ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

দেহের অদ্ভুত ৭ অংশ ও তাদের বিস্ময়কর উদ্দেশ্য

তাসফিয়া আইরিন শুভ্রা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেহের অদ্ভুত ৭ অংশ ও তাদের বিস্ময়কর উদ্দেশ্য

প্রতীকী ছবি

তাসফিয়া আইরিন শুভ্রা : যে দেহটাকে আমরা বহন করে বেড়াই, তার সম্পর্কে কত তথ্যই না অজানা। চলুন জেনে নিই দেহের অদ্ভুত কিছু অংশ সম্পর্কে।

আলজিভ
আমাদের গলার ভেতরে যে ছোট্ট আলজিভ রয়েছে, সম্ভবত অনেকেই তা খেয়াল করে দেখেন না। কিছু তত্ত্বে উল্লেখ রয়েছে, আলজিভ কেবল মানুষের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের কথা বলতে ও জলখাবার খেতে সাহায্য করেছিল। এর সুস্পষ্ট কাজ হলো, দ্রুত বিপুল পরিমাণ লালা তৈরি করে দেওয়া। হিসেবে দেখা যায়, আলজিভ একজন মানুষের জীবনে গড়ে দুইটি সুইমিং পুল পরিমাণ লালা উৎপাদন করে। এটি নাক ডাকায়ও যুক্ত হতে পারে। ইতালির একটি গবেষণা অনুযায়ী, যারা কম নাক ডাকেন তাদের নাকের সঙ্গে আলজিভের কম স্নায়ু ফাইবার ছিল। 

ভ্রু
যদিও লোমশ রেখাগুলো বিশেষ করে তাদের যোগাযোগের জন্য দরকারি হয় যারা বলে ‘বলো কি?’। তবে ভ্রুর প্রধান কাজ হলো বাজে জিনিস, পানি, সূর্য থেকে আপনার চোখ রক্ষা করা। এছাড়াও ভ্রু মুখের স্বীকৃতিতে অন্যতম উপাদান। এমআইটির একটি গবেষণায় ৫০ জন বিখ্যাত ব্যক্তির চোখ ডিজিটালভাবে সরিয়ে যখন সেচ্ছাসেবকদের শণাক্ত করতে বলা হলো তখন তারা মাত্র ৬০ শতাংশকে চিনতে পারে। যখন ভ্রু সরিয়ে দেওয়া হলো তখন সেচ্ছাসেবকরা মাত্র ৪৬ শতাংশকে শণাক্ত করতে পেরেছিলেন। অন্য কথায়, ভ্রু মুখের স্বীকৃতির জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বগলে চুল বা কক্ষ চুল
এই অবাঞ্চিত চুল প্রায়ই শরীরের প্রাকৃতিক গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে। বগলের ত্বকের শুষ্কতা বজায় রাখার জন্যই এই চুল। যা হোক, বর্তমান নারীরা সাধারণত এই যৌনসংকেত প্রয়োগকারী চুল সরিয়ে ফেলে। প্রক্টর ও গ্যামবলের তথ্যে দেখা যায়, ২৯ শতাংশ আমেরিকান পুরুষ ও ৪৯ শতাংশ ব্রিটিশ পুরুষ নিচ অংশে থাকা চুলগুলো ছেটে ফেলে।

টনসিল
আপনি যদি কখনো আপনার গলা পরীক্ষা করান তাহলে লক্ষ্য করবেন সেখানে নরম ছিদ্রবহুল একটি জায়গা রয়েছে, যা মুখের পিছনের অংশে বাদামের আকৃতির মতো টিস্যু। এটি লাল বা সাদার মধ্যে ভারাক্রান্ত দেখায়। লসিকানালীর অংশ হিসেবে টনসিল নাক ও মুখের মধ্যে প্রবেশ করে এমন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তবে তারাও (টনসিল) জীবাণু বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। যেহেতু টনসিল শরীরের শক্তিশালী প্রতিরক্ষার একটিমাত্র উপাদান, সেহেতু দুরারোগ্য অসুস্থতা বা শ্বাসজনিত সমস্যা হলে টনসিল অপসারণ করা যায়। তবে বর্তমান সময়ের চিকিৎসকরা অনেক সচেতন। তারা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সার্জারির পরামর্শ দেন।

আঙুলের নখ
অর্থনীতিতে নখ বেশ ভালো সাহায্য করলেও (ডব্লিউডব্লিউডি’র তথ্যানুসারে, ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৬৮ মিলিয়ন ডলারের নেইলপলিশ বিক্রি হয়েছে), শ্রেষ্ঠ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণি ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে আলাদ করাতে প্রধান বৈশিষ্ট হলো, আঙুলের নখ। বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর নখ ফোলা, কিন্তু আমাদের চেপ্টা। যেখানে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ফল ও গাছের ডালপালা চেপে ধরার জন্য আঙুলের নখ ব্যবহার করতেন, সেখানে আজ আমরা ছোট জিনিস যেমন কাগজ বা কয়েন খোঁচাতে এটি ব্যবহার করি। আঙুলের নখগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জানালা হিসেবেও কাজ করে। নখের বিবর্ণতা অথবা দাগগুলো শারীরিক বিপত্তির সংকেত দিতে পারে যেমন অপুষ্টিতা অথবা ত্বকের সমস্যা।

অ্যাপেন্ডিক্স
অ্যাপেন্ডিক্স হলো অন্ত্র থেকে প্রসারিত সাড়ে ৩ ইঞ্চির একটি প্রসারিত দীর্ঘ গ্রন্থি, উদ্দেশ্যের চেয়ে এটিকে বেশি মারাত্মক মনে হয়। যখন এটি বড় (আঘাত বা সংক্রমণ থেকে) হয় তখন শরীরের ভেতরে মারাত্মকভাবে বিস্ফোরিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় তা ছড়িয়ে দেয়। অ্যাপেন্ডিক্স নামের এ রোগ শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ হাজার জনকে আক্রমণ করে। যখন অ্যাপেন্ডিক্স সরানো হয় তখন শরীরে লক্ষনীয় কোনো প্রভাব দেখা যায় না। যাহোক, সম্প্রতি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ‘নিরাপদ ঘর’ হিসেবেই কাজ করে অ্যাপেন্ডিক্স। যা গ্রামঅঞ্চল অথবা কম উন্নত দেশের মানুষের জন্য উপকারী হতে পারে। যদি কারো ভালো অ্যাপে দরকারী হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, আধুনিক শিল্প উন্নত সমাজে যদি কারো ভালো অ্যাপেন্ডিক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এটি সহজেই অন্যদের কাছ থেকে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।

আক্কেল দাঁত
শল্যচিকিৎসার অসুবিধা হিসেবে সবচেয়ে পরিচিত আক্কেল দাঁত। এটি মূলত পোষণদন্তের তৃতীয় সেট, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের শিকড়, বাদাম এবং মাংসের মতো রুক্ষ খাবারের ওপর চুপচাপ সাহায্য করেছিল, বিশেষত যখন অন্যদাঁত পড়ে যায়। প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষের আক্কেলদাঁত বিকশিত হয় না। বাকিদের ১০ বছর বয়স থেকে এটি উন্নত হতে শুরু করে, যা ১৭ থেকে ২৫ বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিকশিত হয়। এই বয়সের মধ্যে দাঁতগুলো তাদের নাম দেয়, বিশেষত এটি সেই সময়কে নির্দেশ করে যখন কম অল্পবয়সি ছেলে মেয়েরা বুদ্ধিমান হয়ে উঠে। যদিও পূর্ণ সাবালক বা স্বাস্থ্যবান আক্কেল হলে দাঁত ফেলার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি এটি বাম পাশে হয় তাহলে গাম রোগ, পুষকোষ অথবা কাছের দাঁতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ২০০৭ সালের আমেরিকান হেলথের আমেরিকান জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন আক্কেল দাঁত বের করা হয়, যা ৫ মিলিয়ন থেকে শুরু হয়।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ অক্টোবর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়