স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ গ্রামবাসীর
স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি : সামনে বর্ষা মৌসুম। প্রতিদিন দুই দফা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে হয় সাগর উপকূলীয় অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষকে। পানিবন্দি হয়ে পড়ে তাদের জীবনযাত্রা। লবনপানি ঢুকে বিনষ্ট করে দেয় কৃষকের ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো অগ্রগতি না থাকায় নিজস্ব অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন কলাপাড়া উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের রমজানপুর গ্রামবাসী। গত বুধবার স্থানীয়রা বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে শুক্রবার শেষ করেন।
রমজানপুরের বাসিন্দারা জানান, সামনে বর্ষা মৌসুম। প্রতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে। লবনপানি প্রবেশ করে বিনষ্ট করে দেয় কৃষকের ফসল। পানিতে ভাসিয়ে নেয় শত শত চাষিদের ঘেরের মাছ। কৃষি এবং মৎস্য সম্পদসহ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হন এ ইউনিয়নের মানুষ।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া জোনের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৪৭/২ নম্বর পোল্ডারে রমজানপুরে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসে কবলিত হয়। ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে জনজীবনে দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ। ফলে বর্ষা মৌসুমে কৃষকরা চাষাবাদ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন। বারবার স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিয়ে শুধু আশ্বাস ছাড়া বিন্দুমাত্র অগ্রগতি মেলেনি।
রমজানপুরের বাসিন্দা নাননু জমাদ্দার বলেন, ইতিমধ্যে ৩০০ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩০ পরিবারের বসতভিটা। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বাঁধ নির্মাণ করা না হলে এসব বসতবাড়ি যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা নিজ অর্থায়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছি।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শনে আসেন বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল। তবে কবে নাগাদ এ ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হবে অথবা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে শংকিত গ্রামবাসী। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ করেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজেম আলী হাওলাদার বলেন, বঙ্গোপসাগর ও রামনাবাদ চ্যানেল কাছাকাছি থাকায় সোনাতলা নদীতে পানির চাপ থাকে অনেক বেশি। দ্রুত ব্লক দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না হলে স্থানীয়দের নির্মাণ করা সনাতন পদ্ধতির এ বাঁধ কোনো কাজেই আসবে না। এসব জেনেও জলোচ্ছ্বাস আতংক থেকে বাঁচতে তারা এ বাঁধ নির্মাণ করেছেন।
ডালবুগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সিকদার জানান, এলাকার মানুষের বসতভিটা ফসলি জমি রক্ষা করা খুবই জরুরি। বিশ্বব্যাংকের পদক্ষেপ অনুযায়ী কাজ শুরু করলেও অনেক বিলম্ব হবে। এজন্য পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা সেভাবে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী এই ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, ডালবুগঞ্জের ৪৭/২ নম্বর পোল্ডারের বেড়িবাঁধটি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করে গেছে। বরাদ্ধ পেলেই নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হবে।
রাইজিংবিডি/পটুয়াখালী/৭ এপ্রিল ২০১৭/বিলাস দাস/রিশিত
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন