ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কাতার সংকটে ‘রহস্যজনক’ ভূমিকায় উত্তর কোরিয়া

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৭ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাতার সংকটে ‘রহস্যজনক’ ভূমিকায় উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাতার বনাম সৌদি নেতৃত্বাধীন ব্লকের মধ্যে কূটনৈতিক সংকটে হাজারো কিলোমিটার দূরের কঠোর বামঘেঁষা উত্তর কোরিয়া রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে!

কয়েক দিন ধরে এই সংকটকেন্দ্রীক বিরোধের উভয় পক্ষ উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করার জন্য পরস্পরের ওপর দোষারোপ করছে। কূটনৈতিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নপ্রায় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অবৈধ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখা নিয়ে কাতার ও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি চলছে।

পিয়ংইয়ংয়ের অবৈধ পারমাণবিক অস্ত্র কার্যক্রমে সাহায্য করার অভিযোগ তুলে একে অপরকে দূষছে উপসারগীয় সংকটের বিবদমান দুই পক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের ‘চোখের বালি’ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর অবৈধ অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে চলে আসায় বিদ্যমান সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

গত সপ্তাহে এক খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত আমিরাতের একটি কোম্পানির ১০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির অভিযোগ রয়েছে। চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয় খবরে। খবরটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই গত মঙ্গলবার সংবাদপত্র হিল-এ বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কাতারের ‘ভয়ংকর’ সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই খবর উপসাগরীয় সংকটে নতুন উত্তাপ জোগায়।

সামান্য হলেও এই দুই অভিযোগের কিছু সত্যতা রয়েছে। ২০১৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের কিছু ই-মেইল ফাঁস হয়। একটি আমিরাতি কোম্পানির কাছে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রির চুক্তির বিষয়টি প্রথম তাতে উঠে আসে। এ-সংক্রান্ত প্রথম খবর প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। ফাঁস হওয়া ই-মেইলগুলোতে দেখা যায়, ওই চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছিল।

কাতারের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের খবরেরও সত্যতা রয়েছে। বিশ্বের যে অল্প কয়েকটি দেশ উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের কাজের সুযোগ দেয়, তার মধ্যে কাতার একটি। কাতারে প্রায় ৩ হাজার উত্তর কোরীয় কাজ করছেন। তাদের অধিকাংশই নিয়োজিত রয়েছেন ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠেয় ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে।

এই দুই খবর পারস্য উপসাগরের কূটনৈতিক সংকটে ‘প্রোপাগান্ডা ওয়ার’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে। শত্রুপক্ষকে ঘায়েল বা নাজেহাল করার উদ্দেশ্যে সত্য-মিথ্যার মিশেলে তথ্য প্রচার করাই প্রোপাগান্ডা, যা মূলত সংকটকালীন সময়ে বিবদমান পক্ষগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এই দুই পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র চুক্তিটি সামনে আনতে কাজ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘গালফ অ্যাফেয়ার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারী সৌদি নাগরিক আলী আল-আহমেদ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। অস্ত্র চুক্তির তথ্য ফাঁস করার পর তা প্রচারে উঠেপড়ে লাগে কাতারের কিছু সংবাদমাধ্যম। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের লবিং গোষ্ঠী সৌদি আমেরিকান পাবলিক রিলেশনস কমিটি সংবাদপত্র হিলে কাতারে উত্তর কোরীয়দের কাজ করার খবর প্রকাশ করে।

উপসাগরীয় সংকট নিরসনের উপায় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে বিভক্তি রয়েছে। বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে কাতার ও সৌদি নেতৃত্বাধীন ব্লক। যে কারণে একে অপরের দোষ-ত্রুটিগুলো প্রচারে আনছে। সম্প্রতি কাতার ও আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কের যে অভিযোগ উঠেছে, তাও আমলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের শক্ত সমর্থন আদায় করাই যেন দুই পক্ষের প্রোপাগান্ডা যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর অস্ত্র চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে গ্রহণ করবে না- এটিই স্বাভাবিক। সম্প্রতি পিয়ংইয়ং আন্তঃমহাদেশীয় বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করেছে এবং দাবি করেছে, তাদের অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আঘাত করতে সক্ষম। উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত রাখতে আন্তর্জাতিক মহলে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই অবস্থায় উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের খবর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিঃসন্দেহে মাথা ব্যথার কারণ।

তথ্যসূত্র : এনডিটিভি অনলাইন

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়