ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

সড়ক ও জনপথের দুর্নীতি রোধে দুদকের ২১ দফা সুপারিশ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সড়ক ও জনপথের দুর্নীতি রোধে দুদকের ২১ দফা সুপারিশ

এম এ রহমান মাসুম : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে ২১ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এ সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিম। দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন সই করা চিঠি মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর রোববার পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে সুপারিশের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের সদস্যরা দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতি প্রতিরোধে নিম্নোক্ত ২১ দফা সুপারিশ করেন :

(১) সড়ক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে- খোয়া যা সাধারণত পাথর বা ইট থেকে তৈরি করা হয়। উন্নতমানের খোয়া ছাড়া সড়ক নির্মাণ করা হলে এর স্থায়িত্ব প্রত্যাশা করা যায় না। উন্নতমানের খোয়া তৈরির জন্য প্রয়োজন পাথর, পিকেট বা ঝামা ইট অথবা ১ নং গ্রেডের ইট। সাধারণভাবে ইটকে এর শক্তির ওপর ভিত্তি করে চার ভাগে ভাগ করা হয়  ১. পিকেট বা ঝামা ইট ২. গ্রেড-১ ইট ৩. গ্রেড-২ ইট ও ৪. গ্রেড-০৩ ইট। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধিকাংশ টেন্ডারে স্পেসিফিকেশনে বর্ণিত যথাযথভাবে পেতে গেলে পাথর বা ঝামা ইট অথবা গ্রেড ০১ এর ইট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা থাকে কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের চাপে অথবা প্রকৌশলীদের দায়িত্ব অবহেলা কিংবা পরস্পর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে সড়ক নির্মাণে পাথর, ঝামা অথবা গ্রেড ০১ ইটের খোয়ার পরিবর্তে নিম্নমানের ইট দিয়ে নিম্নমানের খোয়া তৈরি করে সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্যবহৃত ইট বা খোয়ার মান সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে তা প্রত্যয়ন করতে হবে। পরবর্তীকালে ল্যাবরেটরিতে নিরূপিত এসিভি এর কোনো তারতম্য ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে দুর্নীতির মামলা দায়ের করলেই নিম্নমানের ইট বা খোয়া ব্যবহার কমে আসার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপশি প্রতিটি সড়কের ক্ষেত্রে ডিজাইন অনুসারে সড়ক নির্মাণের সময় সড়ক বেডের রেশিও নিরূপণ করা বাধ্যতামূলককরণ প্রয়োজন। এসিভি এর মতো সিবিআর এর ক্ষেত্রেও বিচ্যুতি ঘটলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সড়ক নির্মাণ বাস্তবায়ন কাজে দেশীয় অর্থায়নে যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় সেসব প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে প্রতিদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অথবা সহকারী প্রকৌশলী বা উপসহকারী প্রকৌশলীগণ এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীগণ যে মেজারমেন্ট বুকে স্বাক্ষর করেন তাতে পরিমাণগত কাজের পাশাপাশি এসিভি ও সিবিআর এর মান উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়াও স্পেসিফিকেশনে বর্ণিত গুণগতমান নিশ্চিতকরণের জন্য অন্যান্য টেস্ট সম্পাদন করে টেস্ট রিপোর্ট প্রত্যয়নপূর্বক সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পসমূহেও অনুরূপ তথ্য সংবলিত মেজারমেন্ট ও টেস্ট রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে।

এ ছাড়া সড়ক নির্মাণে গ্রেড-১ ক্যাটাগরি ইট ব্যবহার করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের গ্রেড-২ এবং গ্রেড-৩ মানের ইট ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত ইটের এসিভি সংরক্ষণ করতে হবে।

সড়ক নির্মাণে টেন্ডারের শর্তানুসারে উন্নত বালি ব্যবহার না করে  নিম্নমানের বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সকল কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল বিভাগের অধ্যাপক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্মাণকাজে বিশেষজ্ঞ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সততার সুখ্যাতি রয়েছে এমন প্রকৌশলীদের নিয়ে একাধিক মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ সকল কমিটি কেবল নির্মাণকাজের গুণগতমান এবং পরিমাণের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী কিংবা সরকার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট প্রদান করবেন। এই কমিটির সুনির্দিষ্ট চার্টার অব ডিউটিজ নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া সওজের নিজস্ব মনিটরিং ইউনিট গঠন করা যেতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধির আলোকে মনিটরিং ইউনিট কাজের পরিমাণগত ও গুণগত মানের বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান করবে। মনিটরিং ইউনিটের চূড়ান্ত রিপোর্ট ব্যতিরেকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল প্রদান না করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

এ ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের চাপ থেকে প্রকৌশলীদের সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

(২) প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন : বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণের ফলে দ্রুত তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এ থেকে উত্তরণের জন্য কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।

(৩) সড়ক নির্মাণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিটুমিন। সরকারিভাবে বিটুমিন আমদানির দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি।

প্রাথমিকভাবে বিটুমিনের গুণগতমান নিশ্চিত করার দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানটির। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গুণগত মান ঠিক থাকলেও স্পেসিফিকেশন অনুসারে যে পরিমাণ বিটুমিন ব্যবহার করার কথা তার চেয়ে কম বিটুমিন ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ বা মেরামতে ক্রমাগতভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া, সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মহাসড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। তারপরও যে সকল নির্মাণ কাজে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করার কথা সে ক্ষেত্রেও ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন স্পেসিফিকেশন মোতাবেক শুধু প্রাইম কোট এবং ট্যাক্ট কোট এ ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য সকল বিটুমিনাস কাজে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিটুমিন ব্যবহার করে কাজের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা যায় কিনা সে বিষয়ে গবেষণা করে এবং বিদেশের অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ কারিগরি প্রয়োজন ব্যতীত উন্নয়ন প্রকল্পের বিটুমিনাস কাজে ৬০-৭০ গ্রেড মানের বিটুমিন ব্যবহারের যে নির্দেশনা তা পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট মাঠ প্রকৌশলীগণ ঠিকাদার কর্তৃক ব্যবহারের জন্য নির্মাণ সাইটে মজুদকৃত বিটুমিন পরীক্ষা করে এ মান নিশ্চিত করবেন। এই মান নিশ্চিতের পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণ করতে হবে এবং দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে পুনঃপরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রেড মানের তারতম্য হলে ঠিকাদার, প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদক আইনে মামলা দায়ের করা যেতে পারে। উন্নতমানের বিটুমিন ব্যবহার করলে অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে রাস্তার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমবে বলে ধারণা করা যায়। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত মনিটরিং করা যেতে পারে।

(৪) দেশের অধিকাংশ নির্মাণকারী সংস্থায় জেলা পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীগণ-পিপিআর অনুসারে সকল দরপত্র আহ্বান ও নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে থাকেন। কিন্তু সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অথবা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীদের মাধ্যমে উচ্চ দরের বা বড় মাপের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সাধারণত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অথবা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদমর্যাদার পদসমূহ সুপারভাইজিং ও মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত পদ। এ জাতীয় পদের কর্মকর্তাদের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের সরাসরি দায়িত্বে না রেখে সুপারভাইজিং ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাজ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথ সুগম হতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ফাইনাল মেজারমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

(৫) সড়ক নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বেই রাস্তায় কিছু মাটির কাজ করতে হয় এবং কাজ চলাকালীন সড়কের পাশে মাটি ফেলতে হয়। এই মাটির কাজে অনিয়ম দুর্নীতির আরেকটি উৎস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাটির কাজের প্রাক্কলন করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান মাটিকে কম দেখিয়ে পরবর্তীকালে মাটি ভর্তি দেখিয়ে ভুয়া বিল করা হয়। নির্মাণকাজ শেষ হলে অথবা বর্ষা শুরু হলে এই ফাঁকির বিষয়টি নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল। এ সকল কাজে মন্ত্রণালয় মনিটরিং টুলস যেমন-পরিদর্শন, অডিটিং, রিপোর্টিং ইত্যাদি প্রয়োগ করতে পারে। তা ছাড়া এ সকল ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় দুদকের সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারে। কাজ চলমান অবস্থায় নির্মাণকাজ মনিটরিং করা অত্যন্ত প্রয়োজন। মাটির কাজের প্রি-ওয়ার্ক সেকশন ও পোস্ট ওয়ার্ক সেকশন সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সোশ্যাল ওভারসাইট কমিটি গঠন করে মাটির কাজ তদারক করা যেতে পারে। এ তদারক কাজটি তাৎক্ষণিক করা না গেলে পরে অনিয়ম উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়ে।

(৬) সরকারের বিশেষ নির্দেশ ছাড়া সকল ক্ষেত্রেই ইজিপির মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কার্য সমাধা করতে হবে। ইজিপি প্রক্রিয়ার কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি সিপিটিইউকে যথাযথভাবে মনিটরিং করতে হবে ও প্রতিনিয়ত  সময়োপযোগী করতে হবে।

(৭) প্রকল্প গ্রহণকালীন গৃহীত প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অধিক ব্যয়ে প্রকল্প শেষ করা হয়। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়, যা বন্ধ করা প্রয়োজন।

(৮) প্রকল্পের প্রাক্কলন প্রণয়ন এবং দরপত্রের মূল্যায়নে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

(৯) প্রকল্পের প্রাক্কলন প্রণয়ন ও প্রাক্কলিত কাজের বাস্তবায়ন পৃথক দুটি ইউনিটের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে। যিনি বা যে টিম প্রাক্কলন তৈরি করবেন তিনি বা সে টিম বাস্তবায়নের কাজে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট হতে পারবেন না। এ ছাড়া প্রতিটি প্রাক্কলন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ভিন্ন কোনো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে সওজ কাজের অভ্যন্তরীণ পারফরমেন্স অডিট সিস্টেম চালু এবং প্রকল্পের কার্য সমাপান্তে কাজের গুণগতমান নিশ্চিতের নিমিত্ত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

(১০)  প্রকল্প বাস্তবায়ন/নির্মাণ/সংস্কার/মেরামত কার্যাদি সম্পন্নের পরবর্তী একটি যৌক্তিক সময় পর্যন্ত উক্ত কাজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিজ খরচে বাস্তবায়নকারী/ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর আইনানুগভাবে অর্পণ করা যেতে পারে। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর সকল প্রকার মেরামত কাজ ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

(১১) সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ই-জিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ার সার্বিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পরামর্শক সংস্থার প্রাকযোগ্যতা নির্ধারণ ও পূর্বযোগ্যতা মূল্যায়ন করে ঠিকাদারদের নিবন্ধন ও সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়ন এবং তা ওয়েবসাইটসহ সর্বমহলে প্রচারের ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয়। দরপত্র মূল্যায়নের নির্ণায়কসমূহ যৌক্তিকভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ই-জিপি অনুমোদন অথবা সুপারিশের ক্ষেত্রে যাতে কোনো জালিয়াতি বা দুর্নীতি না হয় সে লক্ষ্যে ক্রয়কারী কার্যালয় প্রধান (হোপ) বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

(১২) প্রকল্পের ক্রয়, নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের নিমিত্তে স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে গণশুনানি ও ‘সামাজিক নিরীক্ষার’ আয়োজন করা যেতে পারে। এ ছাড়া, পিপিআর ও পিপিএ সম্পর্কে ঠিকাদারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

(১৩) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল প্রদানের পূর্বে কাজের পরিমাণগত ও গুণগতমান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মতামত (সামজিক নিরীক্ষা) গ্রহণ করা যেতে পারে। হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোতে এ মর্মে একটি নির্দেশনা প্রেরণ করা প্রয়োজন, যাতে সামাজিক নিরীক্ষা সম্পন্ন না হলে কোনো চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা যাবে না। কোনো বিল সামাজিক নিরীক্ষা ব্যতিরেকে প্রদান করা হলে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন মর্মে সার্কুলার জারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

(১৪) প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের সময় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকল্প পরিদর্শন/তদাররিকরণ নিশ্চিত করতে হবে। সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জোনওয়ারি টিম গঠন করে তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে লাইভ ভিডিও অ্যাপস ব্যবহার করা যেতে পারে।

(১৫) নির্মাণ/মেরামত ও সংস্কার কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যে টিম এস্টিমেট করবেন, তারা বাস্তবায়ন কাজে জড়িত হতে পারবেন না; আবার যারা বাস্তবায়ন কাজে জড়িত তারা চলতি মাপ নিতে পারলেও চূড়ান্ত পরিমাপ আউটসোর্স ফার্ম দিয়ে বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী টিম দিয়ে ফাইনাল মেজারমেন্ট নিবেন। এ ছাড়া কাজের প্রাক্কলিত মূল্য গোপন রাখা প্রয়োজন।

(১৬) ওভারলোডিংয়ের ফলে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মহাসড়কের ‘জীবন সময়’ শেষ হওয়ার আগেই মহাসড়কসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই ওভারলোডিং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজ ওভারলোডিংয়ের দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।

তাই ওভারলডিং নিয়ন্ত্রণ করার পরই নিম্নমানের কাজে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। এক্ষেত্রে ‘মোটরযানের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১২’ এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের মাধ্যমেও মহাসড়কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি সহায়ক হতে পারে।

(১৭) প্রকল্পের গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহারও সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুর্নীতির উৎস। প্রকল্পে গাড়ি ক্রয়ের যৌক্তিকতা নিরূপণ করেই গাড়ি ক্রয় করা উচিত।

(১৮) নির্মাণকাজে গাফিলতি কিংবা এজেন্ট/ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটালে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে অন্যরা একই ধরনের অনিয়ম করতে ভয় পায়।

(১৯) টোল আদায়ের ক্ষেত্রে আধুনিক ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যাতে দূরে বসে টোল আদায় কার্যক্রম কম্পিউটার মনিটরে পর্যবেক্ষণ করা যায়। প্রতিটি টোল আদায় ব্রিজকে শতভাগ ডিজিটালাইজড নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা গেলে এ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

(২০) যে সকল প্রকৌশলী কাজের পরিমাণগত ও গুণগতমান নিশ্চিত করে বুঝে নিতে পারেন না বা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদেরকে নির্মাণকাজের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কাজে পদায়ন না করে যোগ্য এবং সাহসী কর্মকর্তাদের পদায়ন করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রকৌশলীদের পদায়ন এবং বদলির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

(২১) নির্ধারিত টাইম ফ্রেমের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা এবং যৌক্তিক কারণ ব্যতিরেকে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি না করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিবিধ : সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সংবাদপত্রে দুর্ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ভটভটি, ফিটনেসবিহীন পরিবহন অধিকাংশ সড়ক দখল করে ফেলেছে। সড়ক রক্ষা এবং জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে এ সকল যানবাহনের ব্যবহার দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মার্চ ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়