ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অপর্যাপ্ত ঘুমের প্রভাবে যা ঘটে

আফরিনা ফেরদৌস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অপর্যাপ্ত ঘুমের প্রভাবে যা ঘটে

প্রতীকী ছবি

আফরিনা ফেরদৌস : একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমের দরকার। অনেকে আছেন রাতে বসে বসে ঝিমুতে থাকেন তবুও ঘুমাতে যান দেরি করে। অনেকে মনে করেন কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েও তো ভালো ভাবে সারাদিন কাজ করা যায়, তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমানোর কী দরকার। অপর্যাপ্ত ঘুমের প্রভাবে বেশ কিছু সমস্যা হয়।

 

এই সমস্যাগুলো কিন্তু এক বা দুই দিনের অপর্যাপ্ত ঘুমের জন্য খুব একটা বোঝা যায় না। তবে আপনি যদি রাতের পর রাত অপর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান, তাহলে সমস্যাগুলো দেখা দেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময়ের দরকার হবে না।

 

আমেরিকার একজন নাগরিক র‌্যান্ডি গার্ডনার বিশ্বাস করতেন না যে, সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের দরকার রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে তিনি নিজেই নিজের ওপর একটি পরীক্ষা করেন। তিনি প্রায় ১১ দিন ২৪ মিনিট না ঘুমিয়ে ছিলেন। তাও আবার কোনো প্রকার ওষুধ, মাদক বা অন্য কোনো সহায়ক ছাড়া। কিন্তু এক সময় ‌র‌্যান্ডিকে হার মানতেই হয়। তবে তিনি যখন হার মেনেছিলেন তখন তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। প্যারানোয়া, হ্যালুসিনেশন এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইন্দ্রিয়গত সমস্যা দেখা দেয় তার এবং খুব দ্রুত তার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

 

রাতে একটি ভালো ঘুমের যে কী পরিমাণ দরকার তা নতুন করে বোঝানোর মতো কিছু নেই। তবে অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে আপনার শরীরে অনেক প্রভাব পড়তে পারে এবং অনেক দুর্ঘটনার স্বীকারও হতে পারেন আপনি। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই খারাপ প্রভাব এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে।

 

প্রচন্ড ক্ষিপ্ততা

প্রথমত অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে আপনার মানসিক বেশ একটা পরিবর্তন দেখা যাবে। মনে হতে পারে ঘুমানো দরকার বা কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করবে না। কিন্তু যখনই কোনো কাজ আপনার মনের মতো হবে না তখন আপনি হঠাৎ করে অনেক শক্তি পেয়ে যাবেন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবেন। এটা মূলত অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে হয়। এই ক্ষিপ্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে যদি আপনি নিয়মিত কম ঘুমান।

 

মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু

সারাদিনের ব্যস্ততার প্রভাব রাতে ঘুমের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনেকে কাজের পরিকল্পনা করতে থাকেন। যা আপনার মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে অকেজো করে দিচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি প্রমাণিত যে, দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মস্তিষ্কের প্রায় ২০% অকেজো হয়ে পড়ে। বা প্রায় ২০ শতাংশ মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

 

ঝুঁকিপূর্ণ অনুভূতি

অপর্যাপ্ত ঘুম কী মানুষের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে? হ্যাঁ, করে। এবং খুব খারাপ ভাবে অপর্যাপ্ত ঘুম আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। একটি গবেষণার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত যে, নিয়মিত অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মানুষের অনুভূতির সংবেদনশীলতা কমে যায়।

 

খাদ্যাভ্যাস 

অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে দিনের বেলা তন্দ্রা আসতে থাকে। এই তন্দ্রার ওপর আমাদের এক প্রকার নিয়ন্ত্রণ থাকে। তখন এই তন্দ্রা এড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করি। কেউ অনিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন। কেউ বেশি বেশি সিগারেট খেতে থাকেন যাতে করে ঘুমের তন্দ্রা না আসে। মূলত এটি একটি বাজে খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে।

 

পরিকল্পনাহীনতা

প্রায় ৩৬ ঘণ্টা যদি আপনি না ঘুমিয়ে কাটান তাহলে আপনার মস্তিষ্ক কোনো কিছু পরিকল্পনা করার ক্ষমতা হারায়। যেমন কাজের ক্ষেত্রে বার বার থেমে যেতে হয় এবং বেশ সময় নিয়ে চিন্তা করতে হয় যে, ঠিক কীভাবে এই কাজটা করবেন। কারণ আপনার মস্তিষ্ক দ্রুত পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়। এতে অনেক সময় জানা জিনিসও ঠিক ভাবে করা যায় না।

 

মনোযোগ হারিয়ে ফেলা

দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে থাকলে আপনার যেসব মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা অন্যতম। কোনো কাজ করতে করতে হঠাৎ অন্য কথা মনে পড়তে পারে বা অনেক সময় ধরে একই কাজ করছেন কিন্তু কী কাজ করছেন তা ভুলে যেতে পারেন।

 

স্মৃতিশক্তির বিলুপ্তি

অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে স্মৃতিশক্তির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। খুব সহজেই বা অল্প সময়ে আপনি অনেক প্রয়োজনীয় সব তথ্য ভুলে যেতে পারেন।

 

দুর্বল মস্তিষ্ক

কাজের জন্য আপনি কম ঘুমাচ্ছেন? কিন্তু এটি জেনে আপনি খুব হতাশ হবেন যে, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে কম ঘুমের কারণে কম দক্ষ করে তুলছে। কাজের সময় খুব অল্পতে আপনার মধ্যে ক্লান্তি, গ্লানি দেখা দিতে পারে কম ঘুমের কারণে। আপনি কাজে খুব দক্ষ হতেই পারেন কিন্তু কম ঘুমের কারণে দুর্বল মস্তিষ্ক আপনার কাজের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

 

স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি

স্বল্প ঘুমের কারণে আপনার দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিও স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিতে পরিণত হয়ে যায়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কোনো কথা বা কাজ বেশিক্ষণ মনে থাকে না। ফলে স্মৃতি সমূহ স্বল্পমেয়াদী হয়ে যায়, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর আর মনে থাকে না।

 

দুর্ঘটনা

অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে সকালে যখন আপনি গাড়ি বা বাইক চালিয়ে অফিসে যান তখন ঘুমের তন্দ্রা আসতে পারে এবং যা থেকে ঘটতে পারে নানান দুর্ঘটনা। যা অনেক সময় আপনার মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।   

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৬/আফরিনা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়