রোদে পোড়া ত্বকের রং কি আর কখনো স্বাভাবিক হয়?

ডা. সজল আশফাক: শ্যামা সারাদিন বাইরে ঘুরে বেড়ায়। বাইরে না গিয়েও উপায় নেই। কলেজ শেষে সদ্য ভার্সিটিতে পা রাখতে হচ্ছে। সকালে কোচিং, দুপুরে কম্পিউটারের ক্লাস, বিকেলে কখনো ড্রাইভিংয়ের ডেট, কখনো ড্রেস ডিজাইনের কাজ শেখা। প্রচণ্ড ব্যস্ততায় সারাটা দিনই বলতে গেলে বাইরে কাটে। তার মধ্যে কম করে হলেও ১ ঘণ্টা রোদের সংস্পর্শে আসতে হয়। ইদানীং শ্যামার আশপাশের সবাইকে বলতে শোনা যায়- তোর গায়ের রংটা যেন ডার্ক হয়ে যাচ্ছে!

ব্যাপারটা শ্যামাও খেয়াল করেছে। আসলে তাই, রোদ ত্বকের বিশেষ ক্ষতি সাধন করে। ত্বকের প্রায় ৯০ ভাগ ভাঁজের জন্য রোদ দায়ী। কিন্তু কর্কশ রোদের কারণে তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের যে ক্ষতি হয়, তা থেকেও যে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, সেটি বোধ হয় অনেকেরই জানা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু রোদ এড়িয়ে এবং সত্যিকারের সানস্ক্রিন ব্যবহার করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোদের কারণে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা যায়। এই কৌশল অবলম্বন করে দেখা গেছে, ত্বকের নিচে অবস্থিত টিস্যু বা কলা নিজে থেকেই পুননির্মাণ এবং নবায়িত হতে থাকে। কিন্তু এই কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যে বিষয়ে অনেকেই ততটা অবগত নন। এ বিষয়ে ডার্মাটোলজিস্ট বা ত্বক বিশেষজ্ঞের কথা হচ্ছে, সারা বছর ধরে প্রতিদিন অবশ্যই কমপক্ষে ১৫ সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ) ক্ষমতাসম্পন্ন সানস্ক্রিন বা ময়েশ্চারাইজার শরীরের উন্মুক্ত অংশে মাখতে হবে। আর এটি মেখে রাখতে হবে বারান্দা বা রোদে কোনো কাজ করতে গিয়ে দাঁড়াবার সময়, জানালা দিয়ে উঁকি দেয়া রোদের সংস্পর্শে আসার সময়। এমনকি শীতের মিষ্টি রোদের সংস্পর্শে আসার সময়েও এই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এভাবে নিয়ম মেনে রোদের আড়ালে চলতে পারলে ২/১ বছরের মধ্যেই ত্বক আবার আগের মতো কোমল এবং আরো স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পাবে। কিন্তু সানস্ক্রিনটি সঠিক হতে হবে। অনেক নামীদামি কোম্পানি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্রিমে সানস্ক্রিনের উপস্থিতির কথা বললেও মোড়কে এসিপএফ মাত্রা উল্লেখ না থাকার কারণে সেগুলোর মধ্যে আদৌ কোনো সানস্ক্রিন আছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। সানস্ক্রিনের মাত্রার বিষয়টি মনে রাখতে হবে। আমাদের দেশের জন্য সানস্ক্রিনের মাত্রা কমপক্ষে ১৫ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই সানস্ক্রিন কেনার সময় এগুলো দেখে নিতে হবে। ওষুধ এবং কসমেটিক্সের দোকানে সানস্ক্রিন পাওয়া যায়।

রোদের সংস্পর্শে এলেই যে ত্বক বাদামি হয়ে যাবে, তা নয়। রোদের কারণে ত্বকের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াও সম্ভব। তবে দীর্ঘদিন ধরে যাদের ত্বক রোদে পুড়ছে, তাদের ক্ষেত্রে এই কৌশল অবলম্বন করে ফল পেতে একটু বেশি সময় লাগবে। তাছাড়া যাদের বয়স ইতিমধ্যে ৫০ অতিক্রম করেছে তাদের ক্ষেত্রে ফল পেতে আরো বেশি সময় লাগবে। কারণ বৃদ্ধ বয়সে এমনিতেই ত্বক স্থিতিস্থাপকতা হারাতে থাকে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৭/তারা