ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

প্যানিক অ্যাটাকের ১০ লক্ষণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্যানিক অ্যাটাকের ১০ লক্ষণ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অনেক লোক ‘প্যানিক অ্যাটাক’ টার্মটিকে হালকাভাবে ব্যবহার করেন, সামান্য নার্ভাস হলে কিংবা মাইনর স্ট্রেস বা অল্প মানসিক চাপে পড়লে তারা বলে যে তাদের প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে।

কিন্তু প্যানিক অ্যাটাক তার চেয়েও তীব্র- প্রকৃতপক্ষে প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে হঠাৎ গভীর ভয়ের উদ্রেক হওয়া, যার ফলে শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রতিবেদনে প্যানিক অ্যাটাকের ১০টি লক্ষণ উল্লেখ করা হলো।

১. গভীর ভয়
কোনো ওয়ার্নিং ছাড়াই প্রবল ভয়ের অনুভূতি নিয়ে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। এটি কোনো কিছু নিয়ে নার্ভাস, উদ্বিগ্নতা অথবা স্ট্রেস অনুভব করার চেয়েও বেশি কিছু। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, আপনার ওপরে ভয়ের যে ঢেউ আসে তা ‘তীব্র’ এবং ‘সুস্পষ্ট বা প্রত্যক্ষগোচর কোনো কারণ ছাড়াই তা আসে’, যদিও প্রায়ক্ষেত্রে এটি ফিজিক্যালি ট্র্যাপড বা অ্যাগোরাফোবিক অথবা কোনো স্থানে ফাঁদে পড়া বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার অহেতুক ভয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আপনার বারবার প্যানিক অ্যাটাক হলে আপনি প্যানিক ডিজঅর্ডারের দিকে ধাবিত হবেন।

২. মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো
বোস্টন ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যানজাইটি অ্যান্ড রিলেটেড ডিজঅর্ডারসের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর টড ফারকিওন, ইউ.এস. নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টকে বলেন, তীব্রতা এবং হঠাৎ অনুভূতি উদ্ভূত হওয়ার কারণে এবং সম্ভবত সেই সঙ্গে শারীরিক উপসর্গ আবির্ভাব হওয়ার ফলে প্যানিক অ্যাটাকের সময় উন্মাদ হয়ে যাওয়ার ভয় অনুভব করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ইউ.এস. নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে জনৈক রোগীর বিস্তারিত বিবৃতি ছাপা হয়েছে। এ রোগী বলেন যে, কি ঘটছে তা থেকে মন বা শরীরের সংযোগ বিচ্ছিন্নতা বিভ্রান্তিকর হতে পারে, আমি জানতাম না কি ঘটছিল। তিনি বলেন, ‘আপনার শরীর জানে না কি করতে হবে...আপনার অর্ধেক ব্রেইন যেতে বলবে এবং অবশিষ্ট ব্রেইন যেতে বারণ করবে। আপনি একপ্রকার ডেডলক বা অচল অবস্থায় থাকবেন।’ কিন্তু চিন্তা করবেন না, আপনি প্রকৃতপক্ষে পাগল হয়ে যাচ্ছেন না, আপনার খারাপ মানসিক অনুভূতি বা ভাবনাগুলো থামিয়ে দেওয়া প্রয়োজন হবে।

৩. দ্রুত হৃদস্পন্দন
যখন আপনার প্যানিক অ্যাটাক হবে, শারীরিক হুমকির অধীনে থাকা সত্ত্বেও আপনার শরীর প্রতিক্রিয়া করবে, মিনিটের মধ্যে তা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র অস্বস্তির পর্যায়ে চলে যাবে। নার্ভাস সিগন্যালের বৃহৎ ঢেউ অ্যামিগডালাকে সক্রিয় করে। অ্যামিগডালা হচ্ছে মস্তিষ্কের অনুভূতিমূলক ফাইট অর ফ্লাইট সেন্টার। ফাইট অর ফ্লাইট মানে হল জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করা অথবা এড়িয়ে যাওয়া। অ্যামিগডালা সক্রিয় হলে দ্রুতগতিতে ও আঘাতমূলকভাবে হৃদস্পন্দন হয়, যার ফলে আপনার মনে হবে আপনার হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।

৫. জীবন সংশয়ের ভয়
ভয়ের কারণে আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে আপনি অনুভব করতে পারেন যে আপনি মারা যাচ্ছেন বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু আসলে কি ঘটছে? ফারকিওন ব্যাখ্যা করেন, আসন্ন বিপদ উপলব্ধি করার কারণে আপনার শরীর অ্যাড্রিনালাইন হরমোনে প্লাবিত হচ্ছে। এটি নিজেকে রক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত হচ্ছে, যার ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়। যদি আপনি মনে করতে পারেন যে এটি সাধারণত কর্মক্ষেত্রে আপনার প্রাকৃতিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া, তাহলে তা ভয়ের প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে।

৬. শ্বাসকষ্ট
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, আপনি যখন প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হবেন, তখন ‘শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ এবং ‘যথেষ্ট বায়ু পাচ্ছি না অনুভূতি’ হবে কমন উপসর্গ। এরকম ঘটে যখন উচ্চতর উদ্বেগ আপনাকে হাইপারভেন্টিলেট বা খুব দ্রুতগতিতে শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে ঠেলে দেয়। কিছু মাইন্ডফুল ব্রিদিং টেকনিক বা সচেতন শ্বাসক্রিয়া কৌশল শিখে রাখুন, যা উদ্বিগ্ন অনুভূতি থেকে সৃষ্ট প্যানিক অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে পারে।

৬. অচল হয়ে যাওয়া
আপনি কোনো ভয়ে এত দৃঢ়ভাবে আচ্ছন্ন হতে পারেন যে, যা আপনাকে প্রায় গতিহীন বা অচল বা অসাড় করে দিতে পারে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বর্ণনামতে, প্রচণ্ড ভীতি প্রায় প্যারালাইজ বা অসাড় করে দিতে পারে।

৭. মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম করা
প্যানিক অ্যাটাকের একটি কমন উপসর্গ হচ্ছে- মস্তিষ্ক দুর্বল হওয়া, ঘোরা বা ঝিমঝিম করা এবং নিস্তেজ হয়ে পড়া। এর কারণ হচ্ছে মস্তিষ্ক থেকে রক্ত দ্রুতবেগে আপনার হাত-পায়ের দিকে চলে যাচ্ছে, যাতে আপনি প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে বা পালাতে পারেন। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব যুক্ত হলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্যানিক অ্যাটাকের সময় মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম অনুভূতির সঙ্গে বমি বমি ভাবও হতে পারে।

৮. ঘেমে যাওয়া
ঘেমে যাওয়া হচ্ছে উচ্চতর উদ্বেগের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া। ঘেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি থরথর করে কাঁপতে পারেন অথবা ঝাঁকুনি অনুভব করতে পারেন।

৯. গরম লাগা ও ঠান্ডা লাগা
প্যানিক অ্যাটাকের সময় হঠাৎ করে গরম লাগা অথবা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া আনকমন কোনো কিছু নয়। প্যানিক অ্যাটাক শুধুমাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট থাকলে, আপনি এরকম প্রতিক্রিয়া কয়েক ঘণ্টা অনুভব করতে পারেন।

১০. অত্যধিক মাত্রায় স্ট্রেস
কাদের প্যানিক অ্যাটাক হয় এবং কেন হয় তাতে বৈচিত্র্য থাকলেও প্যানিক অ্যাটাকের একটি সুস্পষ্ট লক্ষণ হচ্ছে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। স্ট্রেস এবং উদ্বেগ একই বিষয় নয়। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনা স্কুল অব মেডিসিনের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর রেইড উইলসন ইউ.এস. নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রায়ক্ষেত্রে প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হচ্ছে স্ট্রেস, যা ছয় থেকে আট মাস ধরে বিদ্যমান আছে।’ তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সময় স্ট্রেসের কারণে ক্ষতি হতে পারে- কোনো কাজ বা চ্যালেঞ্জকে বড় করে দেখা এবং নিজের সামর্থ্য বা ক্ষমতাকে ছোট করে দেখার অনুভূতি জনিত চাপকে স্ট্রেস বলা যায়।’ যদি আপনি প্রচুর পরিমাণ স্ট্রেসে ভুগেন এবং এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর বেশিরভাগের সম্মুখীন হন, তাহলে আপনার প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :

 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়