ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাগুরার ক্ষিরের সন্দেশ দেশের বাইরেও জনপ্রিয়

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাগুরার ক্ষিরের সন্দেশ দেশের বাইরেও জনপ্রিয়

ক্ষিরের সন্দেশ তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : নানা অনুষ্ঠান-পার্বণের অন্যতম অনুষঙ্গ মিষ্টি। আর যদি সেই মিষ্টি তৈরি হয় খাঁটি দুধের উৎকৃষ্ট ছানা থেকে তাহলে কথাই নেই।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর বাজারে একটি পরিবার  বহু যুগের অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে তৈরি করে আসছে ঐতিহ্যের মিষ্টি ক্ষিরের সন্দেশ।

এই মিষ্টির নামডাক এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে পৌঁছে গেছে।

মাগুরা জেলার মহম্মদপুরের রাজাপুরের সন্দেশের ঐতিহ্য প্রায় ১০০ বছরের। একটি দোকানেই তৈরি হয় এই বিশেষ ধরনের মিষ্টি।

বিজয় মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক অজয় কাপুড়িয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই  সন্দেশ তৈরির জন্য বিশ্বস্ত কৃষকদের কাছ থেকে  দুধ সংগ্রহ করেন তারা। দুধ জাল দিয়ে ছানা তৈরি করা হয়। পরিষ্কার পানি দিয়ে ছানা ধুয়ে ফেলা হয়। ছানা থেকে পানি সরানোর জন্য দীর্ঘ সময় গামছায় বেধে ঝুলিয়ে  রাখা হয়। পরে  লোহার বড় আকারের কড়াইতে ছানা একটি নির্দিষ্ট উত্তাপে পাক দিয়ে নামিয়ে আনা হয়। উনুন থেকে ঠান্ডা হলে সন্দেশ তৈরি করা হয়। এর মধ্যে হালকা মিষ্টিভাব আনার জন্য মেশানো হয় অপূর্ব স্বাদ-গন্ধের খেজুরের গুড়। এভাবেই তৈরি হয় ক্ষিরের সন্দেশ।

এই সন্দেশের দানা মোটা ও রং কিছুটা লালচে। দোকানে কাঁচের আলমারিতে কাঁসার ও কাঠের থালায় সাজিয়ে রাখা হয়।

মিষ্টি তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের গুড় সারা বছর  মজুদ করতে হয়। মৌসুমে বিশেষ উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয় উৎকৃষ্ট গুড়।

জানা গেছে, তাদের এই মিষ্টির দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১২০ বছর আগে। অজয় কাপুড়িয়ার ঠাকুরদাদা মৃত সুরেন্দ্রনাথ কাপুড়িয়া প্রথম এই মিষ্টি  তৈরি শুরু করেন। এরপর তাদের পরিবারের বংশানুক্রমিক অভিজ্ঞতা এখানকার সন্দেশে আলাদা বৈশিষ্ট্য এনেছে যা অন্যত্র তৈরি সন্দেশে নেই।

এই সন্দেশ তৈরিতে প্রচুর দুধের প্রয়োজন হয়।  এত দুধের চাহিদা বেশি হওয়ায় এখানে দুধের দাম বেশি।

 



দুধের দামের তারতম্যের কারণে এ সন্দেশের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। সারা বছর ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাওয়া যায় এই মিষ্টি। খেজুর গাছ কমে  যাওয়ায় খাঁটি গুড় আগের মত পাওয়া যায় না। এতে এই মিষ্টির উৎপাদন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিজয় কাপুড়িয়া জানান, দেশে-বিদেশের যেখানে মাগুরা ও আশপাশের এলাকার মানুষ আছেন, সেখানেই এ সন্দেশ সমাদৃত। দেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ অফ্রিকা, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে এই সন্দেশ।

প্রবাসীরা দেশে এলে বা তাদের কোনো পরিচিত জন বিদেশে গেলে তারা ক্ষিরের সন্দেশ নিয়ে যান। ফলে বছরজুড়েই এ সন্দেশের বিক্রি প্রচুর। তবে বিশেষ দিনগুলোতে চাহিদা বেড়ে যায়। আগে থেকে অর্ডার না দিয়ে রাখলে তাৎক্ষণিক মিষ্টি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

মিষ্টি কিনতে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান,  ক্ষিরের সন্দেশ ছাড়া মিষ্টির স্বাদ অপূর্ণই থেকে যায়। বিভিন্ন উপলক্ষে পরিবারের সবার জন্য তিনি মিষ্টি কিনতে আসেন।

মাগুরার মহম্মদপুর সদরের আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ  ওসমান আলী বলেন, রাজাপুরের ক্ষিরের সন্দেশের খ্যাতি-সুনাম সর্বত্র। এই মিষ্টি এলাকার ঐতিহ্য।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/১৪ এপ্রিল ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়