ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্যানসার এড়াতে যে ১৩ খাবার খাবেন না

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৩০ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যানসার এড়াতে যে ১৩ খাবার খাবেন না

এস এম গল্প ইকবাল : আপনার ডায়েট শুধুমাত্র আপনার শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এর কারণে আপনার বিভিন্ন রোগও হতে পারে- তেমন একটি রোগ হচ্ছে ক্যানসার। কিছু খাবার নিয়মিত ভোজন আপনার ক্যানসার বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার
আমরা জানি যে অত্যধিক চিনি, সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও রাসায়নিক উপাদানসমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবার হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো শারীরিক দশার কারণ হতে পারে। কিন্তু ক্যানসার? ফ্রেঞ্চ ও ব্রাজিলিয়ান গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা অনুসারে, অত্যধিক উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার ভোজনে সবধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ১১ শতাংশ। কোন খাবারগুলো অত্যধিক প্রক্রিয়াজাত খাবার হিসেবে বিবেচিত হবে? মাস-প্রডিউসড ব্রেড, বেকড ফুড, সোডা, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও স্যূপ, সল্টি ও সুইট স্ন্যাকস এবং চিকেন নাগেটের মতো খাবারগুলো এ তালিকায় পড়ে। পাস্তা, ক্যানড ভেজিটেবল এবং ফ্রেশলি বেকড ব্রেডের মতো কম-প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোর সঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

* মচমচে আলু
গাঢ় করে ভাজা মচমচে আলু সম্ভবত পারফেক্ট খাবার নয়, এটি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সির (এফএসএ) একটি গবেষণা অনুসারে, এজন্য দোষী হচ্ছে অ্যাক্রিলামাইড, উচ্চ তাপমাত্রায় শ্বেতসারবহুল (স্টার্চ) খাবার রান্না করলে এটি উৎপন্ন হয়। এমনকি উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নাকৃত বাদামী রঙের আলু ভাজাও ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং এটি সম্ভবত নার্ভাস ও রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পোড়া বা ব্ল্যাকেনড স্টার্চে সর্বোচ্চ পরিমাণে টক্সিন থাকে এবং ডার্কলি টোস্টেড ব্রেডও একটি সমস্যা। অ্যাক্রিলামাইড উৎপাদন ও ভোজন সীমিত করতে এফএসএ স্টার্চকে গাঢ় বাদামী করে ভাজার পরিবর্তে হালকা-সোনালী রঙের হওয়া পর্যন্ত রান্না করার পরামর্শ দিচ্ছে।

* অ্যালকোহল
দিনে কেবলমাত্র একটি অ্যালকোহলিক ড্রিংক আপনার স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৫ শতাংশ, গলার ক্যানসারের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ এবং খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে। আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি (এএসসিও) অনুসারে, আপনি যত বেশি অ্যালকোহলিক ড্রিংক করবেন, আপনার ক্যানসার বিকশিত হওয়ার ঝুঁকির হার তত বেশি বেড়ে যাবে। যারা দিনে চার ড্রিংকের বেশি পান করে তাদের বিভিন্ন ধরনের গলার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। এ সংস্থা আরো উল্লেখ করে যে, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫ শতাংশ নতুন ক্যানসার এবং ক্যানসারে মৃত্যুর ৬ শতাংশের সঙ্গে অ্যালকোহল সেবনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকতে পারে।

* বেকন
হ্যাঁ, বেকন সুস্বাদু, কিন্তু এটি অত্যধিক ভোজন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন- হট ডগস, সসেজ, হ্যাম ও ডেলি মিটের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। ৮০০ বৈজ্ঞানিক গবেষণার রিভিউ শেষে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন সল্টেড, কিউরড, ফারমেন্টেড বা স্মোকড মাংসকে ক্যানসারের ঝুঁকি হিসেবে শ্রেনীভুক্ত করেছে। ৫০ গ্রাম অথবা সমপরিমাণে চার স্ট্রিপ বেকন বা একটি হট ডগ প্রতিদিন কোনো ব্যক্তির কোলরেক্টাল ক্যানসার বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি করে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ এবং ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিসার্চ ফান্ডের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, বেকনের সঙ্গে নিম্ন পাকস্থলীতে ক্যানসার হওয়ার সমপরিমাণ ঝুঁকির সংযোগ রয়েছে। যদি আপনি প্রক্রিয়াজাত মাংসের খাবার খেতেই চান, তাহলে মাঝেমাঝে খেতে পারেন, তবে নিশ্চিত হোন যে মাঝেমাঝেই খাচ্ছেন।

* পোড়া মাংস
বারবিকিউ আপনার প্রিয় হতে পারে, কিন্তু গ্রিলড মিট প্রকৃতপক্ষে আপনার ডিএনএ ড্যামেজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট অনুসারে, কোনো ওপেন ফ্লেইম বা প্যান-ফ্রাইংয়ের ওপর উচ্চ তাপমাত্রায় মাংস রান্না করলে দুই ধরনের কেমিক্যাল (যথা- হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস ও পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস) সৃষ্টি হয়, যা আপনার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কেবলমাত্র রেড মিট নয়, এ প্রক্রিয়ায় রান্নাকৃত মুরগির মাংসও সমান ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকি কত বড়? একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, ঘনঘন পোড়া মাংস ভোজন আপনার অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার বিকশিত হওয়ার ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে, অন্য একটি গবেষণায় আবিষ্কার হয় যে, এটি পোস্টমেনোপজাল নারীদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ করে।

* লাল মাংস
আপনি যেমনভাবেই রেড মিট বা লাল মাংস রান্না করেন না কেন, এটি ভোজন আপনার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। লাল মাংস ভোজনের সঙ্গে অগ্ন্যাশয়, কোলরেক্টাল ও পাকস্থলীর ক্যানসারের সংযোগ পাওয়া গেছে এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন একে ক্যানসারের সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইউনিভার্সিটি অব লিডসের গবেষকরা ১৭ বছর ধরে ৩২ হাজার নারীর ওপর গবেষণা চালিয়ে পেয়েছেন যে, যারা নিয়মিত লাল মাংস খেয়েছিল তাদের যারা লাল-মাংস-মুক্ত ডায়েট অনুসরণ করেছেন তাদের তুলনায় উচ্চ হারে ডিস্টাল কোলন ক্যানসার (যে স্থানে মল জমা হয়) ছিল। এ গবেষণায় এর কারণ অন্বেষণ করা হয়নি। অন্য গবেষকরা বেশি করে মাংস খাওয়া পুরুষ ও নারীদের মল পর্যবেক্ষণ করে উচ্চ মাত্রায় এন-নাইট্রোসো কম্পাউন্ডের সন্ধান পেয়েছেন, যা সম্ভাব্য ক্যানসার-সৃষ্টিকারক কেমিক্যাল।

পড়ুন : ক্যানসার এড়াতে যে ১৩ খাবার খাবেন না (শেষ পর্ব)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুন ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়