উইডোমেকার: সবচেয়ে মারাত্মক হার্ট অ্যাটাক
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে, উইডোমেকার। এটি সুস্থ মানুষদের কোনো আগাম সতর্কতা ছাড়াই আক্রান্ত করে থাকে।
যেকোনো হার্ট অ্যাটাক মারাত্মক হতে পারে, এই দৃষ্টিকোণ অনুসারে উইডোমেকার ইউনিক নয়, যা এটিকে উল্লেখযোগ্য ও ভীতিকর করে তোলে তা হচ্ছে- এটি লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারির (এলএডি) কোথায় হচ্ছে।
এলএডি হার্টের সম্পূর্ণ সম্মুখ অংশে (অন্যান্য করোনারি আর্টারিজ সাপ্লাইয়ের তুলনায় বৃহত্তর জায়গা) রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। এলএডিতে ক্লগ বা প্রতিবন্ধকতা হার্টের রক্ত প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস করে। অন্য যেকোনো আর্টারির কোনো ব্লকেজ এতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না।
যুক্তরাষ্ট্রের স্যান অ্যান্টনিওতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টারের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক স্টিভেন বেইলি বলেন, ‘এটি একটি বৃহত্তর হার্ট অ্যাটাক, যেখানে জটিলতার ঝুঁকি উচ্চ।’ অনিয়মিত হার্টবিট, হার্ট ফেইলিউর এবং হঠাৎ মৃত্যু জটিলতার অন্তর্ভুক্ত। এই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্য থেকে বাঁচতে এটি থামানোর জন্য ভালো সুযোগ ও চিকিৎসা রয়েছে।
ডা. বেইলি বলেন, ‘প্রাণঘাতীর পাশাপাশি উইডোমেকার নীরবও বটে।’ যেসব লোক হঠাৎ করোনারি হৃদরোগে মারা যায়, তাদের অর্ধেকের পূর্বলক্ষণ দেখা যায় না। অনেক সুস্থ ও ফিট লোককে এই হার্ট অ্যাটাক আক্রমণ করে।
৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের পুরুষদের কিছু হৃদরোগ সংক্রান্ত মৃত্যু নারীদের তুলনায় চারগুণ বেশি। গবেষকরা ধারণা করছেন যে, ইস্ট্রোজেন হরমোন নারীদের কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে, যা মেনোপজের পর হ্রাস পায়।
সান্ত্বনা একটাই : বর্তমানে একটি ক্লগড আর্টারি সময়মতো চিকিৎসা করে দ্রুত পরিষ্কার করা যায়। চিকিৎসা হিসেবে এক্ষেত্রে অ্যানজিওপ্লাস্টি করতে পারেন- একটি সরু টিউব (ক্যাথেটার) ব্লকড করোনারি আর্টারিতে প্রবেশ করানো হয় এবং একটি ছোট বেলুন ফুলিয়ে এটিকে প্রসারিত করা হয়। অ্যানজিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া অধিকাংশ লোকের রক্তনালী উন্মুক্ত রাখতে স্টেন্ট বা রিং বসানো হয়।
আপনি বাঁচবেন কিনা তা নির্ভর করছে উইডোমেকারের তীব্রতা ও জটিলতার ওপর এবং সেই সঙ্গে ভাগ্যও আপনার অনুকূলে থাকতে হবে। ডা. বেইলি বলেন, ‘যদি আপনি দুই ঘণ্টার মধ্যে এটি লক্ষ্য করেন, তাহলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৬ শতাংশ (আপনার ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট কি করছেন তার ওপর নির্ভর করবে)।’
উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাক জনিত মৃত্যু প্রতিরোধ করার চাবিকাঠি হচ্ছে, এখনই আপনার ঝুঁকি মূল্যায়ন করুন এবং প্রয়োজনে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ নিন।
উইডোমেকারসহ অন্যান্য হার্ট অ্যাটাক সাধারণত লাইফস্টাইল ও জেনেটিক কারণের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি প্লেক আপনার আর্টারিতে ক্লগ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে। ধূমপান, স্থূলতা, প্রচুর পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ব্যায়াম না করা, উচ্চরক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বয়স বেড়ে যাওয়া, হৃদরোগের ইতিহাস প্রভৃতি কারণে এই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
অন্যান্য হার্ট অ্যাটাকের মতো উইডোমেকারের উপসর্গও একই, যেমন- বুকে ব্যথা, বুকে চাপ কিংবা ভার অনুভব, এক বা উভয় বাহুতে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, চোয়ালে ব্যথা বা পাকস্থলীতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমিবমি ভাব, ঠান্ডা ঘাম, চোয়ালের পেছনে ব্যথা, মাথাঘোরা ইত্যাদি। এসব উপসর্গ প্রকাশ পেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, কারণ দ্রুত চিকিৎসা আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।
লাইফস্টাইলে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবর্তন এনে উইডোমেকার প্রতিরোধ করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। শরীর তথা হার্টের জন্য ক্ষতিকর এমন অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিশেষ করে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট ভোজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উইডোমেকার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চিকিৎসক দ্বারা নিয়মিত চেকআপ করা।
তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ
আগামীকাল পড়ুন :
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন