ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মুখ খুলেছেন সু চি

রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুখ খুলেছেন সু চি

অং সান সু চি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে অবশেষ মুখ খুলেছেন অং সান সু চি।

২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হলেও গত ১২ দিনে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন তিনি। নীবর দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলেন। তার এ মৌনব্রত পালন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সু চি দাবি করেছেন, রাখাইন রাজ্যের সব মানুষের রক্ষায় কাজ করছে তার সরকার। তবে সংঘর্ষ নিয়ে ‘ব্যাপকভাবে ভুল তথ্য’ চাউর হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এবং বলেছেন, এতে সন্ত্রাসীদের স্বার্থ প্রচার পাচ্ছে।

মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রীয় পরামর্শক নোবেলজয়ী সু চির কার্যালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করেন নেত্রী।

১২ দিনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন রাজ্যে কমপক্ষে ৪০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। শত শত বসতবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথেও তাদের হত্যা করা হয়েছে। শিশু-বৃদ্ধ কেউ-ই মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরতার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা। তারা বাঁচাতে চাইছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের এই নির্মম অত্যাচারের মধ্যে শেষ পর্যন্ত যে কথা বললেন সু চি, তা তার আগের অবস্থানের পুনর্ব্যক্তি ছাড়া কিছুই নয়।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সাংবিধানিকভাবে নাগরিকত্বের অধিকার না দেওয়ায় সংখ্যালঘু এই জাতিটি মূলত রাষ্ট্রহীন ও ভাসমান। মিয়ানমারে কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে কোনোমতে বেঁচে আছে তারা। প্রায় ৭০০ বছর ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে (সাবেক আরাকান রাজ্য) বসবাস করলেও মিয়ানমার সরকার দাবি করে, তারা বাঙালি। এ বিষয়ে সু চির বক্তব্যও তাই।

এরদোয়ানের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয় নিয়ে বুধবার বিবৃতি প্রকাশ করে সু চির কার্যালয়। স্থানীয় গণমাধ্যমে তার বিবৃতি ছাপা হয়েছে। তিনি তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে বলেছেন, যতটা সম্ভব সবচেয়ে উত্তম উপায়ে রাখাইনের সব মানুষকে রক্ষার কাজ শুরু করেছে তার সরকার।

সু চিকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভালো করেই জানি, অনেক বেশিই ভালো জানি, মানবাধিকারের বঞ্চনা ও গণতান্ত্রিক সুরক্ষার অর্থ। সুতরাং আমরা নিশ্চিত করছি, আমাদের দেশের সব মানুষের অধিকারের সুরক্ষা আছে এবং সেই অধিকার, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক ও মানবিক সুরক্ষার অধিকর।’

বিবৃতিতে সু চির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, সংঘর্ষ  নিয়ে অনেক ভুল সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে, যা ব্যাপকভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমস্যা বাড়াতে এবং সন্ত্রাসীদের স্বার্থ প্রচারের উদ্দেশ্যে এ কাজ করা হচ্ছে।

২৫ আগস্ট মিয়ানামরের পুলিশ ও সেনা চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর সংঘর্ষ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির সেনাবাহিনী কোনো রূপ বাছবিচার ছাড়াই রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন শুরু করে। তাদের সঙ্গে বৌদ্ধ মৌলবাদীরা যুক্ত হয়ে সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। দুর্গম রাস্তাঘাট ও পাহাড়-নদী পার হয়ে প্রাণ বাঁচানোর আকুতি নিয়ে রোহিঙ্গারা ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এসব তথ্য জানাচ্ছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন কিছু নয়। গত বছর অক্টোরব মাসে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলেও তিনি দীর্ঘদিন চুপ ছিলেন এবং পরে দাবি করেছিলেন, না, রোহিঙ্গা নিধন হচ্ছে না। এবারও তেমন দাবি করলেন।

সু চির বক্তব্য নিয়ে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেছেন, রাখাইনের সব মানুষের সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সব মানুষ আর এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা নিধন এক বিষয় হতে পারে না। ফলে তার মুখ খোলা অথবা বন্ধ রাখায় রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো লাভ হলো না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়