ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কম ঘুমানোর প্রশিক্ষণ

ইয়ামিন আরচুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কম ঘুমানোর প্রশিক্ষণ

প্রতীকী ছবি

ইয়ামিন (আরচুভ) : কাজগুলো শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই, এমন সময় ঘুমকে জন্মান্তরের শত্রু মনে হতেই পারে। একটু কম ঘুমানোর অভ্যাস করতে পারলে কেমন হতো? কিভাবে নিজেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ঘুমকে নিয়ন্ত্রনাধীন করা যাবে?

হ্যাঁ, এটা সম্ভব। কিছু গবেষণাও হয়েছে এই ব্যাপারে, তবে তা সবার জন্যে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।

আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিনের সাবেক সভাপতি এবং পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাইছ এর মতে, ‘যাদের কম ঘুম দরকার তাদের চেয়ে কম ঘুম পছন্দকারী লোকের সংখ্যা অনেক বেশি।’

যদিও একজন মানুষের সুস্বাস্থ্য এবং বয়সের অনুপাত হারে প্রতি রাতেই ঘুম দরকার, প্রতি রাতে একজন স্বাভাবিক সু-স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্কের সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুযায়ী বেশিরভাগ মানুষই ঘুমের পরিমাপ সম্পর্কে সচেতন না।

বাইছ আরো বলেন, ‘মস্তিষ্ক এবং দেহের পূর্ণ সক্রিয়তার জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ, পরিপূর্ণ ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের নতুন নিউরো সংযোগ এবং পুনঃ সংযোগ স্থাপন বিঘ্নিত হয়।’

আর এই কারণে সূক্ষ্ম চিন্তাশীল কাজে মনোনিবেশ করা এবং নতুন ও পুরোনো তথ্যগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে উঠে। উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেড়ে যাওয়া এবং হৃদরোগ সহ অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার কারণ এই ঘুম ঘাটতি।

আপনি হয়তো টেরই পান না যে, আপনার দেহ আপনার অজান্তেই ঘুমের ঘাটতি নিয়ে এবং এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে সচেতন। অক্সফোর্ড স্লিপ রিসার্চ সোসাইটির এক বিখ্যাত গবেষণামূলক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রতি রাতে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই বেশিরভাগ লোক ঘুম থেকে জেগে উঠে।

কম ঘুম এবং কম সক্ষমতা নিয়ে যারা মোটেও ভ্রুক্ষেপ করে না, এদের মধ্যেও যারা একটানা দুই রাত ঘুমায়নি তাদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা এবং সচলতা আগের চেয়ে কমে গিয়েছিল এবং ঘুমের নতুন সময়সূচিকেও তাদের দেহ গ্রহণ করে নাই।

বাইছ এর মতে, ‘কখনো কখনো ঘুমের ঘাটতি ব্যাপারটা নেশাগ্রস্ত মাতালের মতো, কাউকে ভারসাম্যহীন মনে হওয়ার পেছনেও এই ঘুমের ঘাটতি দায়ী হতে পারে।’

ঘুমের এতো প্রয়োজনীয়তা সত্বেও ইংল্যান্ডের লঘবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্তন পরিচালক জিম হর্ন এর মতানুসারে, কম ঘুমানোর প্রক্রিয়া আয়ত্ব করে মস্তিষ্ক এবং দেহকে স্বাভাবিক সক্রিয় রাখা সম্ভব।  তার মতে, ‘একজন মানুষকে প্রতি রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, ব্যক্তির ঘুমের চাহিদার ওপর নির্ভর করে আরো কম ঘুমিয়েও সুস্থ স্বাভাবিক থাকা সম্ভব। লোকজনকে কমই ঘুমাতে হবে এমন কোনো কথা নেই বরং আমি বলতে চাচ্ছি যে, ঘুমের স্বল্পতা নিয়ে যেন লোকজন দুশ্চিন্তা না করে।’

হর্ন আরো বলেন, ‘বিশেষ করে দিনের বেলায় পুরোপুরি জেগে থাকলে নাক ডাকা ঘুমের জন্য বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।’

হর্ন তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, দিনের বেলায় হালকা ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ধীরে ধীরে রাতের ঘুমকে ছয় ঘন্টায় কমিয়ে আনা সম্ভব।

এক গবেষণায় তিনি, সাত থেকে সাড়ে আট ঘণ্টা ঘুমানোয় অভ্যস্তদের প্রতি রাতে নির্দিষ্ট সময় পর ঘুমোতে যেতে বললেন। স্বেচ্ছা-সেবকরা তাদের ঘুম ভাঙার সময় ঠিক রেখেই প্রথম সপ্তাহে এক ঘণ্টা ও পরের তিন সপ্তাহের ঘুমের রুটিন দেড় ঘণ্টা পিছিয়ে (ঘুম কমিয়ে দিয়েছে) দিলেন। এই ধরনের চর্চায় দেখা গেল যে, মাত্র সাড়ে ছয় ঘণ্টার ঘুমেই তৃপ্ত ও সতেজ থাকা যায়।

ঘুম কম হচ্ছে বলে যারা দুশ্চিন্তা করেন, তাদের এই অভ্যাস না করাই ভালো বলে মনে করেন হর্ন। তবে যারা আগ্রহী তাদের ক্ষেত্রে, দেরী করে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাসটা ধীরে ধীরে করাই ভাল। হর্ন বলেন, ‘এই চর্চার ফলে যদি দিনের বেলায় ঘুম ঘুম পায় তবে ধরে নেয়া যায় যে ছয় ঘণ্টা ঘুম আপনার জন্যে যথেষ্ঠ না, আপনার আরো ঘুম দরকার।’ তার মতে, কম ঘুম হয়েছে বলে দুশ্চিন্তা না করে বরং ঘুমের গভীরতার দিকে নজর দেয়া উচিত।

জেগে থাকা সময়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করলে, খুব অল্প সময়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি (ঘুম কম হবে, তবে গভীরতা এবং তৃপ্তি থাকবে)। ধরে নেয়া যায়, এটাও ঘুম কমানোর একটি উপায়।

পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের সেন্টার ফর স্লিপ অ্যান্ড সার্কাডিয়ান নিউরোবায়োলজির অধ্যাপক সিগ্রিদ ভাসে, বিকেলে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। এটা আপনার দেহের তাপমাত্রা বাড়াবে এবং ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, যা দ্রুত এবং গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

ঘুমকে (দেহকে স্বাভাবিক রেখে) কমিয়ে আনার আর একটা উপায় হল, সন্ধ্যার পর ভারী খাবার না খাওয়া। ঘুমানোর আগে নানা বিষয় নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করলে অবশ্যই আপনার সুখনিদ্রা ব্যাহত হবে।

যদি গভীর ঘুম চান তবে সব জায়গাতেই সেটা সম্ভব। তবে পর্যাপ্ত ঘুম হয়েছে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের জন্য লাগাতার ঘুম-ই একমাত্র সহায়ক।

তথ্যসূত্র : টাইম

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়