পাইলস চিকিৎসা : প্রচলিত ধারণা ও সচেতনতা
ডাক্তার মো. নাজমুল হক মাসুম || রাইজিংবিডি.কম
ডাক্তার মো. নাজমুল হক মাসুম : মলদ্বারে যে কোন রোগই হোক না কেন, সাধারণ মানুষ মনে করে পাইলস বা অর্শ বা গেজ। অনেকের ধারণা নেই যে, এর বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসা করালে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। অনেকে আবার মলদ্বারে মরণব্যাধি ক্যান্সার নিয়ে পাইলসের চিকিৎসার জন্য কবিরাজ, হেকিম কিংবা কোন হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তারা অপচিকিৎসার মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন এবং বলছেন পাইলস চিকিৎসা করে ভাল হয় না।
তবে এটা সম্পূর্ণ এক ভ্রান্ত ধারণা। পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করে কোন বিশেষজ্ঞ সার্জন যদি চিকিৎসা করেন তবে এটি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
আমাদের সমাজে অসংখ্য রোগী আছে যারা মলদ্বারে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেক সময় লজ্জাবশত বলেন না কিংবা অপচিকিৎসার শিকার হন, এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কখনও কখনও এমন পর্যায়ে উপস্থিত হন যে তখন আর অপারেশনের বিকল্প কিছু থাকে না। কিন্তু মানুষ যদি সবাই মলদ্বারের রোগ সম্পর্কে সচেতন হতন, সঠিক সময়ে মলদ্বারের চিকিৎসায় পারদর্শী বিশেষজ্ঞ সার্জনের দ্বারস্থ হতেন তবে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে বিনা অপারেশনে এর চিকিৎসা সম্ভব হত।
মলদ্বারের রোগগুলোর যে সমস্ত উপসর্গ দেখা দেয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মলত্যাগের পর জ্বালাপোড়া করা, ব্যথা করা, মলদ্বারে রক্ত পড়া, কখনও ফোঁটা ফোঁটা অথবা ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়া, মলদ্বারের পাশে ছোট ছিদ্র হয়ে পুঁজ পানি পড়া, রক্ত মিশ্রিত আমাশয়, মলত্যাগের পর পূর্ণতা না আসা, কিছু মল থেকে যাওয়া, হটাৎ রাতে মলদ্বারের ব্যথা কিংবা ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া, সহবাসের সময় ব্যথা, সম্পূর্ণ মলদ্বার বের হয়ে আসা কিংবা মলদ্বারের একপাশে মাংস বের হয়ে যাওয়া অথবা পায়খানা করার সময় আঙ্গুরের মত একখণ্ড মাংস বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। যে উপসর্গই থাকুক না কেন, সবাই বলে পাইলস হয়েছে। আসলে এটা সঠিক নয়।
মলদ্বারে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। যেমন এনাল ফিসার, পাইলস, রেকটাল পলিপ, রেকটাল ক্যান্সার, আই বি এস, পাইলোনিডাল-সাইনাস, এনাল আবসেস, রেকটাল প্রলাপস, এনাল ওয়াট, প্রকটালজিয়া-ফোগাস ইত্যাদি। রোগ অনুসারে এগুলোর চিকিৎসার ধরণও বিভিন্ন।
তবে আমি মনে করি যে, এখন সময় এসেছে এ সমস্ত রোগ সম্পর্কে সচেতন করার। মানুষ রোগ সম্পর্কে সচেতন হলে এবং সঠিক সময়ে মলদ্বারের চিকিৎসায় একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের পরামর্শ নিলে এ রোগ যেমন প্রতিরোধ সম্ভব, তেমনি বিনা অপারেশনে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
লেখক : জেনারেল ও কোলোরেকটাল সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি)
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/মুকুল/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন