ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাঙ্গাশ চাষে সাফল্য

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাঙ্গাশ চাষে সাফল্য

নিজের মৎস্য খামারে আতিয়ার রহমান টুটুল

বি এম ফারুক, যশোর : মাত্র ১৫ বছর আগেও যশোর শহরতলির চাঁচড়ার বাসিন্দা আতিয়ার রহমান টুটুল হাঁড়িতে করে মাছের বিভিন্ন জাতের পোনা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করতেন। এখন তিনি রীতিমতো একটি মৎস্য খামারের মালিক।

মাত্র ২৫০০ টাকার পুঁজি নিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক বছরে তার ব্যবসা কিছুটা লাভজনক হওয়ায় ২০০০ সালের দিকে জেলার শার্শার গয়রা গ্রামে জনৈক মেহেদি হাসান আলীর কাছ থেকে ৭ বিঘা জমির ওপর নির্মিত পুকুর লিজ নিয়ে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা চাষ শুরু করেন। এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি এই মৎস্যচাষিকে।

আতিয়ার রহমান টুটুল বর্তমানে ১৯৫ বিঘা পুকুরে পাঙ্গাশের পোনা চাষ করে সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ‘জলের সোনা মৎস্য প্রজেক্ট’ নামে মৎস্য খামার থেকে ২০১৬ সালে ৫ কোটি টাকার পাঙ্গাশের পোনা উৎপাদন করেছেন। উৎপাদিত এসব পোনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

মৎস্যচাষি আতিয়ার রহমান টুটুল ২৬ হেক্টর জলাশয়ে বছরে প্রায় ৫ কোটি পাঙ্গাশের পোনা উৎপাদন করে নজির স্থাপন করেছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন পাঙ্গাশ মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

আতিয়ার রহমান টুটুল জানান, তিনি এর আগে রুই, কাতল, মৃগেলসহ অন্যান্য দেশি জাতের মাছের পোনার চাষ করতেন। ৭ বছর আগে তিনি পাঙ্গাশ মাছের পোনা চাষ শুরু করেন। স্থানীয় বাজারে পাঙ্গাশ মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় তিনি লাভের মুখ দেখতে পান। মাছ চাষের সফলতার জন্য তিনি ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৬ সালে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির স্বীকৃতি পান।

তার খামারের উৎপাদিত পাঙ্গাশের পোনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ময়মনসিংহ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ভোলাসহ অন্তত ৩০টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকার মৎস্যচাষি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাক-পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনের ছাদে করে নিয়ে যান।



টুটুলের এ সফলতা দেখে জেলার অন্যান্য মাছচাষিরাও এখন পাঙ্গাশ চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। যশোরের চাঁচড়ার মৎস্যচাষি এস কে রাব্বুন আপ্পি জানান, তিনি কই, শিং, মাগুরসহ অন্যান্য মাছের চাষ করতেন। পাঙ্গাশ মাছ অনেকটা লাভজনক হওয়ায় তিনি এ মাছের চাষ শুরু করেছেন।

চাঁচড়ার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মৎস্যচাষি আনোয়ারুল করীম আনু বলেন, ‘যশোর হচ্ছে মাছের উদ্বৃত্ত এলাকা। দেশের মাছের মোট চাহিদার ৬০ ভাগ মাছ যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে এসব মাছের মধ্যে সিংহভাগই দেশি জাতের বিভিন্ন মাছ। বর্তমানে সেখানে পাঙ্গাশ মাছ উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে।’

যশোর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, যশোর জেলায় প্রতিবছর দুই লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে শুধু পাঙ্গাশের পোনা উৎপাদন হয় ৪৫ হাজার ৭১২ মেট্রিক টন।

তিনি জানান, গত কয়েক বছরে এ জেলায় পাঙ্গাশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলায় পাঙ্গাশের পোনা উৎপাদন হলেও গুণগত মানের দিক থেকে যশোরের মাছের চাহিদা বেশি।



রাইজিংবিডি/যশোর/২২ জানুয়ারি ২০১৭/বি এম ফারুক/টিপু/ এএন 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়