ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রকিবুলের ১৯০ রানের পরও মোহামেডানের হার

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ৮ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রকিবুলের ১৯০ রানের পরও মোহামেডানের হার

রকিবুল হাসানের ১৯০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসও জেতাতে পারেনি মোহামেডানকে

ক্রীড়া প্রতিবেদক, বিকেএসপি থেকে : সকাল সাড়ে ৯টায় বিকেএসপিতে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ। কিন্তু বিকেএসপিতে ঢুকে বোঝার উপায় ছিল না ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সেরা দুই দল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে!

আবাহানী-মোহামেডানের পুরোনো ঐতিহ্য নেই দীর্ঘদিন ধরেই। ক্রিকেটারদের মধ্যেও নেই উন্মাদনা, উত্তেজনা। কিন্তু নিরুত্তাপ ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন আবাহনীর ব্যাটসম্যানরা। আগে ব্যাটিং করে মোহামেডানের ছন্দহীন বোলিংয়ের বিপক্ষে এবারের ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ ৩৬৬ রান তোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তাও আবার মাত্র ৫ উইকেট হারিয়ে।

জবাবে মোহামেডান দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েও ৩৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি। অষ্টম রাউন্ডে এই জয়ে সুপার লিগ নিশ্চিত বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর। এবার শিরোপার পথে এগিয়ে যাওয়ার পালা।

ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাবের শেষ লড়াইটিও ছিল অনেকটা এরকম হাইস্কোরিং। গত বছরের মতো আজকের এ ম্যাচেও একক আধিপত্য দেখিয়েছে ধানমন্ডি পাড়ার দলটি। সেবার আবাহনী করেছিল ৩৭১, আজ ৩৬৬। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন লিটন কুমার দাস (১৩৯)। আজও লিটন পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ (১৩৫)। পাশাপাশি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ভারতের দিনেশ কার্তিক (১০৯)। আজ সেই ভূমিকায় নাজমুল হোসেন শান্ত, ১১০। সাকিব খেলেছিলেন ২৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। আজ সেই চরিত্রে শুভাগত। ২৭ বলে করেছেন ৪৮ রান। সব মিলিয়ে আগের ম্যাচের পুনরাবৃত্তি আবাহনীর। তবে উন্নতি হয়েছে মোহামেডানের। সেবার ৩৭২ রানের জবাবে ১১১ করেছিল মতিঝিল পাড়ার দলটি। আজ সেই মোহামেডান করল ৩৩৯ রান। পরাজয়ের ব্যবধান ২৬০ থেকে নেমে এল মাত্র ২৭ রানে।  



মোহামেডানের ছন্দহীন বোলিংয়ে শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলেছেন লিটন কুমার দাস। ৩৩ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরির দেখা পেতে খেলেন আরো ৪৬ বল। ২৪তম ওভারে পেসার ইবাদতের বলে এক রান নিয়ে তিন অঙ্কে পৌঁছার পর ইনিংসটিকে বড় করেন লিটন। ১৩৫ রানে শুভর বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ১০৩ বলে ১৫ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

লিটনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটিং করেন নাজমুল হোসেন। ২৮ রানে গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাদমান ইসলাম বিদায় নিলে জুটি বাঁধেন লিটন ও শান্ত। তাদের জুটি থেকে আসে ১০৯ রান। লিটন সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর আবাহনীর ইনিংসকে একাই টানেন শান্ত। এবারের লিগের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেতে ৯৪ বল খেলেন শান্ত। এরপর ৪৯তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন কামরুল ইসলাম রাব্বীর বলে। ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন ১০০ বলে ১১০ রান করা শান্ত। ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে শুভাগত হোমের ২৭ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৬৬ রানের পুঁজি পায় আবাহনী।  

মোহামেডানের বোলাররা ছিলেন বেহিসাবী। জাতীয় দলের দুই বোলার রাব্বী ও তাইজুল ১০ ওভারে রান দেন যথাক্রমে ৭৮ ও ৫৭। পেসার সাজেদুল ১০ ওভারে খরচ করেন ৮১ রান। শ্রীলঙ্কান স্পিনার চারিথ আসালাঙ্কা ১০ ওভারে দেন ৭০ রান। এ ছাড়া শামসুর রহমান ৬ ওভারে ৪৫, ইবাদাত হোসেন ৪ ওভারে ৩৪ রান বিলিয়ে আসেন।

পাহাড় সমান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৮ রানে ৩ উইকেট হারায় মোহামেডান। একে একে সাজঘরে ফেরেন অভিষেক মিত্র (৩), শামসুর রহমান (১৪) ও রনি তালুকদার (১৯)। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে পাল্টে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। ২০.৫ ওভার জুটি বেঁধে ১৭৫ রান যোগ করেন রকিবুল ও আসলাঙ্কা। জুটির নেতৃত্বে ছিলেন রকিবুল। ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রকিবুল সেঞ্চুরির দেখা পান ৬২ বলে। সেঞ্চুরি হাঁকাতে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা হাঁকান মোহামেডানের অধিনায়ক। অন্যদিকে আসালাঙ্কা হাফ সেঞ্চুরি তোলেন ৪৯ বলে।



দুজনের ব্যাটে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল মোহামেডান। ৩০ ওভারে রান তুলে নেয় ২০২। আবাহনীর সে সময়ে রান ছিল ২১৬। এক কথায় পাল্লা দিয়ে লড়াই করছিল মোহামেডান। কিন্তু মানান শর্মার বলে আউট হয়ে সব ওলটপালট করে দেন আসালাঙ্কা। বাঁহাতি স্পিনার মানান শর্মার বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৬০ বলে ৫৩ রান করা শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান। এরপর মাত্র ৫ রানেই বিদায় নেন জাবিদ হোসেন ও নাজমুল হোসেন মিলন (২২)।

তখন একা হয়ে পড়েন রকিবুল। সঙ্গীর অভাবে ম্যাচ জেতাতে ব্যর্থ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। শেষ দিকের ব্যাটম্যানদের নিয়ে তার ১৯০ রানের ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। ১৩৮ বলে ১৭ চার ও ১০ ছক্কায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি উপহার দেন রকিবুল। এর আগে ১৬১ রান করেছিলেন শ্রীলঙ্কার চামারা কাপুগেদারা। ম্যাচ জেতাতে না পারলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন অসাধারণ ইনিংস খেলা রকিবুল।



রাইজিংবিডি/সাভার/৮ মে ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়