ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

হৃদয় ভেঙে গেলে চিকিৎসা জরুরি!

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২০ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হৃদয় ভেঙে গেলে চিকিৎসা জরুরি!

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ব্রিটিশ গবেষকরা দাবি করেছেন, গুরুতর মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের মতো হার্টের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে।

কোনো প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ বা প্রিয়জনের মৃত্যুর শোকে হার্টের পেশী হঠাৎ করে আঘাতপ্রাপ্ত বা দুর্বল হয়ে গেলে ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ বা ট্যাকোটসুবো হয়ে থাকে।

চিকিৎসকরা এতদিন ধারণা করেছেন, এ ক্ষতি সাময়িক এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষপর্যন্ত এটি সেরে যায়। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিনের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, ট্যাকোটসুবো স্থায়ীভাবে হার্টকে দুর্বল করে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাকের সমতুল্য।

দীর্ঘস্থায়ী চলমান গবেষণায় তারা এ পর্যন্ত ৩৭ জন ট্যাকোটসুবো রোগীকে গড়ে ২ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা নিয়মিত তাদের হার্টের আল্ট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যান সম্পন্ন করেন এবং আবিষ্কার করেন যে প্রথম যে ঘটনার জন্য এ ক্ষতি হয় তখন থেকে তা দীর্ঘদিন ধরে থাকে। এ গবেষণার অনেক রোগী খুব সহজে দুর্বল হয়ে যান এবং ব্যায়াম করতে অসমর্থ হয়ে পড়েন, যদিও ডাক্তাররা মনে করেছেন যে তারা সেরে ওঠেছে।

গবেষকরা বলেন, ট্যাকোটসুবো রোগীদের সেসব ওষুধ সেবন করতে দেওয়া উচিত যা হার্ট অ্যাটাকের কারণে হার্টের ক্ষতিগ্রস্তরা সেবন করেন। তারা এ গবেষণাটি ক্যালিফোর্নিয়ার আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সায়েন্টিফিক সেশনে উপস্থাপন করেন।

এ গবেষণার পরিচালনাকারী এবং ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিনের প্রধান গবেষক ডা. ডেনা ডসন বলেন, আমরা যা ধারণা করি ট্যাকোটসুবো তার চেয়েও অধিক কমন। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী ফলো-আপ গবেষণা যাতে ট্যাকোটসুবোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের ওপর নজর দেওয়া হয় এবং এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ট্যাকোটসুবো রোগীদের হার্টে স্থায়ী অসুস্থ-প্রভাব পড়েছে। তিনি যোগ করেন, এসব রোগীরা শারীরিক ব্যায়াম করতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং তারা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমাদের গবেষণা প্রমাণ করে যে, অন্যান্য হার্ট সমস্যার মতো জরুরি ভিত্তিতে ট্যাকোটসুবোরও চিকিৎসা করা প্রয়োজন এবং ট্যাকোটসুবোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে রোগীদের ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে।

পুরুষদের তুলনায় নারীরা ট্যাকোটসুবোতে বেশি আক্রান্ত হয়। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেনশনের সহযোগী মেডিক্যাল পরিচালক অধ্যাপক জেরেমি পিয়ারসন বলেন, ট্যাকোটসুবো হচ্ছে একটি বিধ্বংসী রোগ যা সুস্থ মানুষকে হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, আমরা একসময় ধারণা করতাম যে জীবনহুমকিমূলক এ রোগ স্বল্পস্থায়ী, কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এ রোগ মানুষের বাকি জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি যোগ করেন, আমরা ভাবতাম যে ট্যাকোটসুবো রোগীদের জন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ নেই, কারণ আমরা ভুলভাবে ধারণা করেছিলাম যে রোগীরা সম্পূর্ণরূপে আরোগ্যলাভ করবে। তিনি আরো বলেন, এ নতুন গবেষণা প্রমাণ করে, হার্টের স্বাস্থ্যের ওপর ট্যাকোটসুবোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে এবং এ গবেষণা সাজেস্ট করছে যে হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিকিৎসা আমরা যেভাবে করি, ট্যাকোটসুবো রোগীদেরও সেভাবে চিকিৎসা করা উচিত।

ট্যাকোটসুবো তখনই ঘটে যখন অত্যধিক মানসিক চাপ হার্টকে আঘাত করে এর প্রধান প্রকোষ্ঠসমূহের একটি বা বাম নিলয়ের আকার পরিবর্তন করে। ১৯৯০’র দশকে জাপানে এটি প্রথম শণাক্ত করা হয় এবং ট্যাকোটসুবো শব্দটি অক্টোপাস পটকে বোঝায় যা হার্টের বিকৃত আকৃতির বর্ণনা করে।

বিজ্ঞানীরা এখনও নিখুঁতভাবে বোঝার চেষ্টা করছেন যে, এটি কিভাবে ঘটে এবং কেন কিছু লোক এতে আক্রান্ত হয় ও অন্যরা হয় না।

গতবছর সুইস গবেষকদের একটি বড় প্রকল্পে আবিষ্কার হয় যে, দুঃখের পাশাপাশি সুখের কারণেও ট্যাকোটসুবো হতে পারে।

তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়