ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চার হাজার দিয়ে শুরু করে এখন কোটিপতি

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চার হাজার দিয়ে শুরু করে এখন কোটিপতি

মোস্তাফিজুর রহমান: অভাবী সংসারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে মাত্র চার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন মো. মকবুল হোসেন। দিয়েছিলেন মুরগির খামার। এখন তিনি নিজেকে কোটিপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। দিনাজপুর সদর উপজেলার পূর্ণ পশিনাতপুর এলাকার মানুষের কাছে তিনি এখন উদাহরণ। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি আজ সমাজে পরিচিত মুখ।

মকবুল হোসেন প্রথমে ভাগ্য ফেরানোর আশায় দেশের বাইরে যাওয়ায় চেষ্টা করেছিলেন। সেই পথে যখন ব্যর্থ হলেন তখন ঠিক করলেন দেশেই কিছু একটা করবেন। বুদ্ধিটা পেয়েও গেলেন ঠিক সময়ে। ১৫০০ ব্রয়লার মুরগি কিনে শুরু করলেন সম্ভাবনার পথে যাত্রা। প্রথমবারেই লাভের মুখ দেখে তার প্রত্যাশা বেড়ে যায়। মনে সাহস সঞ্চয় করে আরো মনোযোগী হন কাজে। পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। কিছুদিন গাড়ি মেরামতের কাজ শিখেছেন। এরপর বাড়ি থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কিছু সমস্যা আর টাকার অভাবে বিদেশ যাওয়া হয়নি। এটাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে জানালেন মকবুল।

নিজের কিছু জমি ছিল। মানুষের কাছে লিজ নিলেন কিছু। শুরু করলেন কৃষিকাজ। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি পালনে মনোযোগ দিলেন। তার ভাবনা সাঠিক ছিল। চার বছরের মাথায় খামারে মুরগির সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় চার হাজার। ব্রয়লারের চেয়ে লেয়ার মুরগিতে লাভ বেশি হয় শুনে লেয়ার মুরগি করার চিন্তা করলেন। ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ৫০০০ লেয়ার মুরগি তুললেন খামারে। সেগুলো ডিম দেয়া শুরু করতেই ভাগ্য বদলাতে শুরু করল। প্রতিদিন খরচ বাদে প্রায় দশ হাজার টাকা লাভ হতে লাগল। বর্তমানে তার খামারে ১২ হাজার লেয়ার মুরগি আছে। প্রতিদিন এখন নিয়মিতভাবে ৭-৮ হাজার ডিম পাচ্ছেন তিনি। যা দিনাজপুরের স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনেকটাই মেটাচ্ছে।

সততা আর পরিশ্রমই মকবুল হোসেনকে আজ সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ভেটেরিনারি ডা. আব্দুল মোবারকের পরামর্শ নিয়ে নিজের জমিতে উৎপাদিত ভুট্টা দিয়ে  মুরগির খাবার তৈরি করছেন। তিনি বলেন, এতে একদিকে যেমন খরচ কম হচ্ছে, অন্যদিকে ফিডের গুণগত মান অনেক ভালো থাকছে। রোগ বালাইয়ের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। এখন তার প্রতিদিন ১১০০ কেজি পোল্ট্রি ফিড প্রয়োজন। এখন প্রতিদিনই তার খরচ বাদে আয় হয় প্রায় বিশ হাজার টাকা। মকবুল  বর্তমানে তিন সন্তানের জনক। দুই ছেলে এক মেয়ে তার। মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। ছোটছেলে প্রথম শ্রেণীতে এবার ভর্তি হয়েছে। লেয়ার মুরগির খামারের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। সেখানে দুধ তো বটেই গরু মোটাতাজাকরণের কাজও করেন। বর্তমানে খামারে মোট ১৪টি ষাঁড় আছে, ৩টি গাভী। গরুর খামার থেকেও নিয়মিত অর্থ আয় হচ্ছে তার। মুরগির উচ্ছিষ্ট খাবার ও অন্যান্য খাবার খেয়ে খোলামেলা অবস্থায় পালন করছেন প্রায় ১৫০টি পাতিহাঁস। নিজের খাওয়াসহ প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ টা করে ডিম পাচ্ছেন তিনি।

নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বর্তমানে তিনি ছাগলের খামার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যে খামারের জন্য ছাগল কিনেছেন। নিজের জমির ভুট্টা ও ঘাষ খেয়ে খুব দ্রুত মোটাতাজা হচ্ছে সেগুলো। বাড়ির অদূরে ২০ হাজার মুরগির জন্য ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি তিনটি পোল্ট্রি শেড নির্মাণ করছেন। মাঝপথে সরু নালা থাকায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ব্যক্তিগতভাবে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে এখন তার মাসে মোট আয় হয় ৩-৪ লাখ টাকা। নিজের সফলতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মো: মকবুল হোসেন বলেন, আমি নিজে টাকার জন্য পড়াশোনা করতে পারিনি। কিন্তু ধৈর্য ও পরিশ্রম করে সফল হয়েছি। এখন ১৪ জন পরিবারের কর্মসংস্থান হচ্ছে আমার খামারে। যে কেউ চাইলেই খামার গড়ে সফল হতে পারবেন। সাহস ও পরিশ্রম করলে বিজয় আসবেই।

ড. আব্দুর সবুর বলেন, অল্প সময়ে তিনি যতটুকু লাভবান হয়েছেন, সত্যি তা প্রশংসার যোগ্য। খাদ্য উৎপাদনের মতো মহান কাজ করছে সে। তার জন্য দোয়া করি। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই তার খামার ভ্রমণে আসে। তাদের মধ্যে থেকে বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আমি মনে মনে প্রাণীসম্পদ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন লালন করি। সে কারণে খামার পরিদর্শন করি অভিজ্ঞতার জন্য। আমি এখানে এসে সত্যি খুব পুলকিত। এখান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা নিলাম। এগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করবে । খামারে যাবতীয় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদান করে দিনাজপুর সদর উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন ডা: গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, মকবুল হোসেন একজন সফল উদ্যোক্তা। হতাশাগ্রস্তদের জন্য অনুপ্রেরণা। একজন মানুষ ইচ্ছা আর পরিশ্রমের বিনিময়ে অনেক কিছু করতে পারে সে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়