ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পতিত জমিতে তুলা চাষে ফিরল সচ্ছলতা

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পতিত জমিতে তুলা চাষে ফিরল সচ্ছলতা

খেত থেকে তুলা তুলছেন পবিত্র কুমার সাহা ও তার স্ত্রী শেফালী রানি সাহা

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : পতিত জমিতে তুলা চাষে সচ্ছলতা ফিরেছে মাগুরার কৃষক পবিত্র কুমার সাহার। কেবল তিনিই নন, তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার অনেক কৃষকই তুলা চাষ করে অভাব তাড়িয়েছেন।

পবিত্র কুমার সাহা (৫৫) মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ভাবনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বাড়ির আশপাশে নিজের পতিত জমি আছে কিন্তু অন্য ফসল তেমন না হওয়ায় সংসার চলত না। অভাবে পড়ে বাড়ির গাছ, গবাদিপশু বিক্রি করে দেন। এ সময় একদিন শুনলেন পতিত জমিতে তুলা চাষের কথা। তিনিও শুরু করলেন তুলা চাষ। এখন তিনি সচ্ছল কৃষক।

মহম্মদপুরের বিনোদপুর ইউনিয়নের ভাবনপাড়া, তল্লাবাড়িয়া ও রাজাপুর ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা  গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমিতেই রবিশস্যের চাষ করেছেন কৃষকেরা। সেখানে খেতের পাশেই দেখা গেল তুলার দুটি প্রদর্শনী প্লট। খেত থেকে তুলা তুলছিলেন ভাবনপাড়া গ্রামের কৃষক পবিত্র কুমার সাহা ও তার স্ত্রী শেফালী রানী সাহা।

পবিত্র কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের বাড়ির জমি এক বছর আগেও এ সময় পতিত পড়ে থাকত। তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে তুলা চাষ করার প্রস্তাব দিলে রাজি হই। তুলা চাষে কম পরিশ্রমে বেশি আয় হয়। তা ছাড়া জমি এবং পরিবেশেরও ক্ষতি হয় না।’

একই এলাকার মজিদ মন্ডল ও সালাম শিকদার বলেন, ‘আমরা দুটি প্লটে দুই বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। চাষে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে তুলা বিক্রি করে।’

মাগুরা সদর উপজেলার মঘি ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মান্নান মৃধা ৫০ শতক জমিতে তুলার আবাদ করেছেন। ২০-২৫ মণ তুলা পাবেন। প্রতি মণ কাঁচা তুলা বিক্রি হয় ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে।’

 

চাউলিয়া ইউনিয়নের শ্রীকুন্ডি গ্রামের স্বপন কুমার দে জানান, ‘তিনি দশ বছরের বেশি সময় ধরে তুলা চাষ করছেন। অন্য ফসলের মতো তুলা বিক্রি করতে বাজারে যেতে হয় হয় না। মিল মালিকরা বাড়ি থেকে তুলা কিনে নিয়ে যান।’

মাগুরা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি কটন ইউনিট অফিসের মাধ্যমে জেলার ১ হাজার ৬০০ কৃষক তুলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন।  সম্প্রসারিত তুলা চাষ প্রকল্পের (ফেজ-১) আওতায় এসব কৃষককে তুলা চাষে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে একসময়ের তুলা চাষের জন্য বিখ্যাত মাগুরার হারানো গৌরব আবার ফিরে আসছে।

জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুলা উন্নয়ন বোর্ড ঝিনাইদহ জোনের অধীনে মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় তুলার আবাদ হচ্ছে। এ এলাকার মাটি তুলা চাষের অত্যন্ত উপযোগী। একসময় এসব এলাকায় প্রচুর তুলার আবাদ ছিল। নানা কারণে কৃষক তুলা চাষে আগ্রহ হারায়। তুলা উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের আবার তুলা চাষে ফেরানোর উদ্যেগ নিয়ে সফলও হয়েছে।

মাগুরা সদর, ইছাখাদা, আলোকদিয়া, শ্রীপুর ও লাঙ্গলবান্দ এলাকায় কটন ইউনিটের অফিস রয়েছে। এসব অফিসে একজন করে কটন ইউনিট অফিসার ও মাঠকর্মী কাজ করছেন।

চলতি মৌসুমে পাঁচটি ইউনিটের প্রতিটিতে ২০০ হেক্টর করে ১ হাজার হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ করা হয়েছে। ১ হাজার ৬০০ জন চাষিকে নিবিড় তুলা চাষ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়।  তুলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন এসব চাষিরা।  খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হয় বলে তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

প্রতিটি কটন ইউনিটে তিনটি থেকে পাঁচটি প্রদর্শনী প্লটে  রুপালি-১, সিবি-১২, সিবি-১৩ ও সিবি-১৪ জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। চাষিদের বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও বীজ সরবরাহ করা হয়। বড় চাষিদের দেওয়া হচ্ছে সহজ শর্তে ঋণ। তুলা উন্নয়ন বোর্ড চাষিদের উৎপাদিত তুলা বাজারজাত করার নিশ্চয়তাও দিয়ে থাকে।

বছরের আগস্ট মাসে তুলার বীজ রোপণ করা হয় জানুয়ারির শুরুতে খেত থেকে তুলা সংগ্রহ করা হয়। এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ কেজি। এই পরিমাণ তুলা বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়।

 

 

 

রাইজিংবিডি/মাগুরা/ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়