ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পেশীর খিঁচুনি স্বাস্থ্যের যেসব লক্ষণ প্রকাশ করে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পেশীর খিঁচুনি স্বাস্থ্যের যেসব লক্ষণ প্রকাশ করে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অনিয়মিত বা হঠাৎ পেশীর অনৈচ্ছিক সংকোচন বা খিঁচুনি সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু ঘন ঘন পেশীর খিঁচুনি শারীরিক কোনো রোগ বা খারাপ অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে।

১. আপনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করেছেন

অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে পেশীর খিঁচুনি হতে পারে। পেশীর ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য কিছু উপকারী ডু-ইট-ইউরসেলফ বা নিজে করুন জাতীয় প্রতিকার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এর চেয়েও বেশি কিছু প্রয়োজন হয়। পিঠ, পা কিংবা ঘাড়ের খিঁচুনি এমন পেশী থেকে হতে পারে যা শ্রমসাধ্য বা পুনরাবৃত্তিমূলক নড়াচড়ার (যেমন- বাগান করা, পরিষ্কার করা, বাচ্চাকে ধরে রাখা ইত্যাদি) ফলে অতিরিক্ত শ্রম করেছে। জর্জিয়ার গ্রিফিনে অবস্থিত আইরিস সিটি কাইরোপ্র্যাকটিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট হেইডেন পিএইচডি বলেন, ‘পেশী ক্লান্ত এবং আহত হয়, এর ফলে আপনার খিঁচুনির অভিজ্ঞতা হবে।’ তিনি প্রায় সময় খিঁচুনি চক্র ভাঙার জন্য তার অফিসে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সেশনের ইলেক্ট্রোথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

২. আপনার পিঠে ডিস্ক সমস্যা আছে

পিঠের খিঁচুনি খুব অস্বস্তিকর এবং নির্ণয়ে কঠিন হতে পারে। ফিজিওলজিক এনওয়াইসি এর ফ্রেশ মেড বিভাগের চিকিৎসক রবার্ট গ্রাহাম বলেন, ‘খিঁচুনি তিনদিনের বেশি থাকে এবং কাশি বা হাঁচির দ্বারা এটি খুব বেদনাদায়ক হতে পারে বা অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। পিঠে ডিস্ক সমস্যার কারণে হয়তো এমনটা হতে পারে।’ পায়ের নিচে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে কিনা কিংবা অবশতা বা রণন হয় কিনা খেয়াল রাখুন। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু অনুসন্ধান বা পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

৩. আপনার ধমনী রোগ রয়েছে

ধমনীতে প্লেক সৃষ্টি হলে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ পায়ে হয়ে থাকে। এ রোগে আপনি ব্যথা বা অবশতা অনুভব করতে পারেন অথবা পায়ের আঙুলের লোম অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। ড. হেইডেন বলেন, রোগীরা অভিযোগ করেন যে পায়ের খিঁচুনি হলে হাঁটা শুরু করলে পেশী সংকোচনগত ব্যথা শুরু হয়। এ প্রসংগে তিনি বলেন, এটি পেশীতে নিজস্ব রক্ত সরবরাহে দ্রুত প্রতিবন্ধকতার লক্ষণ এবং এ প্রতিবন্ধকতা হয় রক্ত সরবরাহ পথে রেড ফ্ল্যাগ থাকার কারণে। এক্ষেত্রে হেইডেন রোগ নির্ণয়ে রোগীর রক্ত সংবহন পরীক্ষা করে দেখেন এবং তাদের সেবনকৃত পিসিপি (পেন্টাক্লোরোফিনল) ড্রাগ সম্পর্কে জেনে নেন।

৪. আপনি ক্লান্ত হয়েছেন

আপনি কি জানেন আপনি কিভাবে মাঝেমাঝে বিরক্তিকর চোখের খিঁচুনির সম্মুখীন হন? চোখের খিঁচুনি হলে আপনার চোখের পাতার উঠানামা বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি বিরক্তিকর বা ঝামেলাপূর্ণ হয় না এবং মাঝেমাঝে চোখে খিঁচুনি হওয়াটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ঘটনা। আপনার মতোই চিকিৎসকদের পক্ষে এ রোগের কারণ নির্ণয় কঠিন হতে পারে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের সহযোগী অধ্যাপক রবিন মেইয়ার বলেন, ‘এর কারণ নির্ণয়ের জন্য ভালো কোনো উপায় নেই। ক্লান্তি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন অথবা চোখে বা চোখের আশেপাশে জ্বালাতনের কারণে এটি হতে পারে।’ যদি এটি ঘনঘন হয়ে থাকে অথবা আপনার চোখের দৃষ্টিতে প্রভাব ফেলে তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। চিকিৎসক আপনার পরিবারের রোগের ইতিহাস, ওষুধের ব্যবহার এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাবেন।

৫. আপনি ডিহাইড্রেটিং ওষুধ সেবন করছেন

আপনার সেবনকৃত ওষুধ আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অসুস্থতার উপসর্গসমূহ সম্পর্কে জানুন, পেশীর খিঁচুনি এসব উপসর্গের একটি হতে পারে। হেইডেন বলেন, ‘কিছু ওষুধ আপনাকে পেশীর খিঁচুনির দিকে বেশি করে ধাবিত করবে এবং ডায়াবেটিকস বা ওয়াটার পিলস নিশ্চিতভাবে তাদের একটি।’ তিনি বলেন, ‘এসব ওষুধ কিডনিকে চাঙা করে তার কার্যক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তৈরি করা হয়। আপনার শরীর থেকে যখন অতিরিক্ত পানি চলে যায়, তখন আপনি ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যও হারান।’ কিছু ওষুধ উপকারী পরিপোষক পদার্থ পটাশিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম নিঃশেষ করে দিতে পারে যা পেশীর সঠিক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। কোনো ওষুধ গ্রহণের পূর্বে কিংবা জীবনধারায় কোনো পরিবর্তন আনতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যে ওষুধ সেবন করছেন তা যদি পটাশিয়াম হ্রাস করে তাহলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কলা এবং মিষ্টি আলু খেতে পারেন।

৬. আপনি তির্যকভাবে ঘুমান

আপনি যদি কৌণিক বা তির্যকভাবে ঘুমান এবং এ সময় একেবারেই নড়াচড়া না করেন তাহলে খিঁচুনি হতে পারে। ড. মেইয়ার ব্যাখ্যা করেন, ‘আপনার পিঠে বিভিন্ন দিকে যাওয়া একটি বৃহৎ পেশী পুঞ্জ রয়েছে। আপনি যদি ঘাড় তেরচা বা বাঁকা করে ঘুমান তাহলে ওই পেশীর যেকোনো সরু তন্তুতে আঘাত লাগতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এরকম ঘটলে ওই পেশীকে রক্ষার জন্য আশেপাশের পেশীসমূহে খিঁচুনি হয়।’ বিপজ্জনক না হলেও এটি আপনার শ্বাসক্রিয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রসারিত হয়ে ঘুমান এবং মাঝেমাঝে নড়াচড়া করুন। পিঠের খিঁচুনি বা ব্যথার ক্ষেত্রে ঘুমানোর ভঙ্গি প্রভাব রাখে। এ ব্যাপারে আপনি উদ্বিগ্ন হলে ডাক্তারের দ্বারস্থ হোন। ব্যথা যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে না যায় তাহলে অবশ্যই চেকআপ করাবেন।

৭. আপনি দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে টাইপ করেন

আপনি হয়তো ছুটির দিনে সঙ্গীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে টেনিস খেলেন অথবা সারাদিন কম্পিউটারে টাইপ করেন। এক্ষেত্রে আপনার পেশীর খিঁচুনি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে হেইডেন বলেন, ‘এরকম পুনরাবৃত্তিমূলক গতি উপরস্থিত পিঠের রম্বয়েড পেশীকে ক্লান্ত করে এবং এর ফলে পেশীর খিঁচুনি হতে পারে।’ তিনি বলেন, “রোগীরা বলে যে ‘আমি অনুভব করি আমার পিঠে ছুরি বিদ্ধ হয়েছে’।” অফিসে অবস্থানকালে ইলেক্ট্রোথেরাপি গ্রহণে আরামবোধ করতে পারেন। ঘরে থাকলে বরফ চিকিৎসা নিতে পারেন। এর জন্য কোনো ছোট কাপে ১.৫ ইঞ্চি সমান পানি নিয়ে রেফ্রিজারেটরে রেখে বরফ বানিয়ে নিন, তারপর কাপ থেকে বরফ আলাদা করে খিঁচুনির জায়গায় ম্যাসাজ করুন। এতে আরাম পাবেন।

৮. আপনার পুষ্টির অভাব আছে

আপনার ইলেক্ট্রোলাইট (ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম) পেশীর সংকোচনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ব্যাহত হলে পেশীতে আকস্মিক টান বা ঝাঁকি, ব্যথা এবং দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে। আপনার চিকিৎসক এসব উপাদানের কোনো একটির ঘাটতি আছে কিনা বিবেচনা করবেন। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এসব উপাদানের ঘাটতি মেটাবে এবং গুড-ফর-ইউ খাবার পর্যাপ্ত ইলেক্ট্রোলাইট সরবরাহ করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দই এবং কলা উভয়ের মধ্যে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।

৯. আপনি সন্তানসম্ভবা

আপনি সন্তানসম্ভবা হলে অনেক আশ্চর্য বিষয়ের সম্মুখীন হতে পারেন এবং বিছানায় পায়ের গুলের খিঁচুনি এসব আশ্চর্য বিষয়ের একটি। চার্লি হর্স বা পায়ের গুলের খিঁচুনি প্রসঙ্গে ড. মেইয়ার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে গর্ভবতী মহিলাদের কাছ থেকে অনেক বেশি প্রশ্ন শুনি।’ তিনি বলেন, ‘এটি কি কারণে হয় তা অস্পষ্ট, কিন্তু বক্র গোড়ালি প্রসারিত করলে পেশী সংকোচন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’ গর্ভবতী না হওয়া স্বত্ত্বেও পেশীকে অতি উদ্যম রাখার কারণে, যেমন- সকালে অতিরিক্ত দৌঁড়লে বা জলাশয়ে বেশিক্ষণ সাঁতার কাটলে মাঝেমাঝে চার্লি হর্স হতে পারে। যদি সম্ভব হয় চার্লি হর্সের ভিডিও ধারণ করে ডাক্তারকে দেখান।

১০. আপনি ডিহাইড্রেটেড আছেন

শুষ্ক বা ডিহাইড্রেটেড থাকলে খিঁচুনি হতে পারে। পরিমিত মাত্রায় হাইড্রেটেড থাকলে খিঁচুনিমুক্ত থাকা যায়। ড. মেইয়ার মন্তব্য করেন, ‘শরীরে পানির মাত্রা কমে গেলে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়।’ এটি অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে বেশি হয় যখন তারা গরম আবহাওয়ায় দীর্ঘ এবং কঠোর পরিশ্রম করেন। আমেরিকা কাউন্সিল অব এক্সারসাইজ অনুশীলন করার সময় ১০ থেকে ২০ মিনিট পরপর ৭ থেকে ১০ আউন্স তরল পানের পরামর্শ দেন। কিন্তু আপনি যদি গরমে ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটেরও বেশি অতি পরিশ্রমের কাজকর্ম করেন তাহলে স্পোর্টস ড্রিংক পানে হারানো ইলেক্ট্রোলাইট পুষিয়ে নিন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়