ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লবনাক্ত জমি কাজে লাগিয়ে বাদশার ভাগ্যবদল

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লবনাক্ত জমি কাজে লাগিয়ে বাদশার ভাগ্যবদল

বাগেরহাট সংবাদদাতা : লবনাক্ত পতিত জমি ও মৎস্য ঘেরের বাঁধে ফুল-ফলের চাষ করে ভাগ্য বদল করেছেন কৃষক বাদশা তালুকদার। সিডর আইলা বিধ্বস্ত এলাকার লবণাক্ত জমি কাজে লাগিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের ভাগ্য।

এ জমিতে তিনি কুল, গোলাপ ফুল, বারোমাসি লেবু, আম, মাল্টা  ফলিয়েছেন। এসব ফলিয়ে একদিকে নিজে যেমন লাভবান হয়েছেন, লবণাক্ত জমিও যে উৎপাদনক্ষম তার উদাহরণ তৈরি করেছেন।  তার দেখাদেখি এখন এলাকার অনেকেই  এ ধরণের ফুল ও ফলের কাজ শুরু করেছেন।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় গ্রামে এই সফল কৃষক বাদশা তালুকদারের খেত।  সে খেতে বসেই কথা হয় তার সাথে। বাদশা নিজের জীবনের অনেক কথা শোনালেন।

 


বাদশা বলেন, ‘অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে ১৯৯৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করি। এর পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াই বিভিন্ন দপ্তর ও আত্মীয় স্বজনের কাছে। এভাবে আশায় আশায় কেটে যায় জীবনের দশ-বারটি বছর। এক পর্যায়ে হতাশ হতে হয় আমাকে। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি কাজে বিভিন্ন মানুষের সাফল্যের প্রতিবেদন দেখে উদ্বুদ্ধ হই। স্বচক্ষে দেখতে যশোরের একটি নার্সারি পরিদর্শন করতে যাই। নার্সারির মালিক মোক্তার হোসেনের সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে নার্সারির বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে স্বল্প পরিসরে নিজের এক একর ঘেরের বাঁধে ২০১২ সালে প্রথমে আমি ১৫০টি কুলের চারা (কলব) রোপণ করি। ওই বছরই আমার গাছে ফল ধরে। এরপর প্রতিবছরই কুলে ফলন বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুরু হয় লাভ। স্বচ্ছলতা আসতে শূরু করে সংসারে। পরে আমি খেত বাড়াতে মনোযোগি হই । এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ একর জমিতে কুল চাষ করছি।’

তিনি বলেন, ‘কুলচাষের পাশাপাশি ২০১৬ সালে বারোমাসি সিটলেস লেবু  (যে লেবুতে বিচি কম থাকে), আগাম জাতের আম, বারি জাতের মাল্টা ও ভারতীয় গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করি। লেবুর চাষ শুরুর ছয় মাসের মধ্যেই ফল ধরতে শুরু করে । বর্তমানে দেখছি কুলের থেকে লেবু চাষ আরও বেশি লাভজনক। লেবুর উৎপাদন বারোমাসই হয়। দেড় একর জায়গায় এ লেবু চাষ করছি। লেবু বাগান থেকে দেড় হাজার কলব বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন কৃষি খামারিদের কাছে বিক্রি করেছি। একদিকে লেবু ও অন্যদিকে কলব। দুই খাত থেকেই আসছে অর্থ।’

 


তিনি গর্ব করে বলেন, ‘এসব করে নিজের পরিবার ও ১২ জন শ্রমিকের পরিবার স্বচ্ছলভাবে চলে। তারপরও হাতে নগদ টাকা থাকে। প্রতিবছরই আমার চাষের জমি বৃদ্ধি করছি। কৃষিতে আমার এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই কুল ও লেবুর চাষ শুরু করছে।’

বাদশার প্রতিবেশি মোঃ লাবলু হাওলাদারও জানালেন, বাদশার সাফল্য দেখে তিনিও চাষ শুরু করেছেন। তার ক্ষেতেও ভাল লাভ আসছে।

 


জেলার রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ খলিলুর রহমান বলেন, ‘পতিত জমিতে লবণ সহিষ্ণু কৃষি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।  বাদশা তালুকদারের দেখাদেখি এই এলাকায় আরও কুড়িটি  কুল বাগান হয়েছে।’

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘লবণাক্ত এলাকায় লবণ সহিষ্ণু কুল ও লেবু চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন জেলার অনেকেই। দ্রুত এ জাতের কুল ও লেবু চাষ ছাড়িয়ে যাবে গোটা উপকুল জুড়ে।’

 

 

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১১ জানুয়ারি ২০১৮/আলী আকবর টুটুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়