ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অটিজমের যে ৮ লক্ষণ জানা উচিত

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৮ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অটিজমের যে ৮ লক্ষণ জানা উচিত

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে (এএসডি)ব্যাধি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একপ্রকার ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার যা বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত উপসর্গগুলো কারো মধ্যে দেখা দিলে বুঝতে হবে যে তার অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার রয়েছে।

* মৌখিক যোগাযোগে সমস্যা
যদি আপনার বাচ্চার মৌখিক সমস্যা লক্ষ্য করেন, তাহলে কোনো প্রফেশনাল বা অটিজম বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যায়ন করানো উচিত। অটিজমের সম্ভাব্য মৌখিক উপসর্গ হচ্ছে: ১২ মাসের মধ্যে কোনো অস্ফুটবাক্য বা আধ-আধ বুলি না বলা অথবা কোনো কিছু নির্দেশ করার মতো অঙ্গভঙ্গি না করা, ১৬ মাসের মধ্যে কোনো শব্দ না বলা অথবা ২৪ মাসের মধ্যে কোনো অর্থবোধক দুই শব্দের শব্দগুচ্ছ না বলা।

* সামাজিক পারস্পরিকতায় সমস্যা
অটিজম স্পিকসের মেডিক্যাল রিসার্চের প্রধান এবং মেডিক্যাল ডাক্তার পল ওয়াং বলেন, ‘সুস্থ বাচ্চারা হাসি, আলিঙ্গন অথবা সজ্ঞান দৃষ্টিপাত শেয়ার করে অন্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রকাশ করে।’ যদি আপনি ছয় মাসের মধ্যে আপনার বাচ্চার মুখে বড় হাসি অথবা অন্যান্য আনন্দদায়ক অনুভূতি না দেখেন, তাহলে এটি অটিজমের একটি উপসর্গ হতে পারে। অনুরূপভাবে, যদি আপনার বাচ্চা নয় মাসের মধ্যে শব্দ, হাসি অথবা অন্যান্য মৌখিক অভিব্যক্তি অনুকরণ না করে, তাহলে কোনো প্রফেশনাল বা অটিজম বিশেষজ্ঞকে দেখান। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত লোকদের পক্ষে চোখের যোগাযোগ রক্ষা করাও দুরূহ, যা অন্য লোকদের মৌখিক অভিব্যক্তি পড়া বা বোঝায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অটিজম ফ্রেন্ডলি স্পেসেসের অটিজম বিশেষজ্ঞ ডানা ওয়াটেনবার্গ খানি বলেন, ‘অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু অন্যদের প্রতি আগ্রহ দেখায় না বললেই চলে, বরং তারা কোনো বস্তু বা অবজেক্টের প্রতি অধিক আগ্রহ প্রকাশ করে।’ উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে কোনো বলের ছবি দেখান অথবা কোনো বল দেন, সে আপনার সঙ্গে আই কনটাক্ট না করে বলের ছবি বা বলের প্রতি অধিক আগ্রহ দেখাবে। সে একাকী খেলতে চাইবে, কারণ তার পক্ষে অন্যদের সঙ্গে মেশা কঠিন।

* সামাজিক দক্ষতা হ্রাস
গবেষণা অনুসারে, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের কমন একটি উপসর্গ হচ্ছে, কথাবার্তা কম বলা  সামাজিক দক্ষতা হ্রাস। ডা. ওয়াং বলেন, ‘অসুস্থ বা মর্মাহত কোনো শিশু কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ বা কথাবার্তা কমিয়ে দিতে পারে, কিন্তু তা কয়েকদিনের বেশি হলে অটিজম বিশেষজ্ঞকে দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। অটিজম গবেষক জেনিফার রিকলার স্লেটডটকমে লিখেন, ‘অটিজমে আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশ শিশু কয়েক রকম অদক্ষতার সম্মুখীন হয়, এ ধরনের বেশিরভাগ শিশুর শুরু থেকেই সাধারণ অগ্রগতি হয় না।’ তিনি যোগ করেন, ‘তাদের অগ্রগতি বিলম্ব হয় এবং তারা তাদের অর্জিত কিছু দক্ষতা হারায়।’

* পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ
অটিজম স্পিকস অনুসারে, ‘হাত-ঝাপটানো, এপাশ-ওপাশ করা, লাফানো, পাক খাওয়া, বস্তু বা অবজেক্টকে সাজানো ও পুনর্বিন্যস্ত করা এবং কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বারবার বলা- এসব পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ হচ্ছে, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।’

* তীব্র আসক্তি
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুরা উদ্দেশ্যহীনভাবে কোনো অর্ডারে বা কোনোকিছুতে তীব্র আসক্ত হতে পারে। তারা খেলার সময় খেলনা নিয়ে খেলার পরিবর্তে খেলনা সাজানোতে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে পারে এবং রঙ বা আকারের ভিত্তিতে খেলনার শ্রেণীবিভাজন করতে পারে। খানি উল্লেখ করেন, ‘অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু ট্রেন খেলার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারা কোনো কাল্পনিক রেললাইন দিয়ে অনুমেয় শিডিউলে ছুটতে থাকে।’ রুটিন ব্যতয় হলে তারা দুর্বার ক্রোধে ফেটে পড়তে পারে। ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টারের নিউরোডেভেলপমেন্টাল অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল পিডিয়াট্রিকসের অধ্যাপক ট্রিস্ট্রাম এইচ. স্মিথ এটিটিএন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজকর্মের সাধারণ পথ থেকে বিচ্যুত হলে সামান্য অস্বস্তি বোধ করি, কিন্তু এর জন্য তারা খুব ভেঙে পড়লে বা ক্রোধে উন্মত্ত হলে তা অটিজমের একটি উপসর্গ হতে পারে।’ শিডিউলের পরিবর্তনে তাদের আচরণ অস্বাভাবিক রকমের ক্রোধ প্রকাশ পেতে পারে। শিডিউল পরিবর্তন জনিত কারণে উদ্বিগ্ন হলে তারা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করতে পারে, যেমন- এদিক-ওদিক পায়চারি করা অথবা নিজেদের হাত কচলানো।



* কোনোকিছুতে অতিরিক্ত কৌতুহল

অটিজম স্পিকস অনুসারে, কোনো অস্বাভাবিক বিষয়ে তীব্র কৌতুহল এবং গভীর জ্ঞানও অটিজমের উপসর্গ হতে পারে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের ফ্যান, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অথবা টয়লেটের প্রতি অবসেশন থাকতে পারে এবং জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান থাকতে পারে। অটিজমে আক্রান্ত লোকদের সংখ্যা, প্রতীক, তারিখ অথবা বিজ্ঞান বিষয়ে অবসেশন বিকশিত হতে পারে।

* কোনো কথাকে আক্ষরিক অর্থে বুঝা
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে ভোগা লোকেরা কোনো বিষয় বা শব্দগুচ্ছকে আক্ষরিক অর্থে বুঝতে পারে, যেমন- ‘আমাকে একটা পেপার ক্লিপ ছুঁড়ে মার’ বললে তারা আপনার মাথা বরাবর পেপার ক্লিপ ছুঁড়ে মারতে পারে, অথবা ‘এখন বসো’ বললে তারা কোথায় বসবে তা জিজ্ঞেস করতে পারে।

* সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য সমস্যা
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত লোকদের এ ব্যাধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য সমস্যা থাকতে পারে। অটিজম স্পিকস অনুসারে, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের সঙ্গে পাকস্থলী ও অন্ত্রের রোগ, মৃগীরোগ, ঘুমের ব্যাঘাত, শারীরিক অনুভূতির সমস্যা এবং খাবার নয় এমন জিনিস খাওয়ার প্রবণতা জড়িত থাকতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়