ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যাত্রীর চাপ নেই, তবুও ভাড়া বেশি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ১৫ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যাত্রীর চাপ নেই, তবুও ভাড়া বেশি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : সকালে প্রচণ্ড চাপ গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে যাত্রী চাপ, তবুও কমেনি ভাড়ার তেজ। বরং গন্তব্য ভেদে তিন থেকে চারগুণ ভাড়া হাকাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

একশ টাকার টিকিট ৪০০, ২০০ টাকার টিকিট ৬ থেকে ৭০০, ৪০০ টাকার টিকিট হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। রাজধানীর গাবতলীর এই চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আশায় সেখানে জড়ো হওয়া যাত্রীরা।   

ঈদে ভাড়া একটু বেশি দিয়ে হলেও নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে আপত্তি নেই যাত্রীদের। বছরের এই সময়টাতে এ রকম হবে, তা একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন তারা। তবে স্বাভাবিক ভাড়ার চারগুণ ভাড়া নেওয়াকে তারা ‘ডাকাতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন মোফাজ্জেল হোসেন। বৃহস্পতিবার শত চেষ্টা করেও অফিস থেকে বের হতে পারেননি। চিন্তা করেছিলেন শুক্রবার সকালে পরিবারের জন্য কিছু কিনে ১২ টার দিকে রওনা দেবেন গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে। কিন্তু গাবতলীতে এসে তার চোখ তো ছানাবড়া। ১০০ টাকার টিকিটের দাম ৪০০ টাকা। অনেকে এই ভাড়ায়ও উঠছেন। কিন্তু মোফাজ্জেল যাবেন না। এর শেষ দেখতে চান তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদকের কাছে তিনি বলেন, ‘এতো এতো প্রশাসন। এতো নিরাপত্তা। আর এইগুলো দেখার কি কেউ নাই। এরা ডাকাতি করবে আর আমরা সহ্য করে যাব?’

একই অভিযোগ বরিশালের উদ্দেশ্যে ঢাকার গাবতলীতে আসা সায়েমের। তিনি জানান, কাজ থাকায় শুক্রবার যাচ্ছি। ভাবলাম আজ একটু যাত্রী চাপ কম হবে। হলোও তাই। কিন্তু ভাড়া যে আজো এতো বেশি চাইবে সেটা আশা করি নাই।’

 



গাবতলী সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর-রামপুরা-আবদুল্লাহপুর যেসব লোকাল গাড়ি চলাচল করে সেগুলো মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়ার যাত্রী নিচ্ছে। প্রশাসনের সামনেই হাকাচ্ছেন ভাড়া। একে তো রাজধানীর পরিবহন অন্যদিকে ভাড়াও বেশি নিচ্ছে এসব পরিবহন। জানতে চাইলে জাবালে নূর পরিবহনের শ্রমিক জামাল বলেন, ‘ভাই বছরের এই সময়ে সবাই এই রহম চালায়। এই একটু ঈদের বখশিস টকশিস হয়, আর কী। আমরা তো একা না দেহেন আরো বেবাকই (অনেকে) চালায়।’

ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, লোকাল বাস হাইওয়েতে চালানোর কারণে তাদের অনেককে খুশি করতে হয়। সেইজন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ‘একটু বেশি’ ভাড়া নেন তারা।

ঈদে আপনজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এদিন সকালে বেশ চাপ গেছে গাবতলীতে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে শুরু করেছে। বিশেষ প্রয়োজনে বা ছুটির অভাবে যারা যেতে পারেনি তারা আজ বাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছেন। পরিবহন কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দূরপাল্লার যেসব পরিবহন আছে, সেগুলোর টিকিট তো আগেই নিয়ে নিয়েছেন যাত্রীরা। এখন তারা বাস আসার অপেক্ষা করছেন। যেসব পরিবহনের বাস আসছে সঙ্গে সঙ্গে তা আবার গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে যারা টিকিক না কেটে গাবতলীতে এসেছেন তারা বিভিন্ন ধরনের লোকাল বা আধা লোকাল পরিবহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাদের অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে একটু আধটু ভিড় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন পরিবহন কাউন্টারগুলো।   

শুক্রবার সকালে গাবতলীতে প্রচণ্ড চাপ গেছে বলে জানিয়েছেন সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার মঈন উদ্দিন। তিনি জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী চাপ কমেছে।

এসপি গোন্ডেন পরিবহনের সহকর্মী শ্রমিক সালাউদ্দিন জানালেন, সকালে যাত্রীদের চাপে টিকিট দিতে হিমশিম খেয়েছেন। এখন হাকডাক মেরেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

 



‘আসলে কালই (বৃহস্পতিবার) সব যাত্রী দেশের বাড়ি চলে গেছে। কারণ এবার যে রোজা ২৯টা হবে তা একপ্রকবার নিশ্চিত। এজন্য এবার ২৯ রোজায় কোনো ভিড় নাই। একান্তই যারা যেতে পারেনি তারা যাচ্ছেন’, বলেন তিনি।

সালাউদ্দিনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চিত্রা পরিবহনের ম্যানেজার রাকিব জানান, যাত্রীর ভিড় নাই। তবে রাস্তায় মোটামুটি যানজট আছে। নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত তিন চার ঘণ্টা পর গাড়ি গাবতলীতে পৌঁছাচ্ছে। তারপর সেগুলো যাত্রী নিয়ে আবার গন্তব্যে রওনা দিচ্ছে।

পরিবার পরিজন নিয়ে খুলনা যাবেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিরাজ মাহবুব। গাড়ি ১০ টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ১টা পর্য়ন্ত গাড়ির দেখা নাই। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিন ঘণ্টার মতো বসে আছি বাসের দেখা নাই। অথচ আজ কিন্তু এতো ভিড় নেই!

পড়ুন :
        


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৮/রেজা/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়