ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শীতকালে রোগ প্রতিরোধের ৮ উপায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শীতকালে রোগ প্রতিরোধের ৮ উপায়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : শীতকাল হচ্ছে এমন একটি মৌসুম যখন ঠান্ডা, ফ্লু, স্টমাক বাগ এবং অন্যান্য ইনফেকশন ছড়ায়। এ মৌসুমে সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

সংক্রমিত ব্যক্তি বা পৃষ্ঠ স্পর্শের পর আপনার চোখ, নাক অথবা মুখ স্পর্শের মাধ্যমে আপনার মধ্যে ইনফেকশন সৃষ্টকারী জীবাণু চলে আসা খুব সহজ। ঘনঘন হাত ধোয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকৃত প্রধান ইনফেকশন প্রতিরোধমূলক কৌশল। কিন্তু আপনার কিছু অতিরিক্ত কৌশল অবলম্বন করাও প্রয়োজন হবে। এ প্রতিবেদনে শীতকালে সুস্থ থাকার ৮টি উপায় আলোচনা করা হলো।

* সঠিক সাবান ব্যবহার করুন

আপনি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান এড়িয়ে চলতে পারেন যেটাতে ট্রাইক্লোসানের মতো উপাদান আছে, যা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এফডিএ ঘোষণা করেছে যে, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান সাধারণ সাবানের চেয়ে ভালোভাবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে কিনা তার কোনো প্রমাণ নেই এবং এটি অ্যান্টিবায়োটিক-রেজিস্ট্যান্ট সুপারবাগ (এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া) বৃদ্ধি করে ও হরমোনগত নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করে।

আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) হাতের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের পরিমাণ হ্রাস করতে সাধারণ সাবান ও পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।

* হ্যান্ডশেক এড়িয়ে চলুন

ঠান্ডা এবং ফ্লু মৌসুমে একে অপর থেকে জীবাণু বিনিময় এড়াতে হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড কন্টাক্ট বা হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকুন। জীবাণু বিনিময় এড়াতে অনেক পরিবেশে শুভেচ্ছা স্টাইল পরিবর্তন হচ্ছে। ন্যাশভিলেতে অবস্থিত ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের প্রিভেন্টিভ মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাফনার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক পরিবেশে হ্যান্ডশেকের জায়গা দখল করছে ফিস্ট বাম্প (মুষ্টির সঙ্গে মুষ্টির স্পর্শ) এবং এলবো বাম্প (কনুইর সঙ্গে কনুই স্পর্শ)।’

* কাশি ও হাঁচি কভার করুন

যদি আপনি তাদের একজন হন যারা সংক্রামক রোগের জীবাণু ছড়ায়, তাহলে জীবাণু নিজের মধ্যে রাখার একটি উপায় হচ্ছে, আপনার কনুইয়ের বাঁক বরাবর হাঁচি বা কাশি দেওয়া। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ডিভিশনের মেডিক্যাল অফিসার লিসা গ্রোসকফ বলেন, ‘যখন আপনি কাশেন বা হাঁচি দেন, তখন ভালো মাত্রার বেগে বাতাস বের হয় এবং ৩ থেকে ৬ ফুট রেঞ্জের মধ্যে থাকা যেকারো মধ্যে ভাইরাস পার্টিকেল ছড়িয়ে পড়ে।’

নিজের হাতে হাঁচি বা কাশি দিলে জীবাণু বায়ুবাহিত হয় না, কিন্তু যদি আপনি সঙ্গে সঙ্গে হাত ধৌত না করেন, তাহলে যেকোনো জিনিস বা ব্যক্তিকে স্পর্শের মাধ্যমে জীবাণু ছড়াবেন।

* আপনার দূরত্ব বজায় রাখুন

রেসপিরেটরি ভাইরাস যেমন- ঠান্ডা ও ফ্লু বাতাসের মাধ্যমে সহজে ছড়াতে পারে। শাফনার বলেন, ‘যখন অসুস্থ ব্যক্তিরা শ্বাসত্যাগ করে তখন তারা অতি ক্ষুদ্র ফোঁটার তরল নির্গত করে যেখানে ভাইরাস থাকে এবং তাদের ব্রিদিং জোন বা শ্বাসক্রিয়ার স্থানে অন্য কেউ থাকলে সংক্রমিত বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করতে পারে।’

শীতকালে সুস্থ থাকতে শ্বাসত্যাগ, কাশি ও হাঁচি দিতে পারে এমন সম্ভাবনাযুক্ত অসুস্থ ব্যক্তি এবং আপনার মধ্যে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

* জেনে রাখুন যে জীবাণু দীর্ঘসময় বাঁচতে পারে

আপনার হাত ঘনঘন ধোয়ার অন্য একটি কারণ হচ্ছে, সারফেস বা পৃষ্ঠে লেগে থাকা জীবাণু আপনার কল্পনার চেয়েও বেশি সময় বাঁচতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর এক গবেষণায় পাওয়া যায়, সারারাত ডে কেয়ার ফ্যাসিলিটি বন্ধ থাকার পরও ডে কেয়ারের খেলনা পুতুল, বই ও শিশুশয্যার ব্যাকটেরিয়া যা ইয়ার ইনফেকশন ও স্ট্রেপ থ্রোট ইনফেকশন বা স্ট্রেপটোকক্কাল ফ্যারিনজাইটিস সৃষ্টি করে তার টেস্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে।

সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, ফ্লু ভাইরাস শক্ত পৃষ্ঠে (যেমন- দরজার নব বা ফোন) ২ থেকে ৮ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে।

আমেরিকান জার্নাল অব ইনফেকশন কন্ট্রোলে ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে উল্লেখ আছে, ডায়রিয়া ও বমি উদ্রেককারী অত্যধিক সংক্রামক ভাইরাল ইনফেকশন সৃষ্টিকারী নরোভাইরাস (ভমিটিং বাগও বলে) শক্ত ও শুষ্ক সারফেসে সাতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ গবেষণায় আরো আবিষ্কার হয় যে, এমআরএসএ বা স্টেফাইলোকক্কাস ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া কয়েক মাস ধরে জীবিত থাকতে পারে। এমনকি ঠান্ডার জীবাণু যেকোনো শক্ত পৃষ্ঠে দুই ঘণ্টা থেকে সাতদিন এবং চামড়ার ওপর দুই ঘণ্টা বাঁচতে পারে।

* স্পর্শ করা জিনিস পরিষ্কার করুন

যেহেতু এসব ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস পৃষ্ঠের ওপর কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন জীবিত থাকতে পারে, সেহেতু স্পর্শ করা জিনিস পরিষ্কার করা হবে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। বোস্টনে অবস্থিত সিমন্স কলেজের সিমন্স সেন্টার ফর হাইজিন অ্যান্ড হেলথ ইন হোম অ্যান্ড কমিউনিটির সহ-পরিচালক এলিজাবেথ স্কট বলেন, ‘আমি টার্গেটেড হাইজিন নামে একটি উপায় অবলম্বনের পরামর্শ দিই। এর মানে হচ্ছে, যেখানে যে মুহূর্তে ইনফেকশন ছড়ানোর ঝুঁকি থাকবে তখন ক্লিনিং বা পরিষ্করণ এবং ডিসইনফেক্টিং বা ইনফেকশন শোধন চর্চার লক্ষ্য নির্ধারণ করা।’

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো সহকর্মী বা পরিবারের ইনফেকশন আছে। অফিসে শেয়ারকৃত ওয়ার্কস্পেস এবং উপকরণ যেমন- কপি মেশিন যা অফিসের সবাই স্পর্শ করে তা নিয়মিত (অন্ততপক্ষে প্রতিদিন) পরিষ্কার করা ভালো। ঘরে দরজার হাতল, পানির ট্যাপ ও টিভির রিমোটের মতো শক্ত সারফেস পরিষ্কার করুন, যেখানে ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘসময় জীবিত থাকতে পারে।

আপনি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ক্লিনিং প্রোডাক্ট এড়িয়ে যেতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো হাউজহোল্ড ক্লিনার অথবা ডিলিউটেড ব্লিচ সলুশন দিয়ে আপনি এ পরিষ্করণের কাজ করতে পারেন।

* ভ্যাকসিন নিন

যদিও ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে কোনো নিশ্চয়তাযুক্ত সুরক্ষা নেই, তবে বার্ষিক ফ্লু ভ্যাকসিন আপনার সর্বোত্তম প্রতিরোধ হতে পারে। ২০১৬ সালে আমেরিকায় যারা ভ্যাকসিন নেন তাদের মধ্যে ফ্লু হওয়ার ঝুঁকি ৪২ শতাংশ কমে যায়। গ্রোসকফ বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও যদি আপনি অসুস্থ হন, আপনার উপসর্গ হালকা হতে পারে।’

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় ও প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি তৈরি করতে আপনার ইমিউন সিস্টেমের দুই সপ্তাহ সময় লাগে। তাই ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে শীতকালের আগে ভ্যাকসিন নেওয়াটা হবে আদর্শ কাজ।

* জেনে রাখুন কখন ঘরে অবস্থান করতে হবে

নিউ ইয়র্কে অবস্থিত সাউথ নাসাউ কমিউনিটিজ হসপিটালের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের চেয়ারম্যান আরন ই. গ্ল্যাট বলেন, ‘আপনার উপসর্গের তীব্রতার সময় অন্য লোকদের অসুস্থ না করতে আপনার এক বা দুই দিন ঘরে অবস্থান করা প্রয়োজন।’

যখন আপনি রোগ রিকভার করার জন্য ঘরে থাকবেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে যাতে এ রোগ ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের খাবার প্রস্তুতির দায়িত্ব নেবেন না এবং আপনার জীবাণু আপনার মধ্যে রাখতে যতটা সম্ভব একটি কক্ষে নিঃসঙ্গ সময় কাটান।

তথ্যসূত্র : কনজ্যুমার রিপোর্টস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়