ত লোকেরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই তার মতো আরডিআরএস থেকে ঋণ নিয়ে নানা কাজে যুক্ত হয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছেন।

রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘শত অভাবেও হাল ছাড়ি নাই। চেষ্টায় উপায় বের হয়েছে। আরও এগিয়ে যেতে চাই। সংস্থার ঋণে আলোর পথ পেয়েছি। তিনি জানান, প্রতিদিন ৫০টি খাঁচা তৈরি করা সম্ভব হয়। বাজারে প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এর আয়ে ভালই চলছে আমাদের।’

স্বামী মো. শামছুল হক বলেন, ‘বাঁশ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারমধ্যেও অতিকষ্টে সংগ্রহ করে নিয়ে আসছি। বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা বাঁশ চিরে বেতি তৈরি করে দেই। এ বেত দিয়ে রাবেয়া খাঁচা তৈরি করছে। আমরা সৎপথে জীবিকা গ্রহণে এ শ্রমের পথ বেছে নিয়েছি।’

স্থানীয় প্রাক্তন মেম্বার সমাজসেবক হেলাল আহমেদ বলেন, রাবেয়া খাতুনকে অনুসরণ করে অনেক বেকার নারীই নানা কাজে যুক্ত হয়েছেন। তারাও সফল হচ্ছেন। রাবেয়ার মতো শ্রম দিলে বেকার নারীর সংখ্যা হ্রাস পাবে।’

আরডিআরএস বাংলাদেশ শায়েস্তাগঞ্জ এলাকার এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রাবেয়া একজন সংগ্রামী নারী। এ নারী সৎ ও পরিশ্রমী। সে আমাদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে দিন দিন সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ ধরনের মানুষই খুঁজছি, যারা নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে।



রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/৪ জানুয়ারি ২০১৭/মো. মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়